দেশের ৪৪তম ভৌগোলিক নির্দেশক হিসেবে এই পণ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর।
Published : 05 Dec 2024, 07:41 PM
ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে শেরপুরের তুলশীমালা চালের পর এবার ঐতিহ্যবাহী ছানার পায়েস স্বীকৃতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান। পরে খবর প্রকাশের পর শহরজুড়ে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে।
এ উপলক্ষে সাধারণ মানুষের মাঝে ছানার পায়েস বিতরণ করেছে জেলা ব্র্যান্ডিং ওয়েবসাইট ‘আওয়ার শেরপুর’।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের (ডিপিডিটি) মহাপরিচালক মুনিম চৌধুরীর স্বাক্ষরিত সনদের মাধ্যমে এই স্বীকৃতির কথা জানানো হয়।
আওয়ার শেরপুরের প্রতিষ্ঠাতা ও মালিক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ছানার পায়েস শেরপুরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। জিআই পণ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সবাই আনন্দিত। এটি শেরপুরে ব্র্যান্ডিং ও ঐতিহ্য আরও বহুদূর নিয়ে যাবে।
তিনি জানান, এই ছানার পায়েস সারাদেশে বিখ্যাত। এটির জিআই স্বীকৃতি চেয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বরাবর আবেদন করেন শেরপুর জেলা প্রশাসন। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে।
কীভাবে বানানো হয় ছানার পায়েস
ছানার পায়েস তৈরি নিয়ে শেরপুর শহরের গোয়ালপট্টি মহল্লার দুর্গাচরণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মিষ্টি তৈরির কারিগর রিপন চন্দ্র ভদ্রের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
তিনি বলেন, ছানার পায়েস তৈরি করতে দুধ, চিনি, ময়দা ও এলাচ লাগে। প্রথমে দুধ জ্বাল দিয়ে ক্ষীর করা হয়। এরপর আলাদাভাবে দুধ থেকে ছানা কেটে তাতে সামান্য ময়দা মিশিয়ে ছোট ছোট গুটি করা হয়।
এই গুটি চিনি মিশ্রিত শিরায় ভিজিয়ে আগে তৈরি করা ক্ষীরে ছেড়ে হাল্কা জ্বাল দেওয়া হয়। এভাবেই তৈরি হয় সুস্বাদু এই মিষ্টি।
এক কেজি ছানার পায়েস তৈরি করার জন্য দুই কেজি দুধ, আধা কেজি চিনি, সামান্য পরিমাণ ময়দা ও ১০ থেকে ১৫ গ্রাম এলাচ লাগে বলে জানান এই কারিগর।
শহরের রঘুনাথ বাজার মহল্লার অনুরাধা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মালিক বাপ্পি দে জানান, স্থানীয় প্রশাসন, সাংবাদিক, বিভিন্ন মহল থেকে শুরু করে সবার সহযোগিতায় তুলশীমালা চালের পর দ্বিতীয় জিআই পণ্য হিসেবে ছানার পায়েস জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেল।
এতে শেরপুরের অর্থনৈতিক খাত চাঙ্গা হওয়ার পাশাপাশি দেশ ও দেশের বাইরে এ অঞ্চলের সুনাম ছড়িয়ে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।
শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “দেশের ৪৪তম জিআই পণ্যের মর্যাদা অর্জন করেছে ছানার পায়েস। সনদের কপি হাতে পেয়েছি। জিআই পণ্য হওয়ার কারণে তা সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে।
শেরপুরের সম্ভাবনায় অন্য সব পণ্যের জিআই স্বীকৃতি চেয়ে দ্রুত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শেরপুরের ছানার পায়েসের ঐতিহ্য শত বছরের পুরোনো। ব্রিটিশ আমলে এই মিষ্টি প্রথম তৈরি হয় গোয়ালপট্টিতে। তখন হাতে গোনা দু-একটি দোকানে এই মিষ্টি হতো। এখন জেলা সদরেই অন্তত ২০টি দোকানে ছানার পায়েস হচ্ছে। এসব দোকানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ কেজি ছানার পায়েস বিক্রি হয়।
শেরপুর শহরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে প্রতি কেজি ছানার পায়েস প্রকার ভেদে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়। এ ছাড়া ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী, নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলাতেও পাওয়া যায় এই মিষ্টি।