“জ্যাঠা সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রে আসার জন্য তাড়া দিচ্ছিলেন। তিনি কোনো নির্বাচনেই নিজের ভোট মিস করতে চান না।”
Published : 21 May 2024, 03:48 PM
হাঁটেন লাঠি ভর করে; নুয়ে পড়েছেন বয়সের ভারে। তারপরও ভোট নিয়ে তার উৎসাহের বিন্দুমাত্র কমতি নেই।
ভোট দিতে যাবেন বলে ভোরবেলা থেকে তার অপেক্ষা শুরু হয় সাদা ধবধবে পাঞ্জাবি পরে। ভোট দিতে পেরে গানও গেয়েছেন মনের আনন্দে।
মঙ্গলবার সকালে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নিজ কেন্দ্র ঝালকাঠি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট দিতে যান শতবর্ষী অমূল্য চন্দ্র দাস।
কেন্দ্রটির দোতালার সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয় ওপরের ভোট কক্ষে। কিন্তু তার জন্য থেমে যাননি অমূল্য। পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সহযোগিতা নিয়ে সেখানে চলে যান তিনি।
ভোট কক্ষের দায়িত্বরতদের কাছ থেকে ব্যালট পেপার বুঝে নিয়ে গোপন কক্ষে যান। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে যখন বেরিয়ে আসেন, তখন তার চেহারায় আকর্ণ হাসি।
বুথ থেকে বেরিয়ে আসতেই সাংবাদিকরা অমূল্যকে ঘিরে ধরেন। বৃদ্ধ বয়সে কেন্দ্রে এসে ভোট দিতে কষ্ট হয় কী-না জানতে চান। উত্তরে বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় তিনি বলেন, “মুই বৃটিশ, পাকিস্তান আর বাংলাদেশ তিনডা আমলের সাক্ষী। মোর বয়স এহন ১২৪।
“সবই চোহে দেহি। মুই এহনই মরমু না, আরও চাইরবার (চার মেয়াদে) ভোট দিমু।”
ঝালকাঠির শহরের বাসিন্দা অমূল্য চন্দ্র দাস নিজের বয়স ১২৪ বছর বলে সবার কাছে দাবি করেন। জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্মসাল ১৯২২ উল্লেখ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী তার বয়স এখন ১০২ বছর।
তবে এনআইডিতে ভুল করে বয়স কম লেখা হয়েছে, দাবি অমূল্য দাসের।
ভাইয়ের ছেলে নয়ন দাসকে নিয়ে অমূল্য যখন ভোট দিতে কেন্দ্রে যান, তখন সে দৃশ্য চোখে পড়ে দায়িত্বরত মোবাইল টিমের সদস্য সদর থানার এসআই মো. আরেফিনের। এ সময় তিনি বৃদ্ধ অমূল্যকে ভোট কক্ষে নিয়ে যেতে নির্দেশ দেন।
ভোট দিতে পেরে আনন্দে অমূল্য আনন্দে গানও গেয়েছেন। পরে বেশ ফুরফুরে মেজাজে বাড়ি ফিরে যান তিনি।
অমূল্য দাস চলে যাওযার পর কথা হয় এসআই আরেফিনের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, “বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীরা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, তার জন্য সবরকম সহযোগিতা দিতে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে।”
অমূল্য দাসের ছোট ভাইয়ের ছেলে নয়ন দাস বলেন, “জ্যাঠা সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রে আসার জন্য তাড়া দিচ্ছিলেন। ভোটের সময় ভোর বেলায় সাদা ধবধরে পাঞ্জাবি পরে অপেক্ষা করেন।
“আসলে তিনি কোনো নির্বাচনেই নিজের ভোট মিস করতে চান না। তাই এবার উপজেলার নির্বাচনেও তাকে কেন্দ্রে নিয়ে আসতে হয়েছে।”
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রির্টানিং কর্মকর্তা মো. আব্দুস ছালেক বলেন, “কেন্দ্রের সিনিয়র সিটিজেনরা ভোট দিতে এলেই আসলে আমাদের স্বার্থকতা। সব কেন্দ্রগুলোতেই দায়িত্বরত আনসার ও পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া রয়েছে প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ভোটারদের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য।”
“ভোট কেন্দ্র ছাড়া যাওয়া আসার পথেও তাদের সাধ্যমত সহযোগিতারও চেষ্টা আমাদের থাকে।” যোগ করেন তিনি।
ঝালকাঠি সদর উপজেলার ৭৭টি কেন্দ্রে এবং নলছিটি উপজেলার ৭০টি কেন্দ্রে মঙ্গলবার সকালে ভোট শুরুর পর ভোটারদের উপস্থিতি কম চোখে পড়ে।
এই দুই উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৯ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় নারী ভোটার ৮৮হাজার ১৪৭ জন ও পুরুষ ভোটার ৯১ হাজার ১১৫ জন।
আর নলছিটি উপজেলায় নারী ভোটার ৮২ হাজার ৪৬৭ জন ও পুরুষ ভোটার ৮৬ হাজার ২০৬ জন।