জামাল চৌকিদার বলেন, “বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টায় সবুজসহ তিনজনের দুর্ঘটনার খবর পাই। পরে রাত ১০টায় তাদের মৃত্যুর খবর পাই।”
Published : 14 Jun 2024, 05:38 PM
সৌদি আরবের আল নাজাদ অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনায় চাঁদপুরের তিন যুবকের মৃত্যুর খবর পেয়েছে তাদের পরিবার।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে আল নাজাদ অঞ্চলের আপিপ থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের পশ্চিম বিশকাটালি গ্রামের জামাল চৌকিদারের ছেলে সবুজ চৌকিদার (৩৮), হাইমচর উপজেলার আলগী দক্ষিণ ইউনিয়নের চরভাঙা গ্রামের সৈয়াল বাড়ির মো. ইসমাইল সৈয়ালের ছেলে মো. সাব্বির (২১) এবং আলগী উত্তর ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মো. রিফাত (২০)।
দুর্ঘটনার সময় সবুজ গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। বাকি দুজন ওই গাড়ির যাত্রী ছিলেন। এই তিন যুবকের বাড়িতেই চলছে শোকের মাতম।
কমলাপুর গ্রামের মো. রিফাত মাত্র তিন বছর আগে শ্রমিক হিসেবে সৌদি আরবে যান। নির্মাণশ্রমিক হিসেবে তিনি কাজ করতেন।
রিফাতের বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, কয়েকদিন আগেও ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। তখন তিনি ছেলেকে ঈদে বাড়ি আসতে বলেছিলেন। কিন্তু ছেলে পরে আসবে বলে জানিয়েছিল।
রিফাতের প্রতিবেশী আল-আমিন খান বলেন, “রিফাত খুবই কম বয়সী। এমন দুর্ঘটনায় আমরা সবাই মর্মাহত। সান্ত্বনা দেওয়ার মত কিছুই নেই। ছেলেটি সংসারের হাল ধরেছিল।”
নিহত সাব্বিরের বাবা ইসমাইল সৈয়াল ও মা ফাতেমা বেগমের দাবি, তারা যেন শেষবারের মত সন্তানের মুখটা দেখতে পারেন। সরকার যেন এ ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা করেন।
সাব্বিরের মা ফাতেমা বেগম ছেলের শোকে কথাও বলতে পারছেন না। অনেকটা বাকরুদ্ধ। প্রতিবেশী যারা সান্ত্বনা দিতে এসেছেন তাদের চোখেও জল।
সাব্বিরের এক বড় ভাইও সৌদি আরবে থাকেন। আর বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে ছোট বোন স্নেহা।
স্নেহা বলছিলেন, “ভাই আমাকে ফোনে অনেক স্বপ্নের কথা বলত। দেশে আসলে কী কী করবে। কয়েকদিন আগে মোবাইলে কথা হলে আমি দেশে আসার জন্য বলি। কিন্তু ভাইয়ের আর আসা হলো না।”
সাব্বির আর রিফাতকে সৌদি আরবে কাজের জন্য নিয়ে যান সবুজ চৌকিদার। তিনি প্রায় ১৮ বছর ধরে সেখানে আছেন। তিনজনই আপিপ শহর ও আশপাশের এলাকায় ভবন নির্মাণের কাজ করতেন।
সবুজ চৌকিদারের বাবা জামাল চৌকিদার বলেন, সবুজ বেশ কয়েকবার দেশে এসেছে। গ্রামের বাড়িতে তার স্ত্রী ও দুই কন্যাসন্তান থাকে। তাদেরকেও ভ্রমণ ভিসায় কয়েকবার সৌদিতে নিয়েছেন। সবশেষ দুই সপ্তাহ আগে পুরো পরিবার আবারও সেখানে বেড়াতে গেছে। তারা এখনও সেখানেই রয়েছে।
জামাল চৌকিদার বলেন, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টায় সবুজসহ তিনজনের দুর্ঘটনার খবর পান। পরে রাত ১০টায় সেখানে অবস্থানরত স্বজনদের মাধ্যমে জানতে পারেন দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
ছেলের মৃত্যুর খবরে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন সবুজের বৃদ্ধা মা। তিনি বিলাপ করে বলছিলেন, “আমি আমার ছেলেকে একটু ছুঁয়ে দেখতে চাই।”
তবে এই যুবকের মৃত্যুর খবর জানেন না বলে জানান হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা। তিনি বলেন, “পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। তবে জানালে তাদের জন্য যেসব করণীয় আছে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।”