উৎসবে অংশ নিয়েছেন দূর-দূরান্তের অনেক শুভ্যানুধ্যায়ী।
Published : 24 Jan 2025, 09:51 PM
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙায় প্রত্যন্ত জনপদে বিন্দু বিদ্যানিকেতন হল পিঠা ও সাংস্কৃতিক উৎসব।
শুক্রবার সকাল থেকে দিনব্যাপী মাটিরাঙা সদর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে ওয়াচু গ্রামের বিন্দু বিদ্যানিকেতনে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আয়োজন করা হয় উৎসবের।
বিদ্যালয়ের মারমা, ত্রিপুরা ও চাকমা শিক্ষার্থী ও গ্রামের নারীরা বাঁশ পিঠা, ছেছমা, সাইন্যা, কলাপাতা পিঠাসহ অন্তত ১০ রকমের পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী পিঠা তৈরি করেছেন উৎসব উপলক্ষে। আয়োজন করা হয়েছে সাংস্কৃতিক উৎসবের।
শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করে নৃত্য, গান। অংশ নেয় ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলায়। পিঠা উৎসবে অংশ নিয়ে খুশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ক্রাইঞো মারমাসহ আরো কয়েকজন বলেন, তাদের এখানে প্রতিবছরই পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। সকাল থেকে বিভিন্ন ধরনের পিঠা বানানো হয়েছে। তারা নাচ-গান ও খেলাধুলায় অংশ নিয়ে খুব আনন্দে উৎসব উদযাপন করেছে।
উৎসবে অংশ নিয়েছেন দূর-দূরান্তের অনেক শুভ্যানুধ্যায়ীও।
উৎসবে অংশ নেওয়া শিক্ষক তপু ত্রিপুরা বলেন, “এখানে ঐতিহ্যবাহী পিঠা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করেন, যা আমাদের মুগ্ধ করেছে।”
উৎসবে আসেন চিকিৎসক ও সংগঠক সুশান্ত বড়ুয়া। সুশান্ত বিন্দু বিদ্যানিকেতন পরিচালনা কমিটির সদস্যও।
তিনি বলেন, “বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জাহেদ আহমেদ টুটুল ২০২০ সালে পিঠা উৎসবে সূচনা করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও আয়োজন করা হয়েছে। পিঠা উৎসবের মাধ্যমে আমরা যে মিলন মেলা করি, তার মাধ্যমে এখানকার মানুষের সঙ্গে আমাদের একটা মেলবন্ধন তৈরি হয়। এই মেলবন্ধনের মাধ্যমে একটি সাংস্কৃতিক বিনিময় হয়।”
উৎসবে অংশ নেওয়া লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, “এখন যে একটা অন্তর্ভূক্তিমূলক দেশ গড়ার চেষ্টা সবাই মিলে করছে, এই বিন্দু বিদ্যানিকেতনে তার একটা বাস্তবায়ন দেখলাম। পাহাড়ি সমাজে শিক্ষা বিস্তারের কাজে যুক্ত হয়েছেন একদল বাঙালি। পুরো অনুষ্ঠানের অফিসিয়ালি ল্যাংগুয়েজ বলতে পারি মারমা, চাকমা, ত্রিপুরার পাশাপাশি বাংলা ভাষা।
“এখানে বলা হচ্ছে, পিঠা উৎসব; কিন্তু এখানে যে সাংস্কৃতিক উৎসব হচ্ছে সেখানে চারটি ভাষার স্ফূরণ হয়েছে। এখানে ইনক্লুসিভ শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে।”
গত চার বছর ধরে এমন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান, বিন্দু বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক রাজীব চক্রবর্তী।
তিনি বলেন, “মারমা, ত্রিপুরা, চাকমা জনগোষ্ঠীর ৭৫ শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদানের পাশাপাশি এখানে তাদের মাতৃভাষাও সপ্তাহে একদিন পাঠদান করা হয়। এখানে যে উৎসব হচ্ছে তার সবকিছুই এখানকার শিক্ষার্থীরা প্রস্তুত করেছে। আগামীতেও এমন উৎসবের আয়োজন করা হবে।”
পিঠা উৎসবে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আতিকুর রহমান, নারী নেত্রী শেফালিকা ত্রিপুরা, সাবেক অধ্যক্ষ প্রশান্ত ত্রিপুরা, বিদ্যালয়ের পৃষ্ঠপোষক প্রতিভা ত্রিপুরা, ধ্রুবজ্যোতি হোড়, সাইফুজ্জামান সাকন, জান্নাতুল পপি।