খুলনা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টারের অবৈধ সম্পদের খোঁজে দুদক

পাকশী রেলওয়ের মাধ্যমে তলব করা হয়েছে খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকারকে।

খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2022, 09:59 AM
Updated : 27 Sept 2022, 09:59 AM

খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টারের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

অন্যদিকে রেলের টিকিট বিক্রিতে অনিয়ম ও কালোবাজারির প্রমাণ পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার সুপারিশ করেছে রেলওয়ের তদন্ত কমিটি। 

দুদকের খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আল আমিন বলেন, প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে মানিক চন্দ্র সরকারের সম্পদের অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক। সেই প্রেক্ষাপটে পাকশী রেলওয়ের মাধ্যমে তাকে তলব করা হয়েছে। 

গত ১৫ সেপ্টেম্বর পাকশী রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা সাজেদুল হক স্বাক্ষরিত একটি চিঠি মানিক চন্দ্র সরকারকে দেওয়া হয়েছে। তাতে মানিক চন্দ্র সরকারকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তার কাছে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর মানিক চন্দ্র সরকারের স্ত্রী ও মেয়ে খুলনা সমন্বিত দুদক কার্যালয়ে হাজিরা দিয়েছেন বলে জানান সহকারী পরিচালক আল আমিন। 

এদিকে টিকিট বিক্রিতে অনিয়ম ও কালোবাজারির প্রমাণ পাওয়ায় রেলওয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার সুপারিশ করেছে রেলওয়ের তদন্ত কমিটি। 

রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ওয়ালিউল হক তমাল জানান, স্টেশনে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বহিরাগতদের আনাগোনা, টিকিট কালোবাজারি, অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে খুলনা রেলওয়ের স্টেশন মাস্টারের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের ঘটনায় গত ৩ জুন তিন কর্মকর্তার সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। 

গত ১২ আগস্ট রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি।

তদন্ত প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, রেলওয়ের কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দ থাকা দুই শতাংশ টিকিট দেওয়াকে কেন্দ্র করে স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে কয়েকজন কর্মকর্তার বিরোধ শুরু হয়। 

তারই জেরে গত ১৬ মে খুলনা রেলওয়ে থানায় স্টেশনের টিএক্সআর বাইতুল ইসলাম, আইডাব্লিউ জাফর মিয়া ও তোতা মিয়া, সহকারী স্টেশন মাস্টার মো. আশিক আহমেদ ও মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ এনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন স্টেশন মাস্টার। 

এতে আরও বলা হয়, জিডিতে স্টেশন মাস্টার অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাকে হামলা করেন বলেও উল্লেখ করেন। তবে এর কোনো প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে জিডি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হলেও সেটি করা হয়নি বলে তদন্তে উঠে আসে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তার অনুমতি না নিয়ে স্টেশন মাস্টার ওই পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। অধস্তনদের চাপে রাখতেই তিনি এমনটা করেন।

এ ছাড়া প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রতি মাসে ট্রেনের সংকেতের জন্য বরাদ্দ হওয়া ১১ হাজার ২০০ টাকা মূল্যের ১৪০ লিটার কেরোসিন তেল খুলনা স্টেশনে প্রয়োজন না হলেও সেটি তুলে অস্বচ্ছ উপায়ে খরচ দেখান স্টেশন মাস্টার। 

স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার সুপারিশ করেছে কমিটি। 

পাশাপাশি স্টেশন মাস্টার তার জিডিতে সহকারী স্টেশন মাস্টার আশিকুর রহমান, জাকির হোসেন, ট্রেন এক্সামিনার বায়তুল ইসলাম ও ট্রলিম্যান জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে যে অনিয়মের অভিযোগ এনেছিল তার প্রমাণ না পাওয়ায় তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় তদন্ত কমিটি। 

তবে তোতা মিঞার বিরুদ্ধে কালোবাজারির সম্পৃক্ততা পাওয়া রেলওয়ে পুলিশের মাধ্যমে তদন্তের দরকার বলেও প্রতিবেদনে জানায় তদন্ত কমিটি।

এ বিষয়ে খুলনার স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বলেন, “আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো এসেছে, সেসব মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক। টিকিট কালোবাজারি বন্ধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জিডি করেছিলাম। তারাই আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।” 

তিনি আরও বলেন, “এতদিন তেলের বরাদ্দের টাকা নিয়ে কোনো কথা হয়নি, কিন্তু টিকিট সিন্ডিকেটের বিষয় ধামাচাপা দিতে এ ঘটনা সামনে আনা হয়েছে।”