বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, “দুই শিক্ষককে স্থায়ী বহিষ্কারের কথা বলে আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীদের সরানো হয়েছে।”
Published : 13 Mar 2024, 09:59 PM
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও হেনস্তার অভিযোগে দুই শিক্ষককে স্থায়ী বহিষ্কারে উপাচার্যের দেওয়া আশ্বাসে মহাসড়ক থেকে সরলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের ১২তম দিন বুধবার ঘণ্টাব্যাপী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
এ দিন বেলা ১১টার দিকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, সোনালী ব্যাংকের শাখা, প্রক্টোরিয়াল বডির অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
এতে শিক্ষক ও কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এরপর আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।
অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক ছাত্রীকে অনুপস্থিত দেখিয়ে পরীক্ষায় জরিমানা আদায়, নম্বর কম দেওয়া ও থিসিস পেপার আটকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠে মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে।
ওই বিভাগের প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রর বিরুদ্ধে ওইসব ঘটনায় প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তুলেন শিক্ষার্থীরা।
এ ঘটনার বিচারের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে আন্দোলন শুরু করে ওই শিক্ষকদের বিচার দাবি করছেন একই বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
এ ঘটনায় ৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ট্রেজারার ড. আতাউর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
কিন্তু ৬ মার্চ আন্দোলনকারীরা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ সময় তারা ওই বিভাগের শিক্ষকদের নেমপ্লেট ভাঙচুর ও বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির ঘটনায় প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তুলে তাকেও তদন্তের আওতায় আনার দাবি জানায়। পরে দাবি মেনে তদন্ত কমিটি পুর্নগঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে, বুধবার দুপুরে এক বিজ্ঞপ্তিতে সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে ওই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহা এবং বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়।
একইসঙ্গে রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকে বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিও দেওয়া হয়।
কিন্তু দুই শিক্ষককে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর খবর ছড়িয়ে পড়লে দুপুর দেড়টার দিকে মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
ওই শিক্ষকদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসা প্রশাসন অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, কলা অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ ও উপাচার্যের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
এ বিষয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলা ছাত্রী বলেন, “সাজন সাহা আমাকে রাতে মেসেজ দিয়ে চা খেতে ডাকতো, নির্জন জায়গায় দেখা করতে বলতো, অঙ্ক বুঝাতে ব্যক্তিগত চেম্বারে ডাকা, শাড়ি পরে দেখা করতে বলা, ইনবক্সে অশ্লীল ছবি চাওয়া, ম্যাসেঞ্জারে অন্তরঙ্গ ভিডিও লিংক শেয়ার করতো।”
ছাত্রীটির অভিযোগ, “এসব বিষয়ে বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র স্যার তাকে শেল্টার দিতো। তাই দুজনকেই স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে। শুধু আমি একাই সাজন সাহার যৌন হয়রানির শিকার নই; আরও অনেকেই আছেন। লজ্জায় কেউ মুখ খুলতে চাচ্ছে না।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের আন্দোলন চলছে। আন্দোলনের অংশ হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগে তালা দেওয়া হয়েছিল। ওই দুই শিক্ষককে স্থায়ী বহিষ্কার করা না হলে আমাদের আন্দোলন চলবে। সাময়িক ছুটিতে পাঠানো এটা কোনো শাস্তি নয়।”
পরে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে শিক্ষার্থীরা।
এসময় শিক্ষার্থীরা ঘণ্টাখানেক মহাসড়কটি অবরোধ করে রাখেন।
উপাচার্যসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে গেলে সড়কে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন।
এ সময় শিক্ষকদের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা তাদের স্লোগান বন্ধ করেন এবং দাবি পূরণে উপাচার্যের আশ্বাসে সড়ক থেকে সরে আসেন।
এ বিষয়ে সাজন সাহার ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে, মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র বলেন, “দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি ও বাধ্যতামূলক ছুটির চিঠি পেয়েছি। তদন্ত কমিটি আমাকে ডেকেছে, আমি তাদের সাথে কথা বলছি।” ‘পরে কথা হবে’ বলে ফোন রেখে দেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সোনালী ব্যাংকের শাখাসহ সব বিভাগে তালা দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে শিক্ষার্থীরা ভিসির আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে এসে তালা খুলে দেন।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, “ওই দুই শিক্ষককে স্থায়ী বহিষ্কারের কথা বলে আন্দোলন থেকে তাদের সরানো হয়েছে। আগামীকাল সিন্ডিকেটের জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। সভায় শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে আলোচনার হবে। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার ড. হুমায়ন কবীর বলেন, “আমিও তদন্ত কমিটির একজন সদস্য। যৌন হয়রানির ঘটনায় তদন্ত কমিটির কাজ চলছে। সেইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি।”
এ বিষয়ে ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, “অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। আন্দোলনের ঘণ্টাখানেক পরে শিক্ষকদের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক থেকে সরে আসেন। পরে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।”