শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক বলে মনে করছেন উপাচার্য।
Published : 11 Dec 2024, 07:16 PM
শিক্ষার্থী ভর্তিতে পোষ্য কোটা বাতিলসহ ভর্তি, সেমিস্টার ও ক্রেডিট ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসব ‘অযৌক্তিক’ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন।
উপাচার্য এএম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “শিক্ষার্থীদের এ ধরনের একটি স্মারকলিপি আমাদের কাছে পোঁছেছে। তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক। দাবি-দাওয়াগুলো নিয়ে আমরা বসব। তবে প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এগুলো সমাধান করতে একটু সময় লাগবে।”
এর আগে মানববন্ধনে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল হোসেন বলেন, “২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি ফি ছিল ৮ হাজার ১০০ টাকা। ক্রমান্বয়ে ফি বাড়িয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে সে ভর্তি ফি দাড়িয়েছে ১৮ হাজার টাকায়। ভর্তি ফি'র পাশাপাশি কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে সেমিস্টার ফি ও ক্রেডিট ফি। ২০২২ সালে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি ছিল ২ হাজার ৪৩০ টাকা। সেখানে ২ বছরের ব্যবধানে ২০২৪ সালে সেমিস্টার ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৩৪৫ টাকা।”
“এছাড়াও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত তত্ত্বীয় প্রতি ক্রেডিট ফি ১০৫ টাকা ও ব্যবহারিক প্রতি ক্রেডিট ফি ছিল ১৬০ টাকা। সে ফি বৃদ্ধি করে যথাক্রমে ১৪০ টাকা ও ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেমিস্টার শেষ করতে প্রায় ২ হাজার টাকা খরচ হয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে বছর বছর এরকম যথেচ্ছা ফি বৃদ্ধি করা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শোষণ করার নামান্তর।”
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিল বলেন, “করোনা, বন্যা ও জুলাই বিপ্লবে দীর্ঘ একটা সময় সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি ক্যাম্পাসে কিছু বিভাগে রানিং ৬ থেকে ৭ টা ব্যাচ আছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাসরুম ও ল্যাবের সংকট এখনো কাটেনি। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজট নিরসনে সেমিস্টারের সময় কমিয়ে আনলে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক পিছিয়ে পড়া থেকে মুক্তি পাবে।”
“যে কোটা পদ্ধতি নির্মূল করতে গিয়ে হাজারও শিক্ষার্থীকে জীবন দিতে হয়েছে। সেই কোটা সিস্টেম এখনো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাতিল করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌষ্য কোটা চালু রাখা জুলাইয়ের বিপ্লবের স্পিরিটের সাথে যায় না। মেধাই হতে হবে শিক্ষার্থী ভর্তির মানদণ্ড।”
মানববন্ধনে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, “জুলাই বিপ্লবের পর আমরা আশা করেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থী বান্ধব হয়ে উঠবে। প্রশাসন শিক্ষার্থীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবহার করছে। বিগত প্রশাসন ভর্তি ফি, সেমিস্টার ফি এসব অযৌক্তিক ভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল। তবুও এসব হঠকারী সিদ্ধান্ত বর্তমান প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ওপর চালিয়ে যাচ্ছে। যা কোনোভাবেই শিক্ষার্থী বান্ধব আচরণ নয়।”
প্রশাসনকে স্বাধীনভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের উৎস বের করতে বলা হয়েছে।
গালিব বলেন, “কিন্তু প্রশাসন তা না করে শিক্ষার্থীদের ওপর অধিক অর্থ চাপিয়ে দিয়ে আয় করার ধান্ধা করছে। প্রশাসন যদি তাদের হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে না আসে, তাহলে শিক্ষার্থীরা সামনে আরও কঠোর কর্মসূচি ডাকতে বাধ্য হবে।”
এসময় সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আজাদ শিকদারের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী হাফিজুল ইসলাম, সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী মুজাহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী সুমন।
বক্তব্য শেষে এসব বর্ধিত ফি, পোষ্য কোটা বাতিল ও আগামী দুই সেমিস্টার চার মাসে নিয়ে আসার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন মানববন্ধনকারীরা।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের ‘শিক্ষার্থী বান্ধব ফি নির্ধারণ করতে হবে’, অযৌক্তিক পোষ্য কোটা শাবিপ্রবি চায় না, শিক্ষা কোনো পণ্য নয়; শিক্ষা কোনো ব্যবসা নয়, আগামী দুই সেমিস্টার চারমাসে করে নিতে হবে, ফি এর বোঝা নামাওদ; শিক্ষার অধিকার ফিরিয়ে দাও, অযৌক্তিক ফি বাতিল চাই, কম্পিউটার ফি এক হাজার; আমরা কি সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ার?, ক্রমবর্ধমান ভর্তি, ক্রেডিট, সেমিস্টার ফি; শাবিপ্রবির জন্য ক্ষতিকর, যৌক্তিক খাত সংস্কার; অযৌক্তিক খাত বহিস্কার, প্রহসন নয়; সংস্কার চাই ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
মানববন্ধন শেষে মানববন্ধনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল এসকল দাবি নিয়ে উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেন।