কক্সবাজারে কটেজের আড়ালে ‘টর্চার সেল’, পর্যটকসহ উদ্ধার ৪

এসব কটেজে মানুষকে জিম্মি করে নির্যাতন ও টাকা আদায় করা হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 August 2022, 11:39 AM
Updated : 8 August 2022, 11:39 AM

কক্সবাজারে কটেজের আড়ালে মানুষকে জিম্মি করে নির্যাতন ও টাকা আদায়ের একটি ‘টর্চার সেলের’ সন্ধান পেয়েছে পুলিশ; সেখান থেকে পর্যটকসহ চারজনকে উদ্ধার করা হয়েছে।

রোববার রাতভর শহরের হোটেল-মোটেল জোন হিসেবে পরিচিত লাইট হাউজ এলাকা সংলগ্ন ‘শিউলি’ নামের কটেজে অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয় বলে ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম জানান।

সোমবার সকালে তিনি আরও বলেন, ‘শিউলি’ নামের কটেজটি সাইনবোর্ড বিহীন। এ সময় ঘটনাস্থলের আশপাশে অভিযান চালিয়ে দালাল সন্দেহে ১১ জনকে আটক করা হয়েছে।

কক্সবাজারে এমন আরও সাইনবোর্ড বিহীন ২০-৩০টি কটেজ আছে। সংঘবদ্ধ একটি দুর্বৃত্তচক্র এই কটেজগুলোকে ‘টর্চার সেল’ হিসেবে ব্যবহার করে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

কটেজ থেকে উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ ডিককূল এলাকার হেলাল উদ্দিনের ছেলে ইফাজ উদ্দিন ইমন (১৭), একই এলাকার বেলাল আহমদের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন (১৫), টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ এলাকার নূর মোহাম্মদের ছেলে দীল মোহাম্মদ (১৭) এবং চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার ফয়েজ আহমেদের ছেলে মো. ইমরান (১৯)।

পুলিশ জানিয়েছে, দীল মোহাম্মদ ও ইমরান উখিয়া উপজেলার পালংখালী স্টেশনের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। তারা রোববার সকালে কক্সবাজার বেড়াতে এসে রাত্রিযাপনের জন্য ‘শিউলি’ নামের কটেজে উঠে। বাকি দুজন শহরে চিকিৎসা করতে এসেছিলেন।

এ সময় দালাল সন্দেহে আটক করা হয়েছে- মো. আলমগীর (৪৫), মো. সেলিম (২০), আকাশ দাস (২৩), মো. জোবায়ের (২৮), মো. মামুন (২২), নাজির হোসেন (২৮), সেকান্দর আলী (২৮), মো. সোহেল (৩০), মো. জাহাঙ্গীর আলম(৩৩), মো. জসিম (২৭) ও মো. পারভেজকে (২৫)।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই কটেজটির সন্ধান পাওয়া যায়। তখন সেখানে রাতে অভিযানে যায় পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ফটকে তালা দিয়ে দেয় লোকজন। পরে তালা ভেঙে পুলিশ সেখানে ঢুকে। এই ফাঁকে গোপন পথ দিয়ে কটেজের লোকজন পালিয়ে যায়।

কটেজটির মালিককে শনাক্ত করা না গেলেও পরিচালনায় থাকা মো. রহিম ও লোকমান নামের দুজনকে শনাক্ত করা গেছে জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, সেখানে অভিযান চালিয়ে একটি কক্ষ থেকে আটকে রাখা অবস্থায় চারজনকে উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া দেশীয় অস্ত্র ও নানা যৌনসামগ্রী পাওয়া যায়।

উদ্ধার ব্যক্তিদের বরাতে পুলিশ জানায়, রোববার রাতে কক্সবাজার শহরের আবাসিক কটেজ জোনে কম ভাড়া কক্ষ খুঁজছিলেন তারা। এ সময় দালালরা তাদের এই কটেজে নিয়ে যায়। সেখানে লোকজন ছিল খুবই কম। পুরুষ পাঁচ থেকে ছয়জন আর নারী তিন থেকে চারজন।

“একপর্যায়ে চারজনকে আটকে নারীদের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ছবি তুলে মোটা অংকের টাকা দাবি করা হয়। হাতিয়ে নেওয়া হয় সঙ্গে থাকা টাকা ও মোবাইল ফোন। পরে আরও টাকার জন্য তাদের ওপর নির্যাতন চালান হয়।”

এসব সাইনবোর্ড বিহীন কটেজ থেকে পর্যটকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে রেজাউল করিম বলেন, আটকদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।