'দায়িত্ব পেলে' নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব: আজমত উল্লা

এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিশ্বাসঘাতকতার কাছে নৌকা হেরেছে।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2023, 06:59 PM
Updated : 2 June 2023, 06:59 PM

গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পেলে তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করার কথা বলেছেন সদ্য শেষ হওয়া সিটি নির্বাচনে পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান।

শুক্রবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বাসন থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নির্বাচন পরবর্তী মূল্যায়ন সভা হয়। মহানগর আওয়ামী লীগ এ সভার আয়োজন করে।

সভায় আজমত উল্লা খান বলেন, “উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে এখনও চূড়ান্ত কিছু হয়নি। দেখা যাক কী হয়। দায়িত্ব পেলে অবশ্যই আপনা সবাই বিষয়টি জানতে পারবেন।”

এর আগে সভার প্রধান অতিথি, গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে বক্তব্য দেন।

মূল্যায়ন সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টি জানিয়েছেন।

এর আগে গত বুধবার মহানগরীর কাশিমপুর ও কোনাবাড়িতে অনুষ্ঠিত মূল্যায়ন সভায়ও এ বিষয়ে বক্তব্য দেন সরকারের মুক্তিযোদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী।

স্থানীয় সরকার পরিচালনায় আজমত উল্লা খানের ব্যাপক অভিজ্ঞতা আছে দাবি করে শুক্রবারের সভায় মুক্তিযোদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, “যার এতো দক্ষতা, এতো সততা, তাকে যদি গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়; তবে নগরীর ৩৫ লাখ লোক যে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে তারা আবার উন্নয়নের সুফল পাবেন।”

২০২২ সালের নভেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন নতুন এ সংস্থাটি গঠিত হয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আদলে।

গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠিত হওয়ার পর থেকে সরকারের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা এই পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

তবে জনবলের অভাবে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। বর্তমানে ওই পদে দায়িত্ব পালন করছেন একজন যুগ্ম সচিব। সেখানেই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি নির্বাচনের পরাজিত প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।

এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধ বিষয় মন্ত্রী বলেন, “বিষয়টি নিয়ে পিএমের সঙ্গে কথা হয়েছে। বর্তমনে ওই পদে একজন সরকারি কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। সেই পদে আজমত উল্লা সাহেবকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন পিএমের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত করা হবে।”

এতে মন্ত্রী বলেন, “গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ৩৫ লাখ লোক বসবাস করে। এখানে পর পর তিনটা নির্বাচন হয়ে গেল। প্রথম নির্বাচন, সেটা একটা দেশব্যাপী বিরাট ইস্যু হয়েছিল। আমাদের তখন প্রতিকূল অবস্থা ছিল।

“২০১৩ সালে আমরা জিততে পারি নাই। যারা দায়িত্ব পেয়েছে তারা জনগণের কাজ করতে পারেনি।”

আ ক ম মোজাম্মেল হক আর বলেন, “ব্যর্থতা, অভিযোগে আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অভিভাবকহীন ছিল গাজীপুর সিটি করপোরেশন। পরে যাকে আমরা নির্বাচিত করলাম, দলের মনোনিত প্রার্থী ছিলেন। তিনি এমন কিছু কাজ করলেন, দল তাকে অব্যাহতি দিয়ে দিল এবং বরখাস্ত করল। সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও তার বিরুদ্ধে আছে। তিনি নিজেই বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী গাজীপুরে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। সেই টাকার উন্নয়নের সুফল গাজীপুরবাসী পায়নি। ১০ বছর ধরে যে উন্নয়ন গাজীপুরবাসী পেত তা থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছে।”

সভায় তিনি বলেন, “সরকারের একটা বিধান আছে, সব সিটি করপোরেশনে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থাকে। সেই উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হিসেবে কোথাও জনপ্রতিনিধি আছেন, কোথাও সরকারি কর্মচারী আছেন।”

নবনির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুনের প্রতি ইঙ্গিত করে মন্ত্রী বলেন, “যিনি মেয়র হয়েছেন, তিনি কেমন করবেন জানি না। মানুষের ধারণা, তার যে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা তাতে গাজীপুরবাসীর প্রত্যাশা পূরণ নাও হতে পারে।”

গত বুধবার সকালে মহানগরীর কাশিমপুর ও বিকালে কোনোবাড়ি থানা আওয়ামী লীগের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

দুইটি অনুষ্ঠানেই প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

তিনি রাত ৯টার দিকে কোনাবাড়ি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে এমন ইঙ্গিত দেন।

অনুষ্ঠানে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, “গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিশ্বাসঘাতকতার কাছে নৌকা হেরেছে। আওয়ামী লীগ যেহেতু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছে। সরকারের হাতেও কিছু ক্ষমতা থাকে।

“গাজীপুরবাসী যেন উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত না হয়। গত ১০ বছর ধরে এখানকার মানুষ নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর যেন বঞ্চিত না হন। তাই আজমত উল্লা খানের মত ব্যক্তি যদি সেখানে সুযোগ পান তাহলে এ নগরবাসী উপকৃত হবেন।”

আমরা সরকারে থাকার কারণে সরকারের কাছে সে সুযোগ আছে, আমি আশা করি, নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের প্রত্যাশা পূরণের জন্য খুব দ্রুতই ব্যবস্থা নেবেন।