“আমার মত শত শত যাত্রী এমন ভোগান্তির শিকার হয়েছে।”
Published : 10 Jul 2024, 10:04 PM
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দেশব্যাপী ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ ছয় ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। এর ফলে ময়মনসিংহ থেকে ট্রেনে ঢাকার পথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
অপরদিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ত্রিশালের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। ফলে সড়কপথেও যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
বুধবার সকাল ১১টা থেকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্বারের মোড়-সংলগ্ন এলাকায় ঢাকা থেকে জামালপুরগামী তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেন ছয় ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা কোটাবিরোধী স্লোগান দেন। পরে বিকাল ৫টার দিকে আন্দোলনকারীরা অবরোধ তুলে নিলে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এর আগে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে একটি বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কামাল-রঞ্জিত (কে.আর) মার্কেটসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও ভবন ঘুরে জব্বারের মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এরপর রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
এতে ময়মনসিংহ স্টেশনে অনেক যাত্রী আটকা পড়েন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও অনেকেই গন্তব্যে যেতে পারেননি।
ময়মনসিংহ স্টেশনে অপেক্ষা করেও ঢাকাগামী ট্রেন না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সারোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, “সকাল ১০টায় হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনে করে ময়মনসিংহ থেকে পরিবার নিয়ে ঢাকা যাব বলে তিনটি টিকিট করি তিন দিন আগে অনলাইনে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে ট্রেনে আর ঢাকা যাওয়া হলো না। পরে দুপুর ২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে বাসায় ফিরে আসি। আমার মত শত শত যাত্রী এমন ভোগান্তির শিকার হয়েছে।”
শরীফ উদ্দিন নামে আরেক যাত্রী বলেন, “তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনে করে বিকালে ঢাকা যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অবরোধের কারণে জরুরি কাজ থাকা সত্ত্বেও যেতে পারিনি। এখন মনে হচ্ছে, ট্রেনে চলাচল করাও দুরূহ হয়ে পড়ছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সড়কপথ, রেলপথ কোথাও স্বস্তি নেই।”
তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী রোকসানা আরা বলেন, “শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ে প্রায়ই ট্রেন অবরোধ করে আন্দোলন করছে। এতে সাধারণ যাত্রী হিসেবে অনেক প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও সঠিক সময়ে গন্তব্যে যেতে পারছি না। আমরা ত্যক্ত-বিরক্ত হচ্ছি। শিক্ষার্থীদের দাবি সরকারকে ভালোভাবে বিচার-বিবেচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে দুর্ভোগ কমানোর আহ্বান জানাচ্ছি।”
এদিকে দাবি আদায়ে অনড় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থী ইরান মিয়া বলেন, “আজ থেকে আমরা এক দফা কর্মসূচি পালন করবো। সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য কোটাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংস্কার করতে হবে।
“অন্যথায় আজ আমরা ছয় ঘণ্টা রেলপথ অবরোধ করেছি, প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হব”, বলেন ইরান মিয়া।
কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী প্রণব ঘোষ বলেন, “সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা সংস্কার করতে হবে। এ ছাড়া আমাদের আন্দোলন চলছে, চলবেই। হরতালের মত কর্মসূচিও দেওয়া হতে পারে। সাধারণ মানুষের কিছুটা ভোগান্তি হলেও কোটা সংস্কার সবার জন্য ভালো হবে। মানুষকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।”
ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার এসআই দীপক পাল বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে ছয় ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। এতে বিভিন্ন স্টেশনে বেশ কয়েকটি ট্রেন আটকা পড়ে মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি হয়।”