নিহতদের মধ্যে সাত জনই মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ভদ্রাসন ইউনিয়নের সাহাপাড়া এলাকার। খবর পৌঁছালে গ্রামটি শোকস্তব্ধ হয়ে যায়।
Published : 23 Jun 2024, 12:19 AM
বরগুনায় ভাগ্নির বিয়েতে অংশ নিতে গিয়ে দুর্ঘটনায় স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হারিয়ে শোকাহত আবুল কালাম আজাদ বলছেন তাদের সঙ্গে তিনিও প্রাণ হারালেই ভালো হত।
শনিবার বরগুনার আমতলী উপজেলা হাসপাতালের মেঝেতে গড়াগড়ি করে আর্তনাদ করতে করতে তিনি আহাজারি করছিলেন, “ও আল্লাহ আমারে এখন নিয়া যাও। আমারে একলারে বাচাইয়া রেখে কি লাভ। ওদের সাথে মারা গেলেও ভালো হতো। এই যন্ত্রণা আর সহ্য করা লাগতো না।”
ঢাকার ওয়ান ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার ক্রোকচর (চরপাড়া) গ্রামের বাসিন্দা। চাকুরির সুবাদে পরিবার পরিজন নিয়ে তিনি ১০ বছর ধরে ঢাকায় বসবাস করেন।
শনিবার ভাগ্নি হুমায়রা আক্তারের বিয়ে অনুষ্ঠানে এসে বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া হাট সেতু ভেঙে মাইক্রোবাস খালে পড়ে গেলে মাইক্রোবাসের কাচ ভেঙে আবুল কালাম আজাদ সাঁতরে তীরে উঠেছেন। কিন্তু বাঁচাতে পারেননি স্ত্রী ও মেয়েদের।
আবুল কালাম আজাদে স্ত্রী শাহনাজ আক্তার মুন্নী বেগম (৪০) টেলিটক অফিসের প্রধান কার্যালয়ে অডিটর, বড় মেয়ে তাসফিয়া মোবাশ্বেরা আজাদ (১১) ভিকারুন নুন নেসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণি এবং ছোট মেয়ে তাহিয়াত মেহজাবিন আজাদ বারিধারার সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের নার্সারি শাখার ছাত্রী।
তারা ছাড়াও এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ছয়জন। তাদের লাশ উদ্ধারের পর পাঠানো হয় আমতলী উপজেলা হাসপাতালে।
সেখানে গিয়ে দেখা যায় আবুল কালাম আজাদ শোকে পাথর হয়ে নির্বাক দৃষ্টিতে নিহত স্ত্রী আর দুই মেয়ের দিকে তাকিয়ে শুধু বিড়বিড় করছেন। মাঝে মাঝে আবার তিনি মেঝেতে গড়াগড়ি করে আর্তনাদ করছেন।
শোকে স্তব্ধ মাদারীপুরের শিবচরের পুরো গ্রাম
বরগুনার আমতলীতে দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে সাত জনই মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার ভদ্রাসন ইউনিয়নের সাহাপাড়া এলাকার সাবেক সেনা সদস্য মাহাবুবর রহমান সবুজের পরিবারের সদস্য।
শনিবার তাদের দুর্ঘটনার খবর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে শোকের মাতম উঠে বাড়িতে। এলাকাবাসী এসে ভিড় জমায় মাহাবুবুর রহমান সবুজের বাড়িতে। সবুজ এই এলাকার ফজলুর রহমান খানের ছেলে।
স্থানীয়রা জানা গেছে, বুধবার সকালে শিবচর থেকে মাহাবুব এবং তার পরিবারের সদস্যরা খালাতো বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বরগুনার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। শনিবার দুপুরে বরের বাড়িতে যাওয়ার সময় মাহাবুব ও তার পরিবারের সদস্যদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি একটি সেতু ভেঙে খালে পড়ে যায়।
নিহতরা হলেন, মাহাবুবের মা ফরিদা বেগম (৫৫), ভাই সোহেল খানের স্ত্রী রাইতি বেগম (৩০), সোহেলের শাশুড়ি রুমি বেগম (৪০), মাহাবুবের মামা আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার, তার সন্তান তাহিয়া, তাসফিয়া, আরেক মামী ফাতেমা বেগম (৪০)।
এছাড়া আমতলীর দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া জহিরুল ইসলামের স্ত্রী জাকিয়া এবং কন্যা রিদি (৫)।
স্থানীয় দুলাল মাতুব্বর বলেন, “দুই পরিবারের মোট ৯ জন সদস্য মারা গেছে। তার মধ্যে সাতজনই আমাদের গ্রামের। এতে পুরো গ্রামে শোকে স্তব্ধ।
“আমরা খবর পেয়ে মাহাবুবের বাড়িতে এসেছি। ওদের পরিবারের কেউ বাড়িতে নেই। সবাই ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিল। এখন বাড়িতে কেউ নেই।”
ভদ্রাসন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বেপারী বলেন, “আমরা খবর পেয়েই বাড়িতে এসেছি। আসলে এতো বড় দুর্ঘটনায় আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি। এখন তাদের মরদেহ বাড়িতে আনার প্রস্তুতি চলছে বলে খবর পেয়েছি।”
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, “আমি বিষয়টি জেনেছি। খুবই মর্মান্তিক ঘটনা।”
আমতলীর উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার ফোরকান জানান, আমতলী কাউনিয়া ইব্রাহিম অ্যাকাডেমির শিক্ষক মাওলানা মনিরুল ইসলামের মেয়ে হুমায়রা আক্তারের সঙ্গে একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সেলিমের ছেলে সাইমুন রহমান সোহাগের বৃহস্পতিবার বিয়ে হয়।
শনিবার দুপুরে ছিল ছেলের বাড়িতে বৌভাত অনুষ্ঠান। সে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে মাইক্রোবাস নিয়ে কয়েকজন স্বজন বেলা দেড়টার দিকে আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের গুরুদল গ্রাম থেকে বরের বাড়ি আমতলী পৌর শহরের ৩নং ওয়ার্ডে রওনা হন।
মাইক্রোবাসটির সঙ্গে চার জন যাত্রী নিয়ে আরেকটি ইজিবাইক ছিল। পথে দুপুর পৌনে ২টার দিকে দুটি গাড়ি হলদিয়া হাট ব্রিজটি পার হতে গিয়ে ভেঙে নিচে পড়ে যায়। ইজিবাইকের যাত্রীরা সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও মাইক্রোবাসের ৯জন মারা গেছেন।
শিবচর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আয়শা সিদ্দিকা বলেন, “লাশ নিয়ে রাতেই রওনা হয়েছে। রোববার সকালে লাশ দাফন করা হবে।
আরও পড়ুন: