মঙ্গলবার যশোর টাউন হল ময়দানে জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
Published : 18 Feb 2025, 09:46 PM
ক্ষমতায় থাকতে চাইলে সরকার থেকে ইস্তফা দিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের মুখোমুখি হওয়ার জন্য উপদেষ্টাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, “আমরা আপনাদের সঙ্গে বিরোধ করতে চাই না, ঝগড়া করতে চাই না। দয়া করে তাড়াতাড়ি এই সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচন দিন। আর তার আগে কোনো কলা-কৌশল করবেন না। পরিষ্কার করে বলতে চাই, এ দেশের মানুষ আগে সংসদ নির্বাচন চায়। তারপর স্থানীয় নির্বাচন।
“অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে বলতে চাই, উপদেষ্টাদের বলতে চাই- আপনাদের যদি কোনো খায়েশ থাকে, সরকারে থাকতে চান, ক্ষমতায় থাকতে চান, দয়া করে পদত্যাগ করে যে দল করতেছেন দল করুন, নির্বাচন করুন, জনগণের সামনে আসুন।”
মির্জা ফখরুল ফের বলেন, “ক্ষমতায় থাকতে চান, ইস্তফা দেন, নির্বাচন করেন। নতুন দল করবেন আমরা খুব খুশি। কিন্তু ক্ষমতায় বসে করা যাবে না।”
মঙ্গলবার বিকালে যশোর টাউন হল ময়দানে জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
এ সময় বিএনপি মহাসচিব স্থানীয় সরকারের নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, “আবার দেখছি কোনো কোনো দল বলতে শুরু করেছে, আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন। আবার বলছে, এখন নির্বাচনের পরিবেশ নেই।”
বিএনপি নেতা প্রশ্ন তুলেন, “কখন পরিবেশ আসবে? যখন বাংলাদেশের মানুষ অস্থির হয়ে যাবে? প্রতিদিন রাস্তা অবরোধ হচ্ছে। ছেলেরা আসে, ভার্সিটি থেকে পাস করে বেরিয়েছে তারা আসে, যে যার দাবি-দাওয়া নিয়ে আসে। কিন্তু আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি, যদি নির্বাচনের মাধ্যমে কোনো সরকার আসে তখন তার সমস্যার সমাধানের সুযোগ আসবে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা খুব বেশি কিছু ছিল না। আমরা একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে পেতে চাই। ভোটের অধিকারটা ফিরে পেতে চাই। কারণ, আমরা একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বাস করতে চাই।
“পরিষ্কার করে বলছি, নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার করা দরকার, যেখানে যেখানে পরিবর্তন দরকার পরিবর্তন আনুন, আমরা সংস্কারের বিরুদ্ধে নই। নির্বাচনের কথা বলে ওয়ান-ইলেভেনে একটা ঘটনা ঘটেছিল।”
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, যত দ্রুত নির্বাচন দেবেন তত দ্রুত দেশে শান্তি ফিরে আসবে। এই দেশে জিনিসপত্রের দাম কমে না। কমবে কী করে? এখনও সেখানে ফ্যাসিস্টের দোসররা বসে আছে। দুর্নীতি কমে নাই। এইদিকে তাদের খেয়াল নাই। সুশাসনের দিকে চোখ দেন। আমাদের পুলিশ প্রশাসন কাজ করতে পারছে না। কেন কাজ করতে পারছে না সেটা খোঁজ করে দেখেন। ওই সব লোককে দায়িত্ব দেবেন না, যারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা পুরোপুরি মুক্ত হতে পারিনি। আমরা সেদিন মুক্ত হব যেদিন আমার ভোটটা আমি দিতে পারব। যেদিন আপনি আপনার প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবেন, সেদিন ইনশাল্লাহ আমরা মুক্ত হব।”
তিনি বলেন, “আজকে যদি বলতে পারতাম আমরা ভালো আছি তাহলে খুশি হতাম। জিনিসপত্রের দাম এমন বেড়েছে যে, সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। চাল, ডাল, তেল, লবণ প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। আমরা যদি মনে করি, সরকার পরিবর্তন হয়েছে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, আমরা নিরাপদ থাকব সেটা সম্ভব হয়নি। সেজন্য আজকে আমরা এ জনসভায় উপস্থিত হয়েছি।”
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল ইসলাম তৃপ্তি, সহধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য টি এস আইয়ুব, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন।