চায়না জাতের এই কমলা চাষে করে সবার নজর কেড়েছেন যশোরে শার্শা উপজেলায় স্বপ্নবাজ এক যুবক।
Published : 09 Nov 2024, 10:20 AM
বুক সমান গাছ, কোনটা পাঁচ থেকে ছয় ফুটও হয়েছে। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে ছোট ছোট হলুদ রঙের কমলা লেবু। এরই মধ্যে অনেক ফলে পাকা রংও ধরেছে। ফলটির নাম ‘রামরঙ্গন’; এটি কমলার একটি জাত।
এ কমলা চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন যশোরের শার্শা উপজেলার স্বপ্নবাজ যুবক অহিদুজ্জামান। জেলায় তিনিই প্রথম এ জাতের কমলা চাষ করেছেন বলে দাবি তার।
তার এই বাগান ও চাষ দেখতে প্রতিদিন আশপাশসহ দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন অনেকেই। কেউবা আবার তুলছেন ছবি।
উপজেলার পানবুড়িয়া গ্রামের অহিদুজ্জামান নার্সারি ব্যবসার পাশাপাশি শখের বসে কমলা চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন জাতের আম, কুল, আঙুর, কমলা, ড্রাগন, স্ট্রবেরি, মালটা ও লিচু চাষে সফল হয়েছেন তিনি।
তিনি দাবি করেছেন, ভারত ও চীনে এই জাতের কমলা ব্যাপক চাষ হয়। তবে শার্শা অঞ্চলের মাটিতে উৎপাদিত রামরঙ্গন কমলা চীনসহ অন্য যেকোনো দেশ থেকে আমদানি করা কমলার চেয়ে মিষ্টি ও সুস্বাদু।
তিনি বলেছেন, ফলটির নাম রামরঙ্গন হলেও, এটি কমলার একটি ভ্যারাইটি। এই জাতের কমলা চাষে সুবিধা হচ্ছে পরিপক্ব হওয়ার পরও ফল গাছ থেকে ঝরে পড়ে না। পরিপক্বের পরও ফলটি অন্তত এক মাস গাছে রাখা যায়।
কমলাচাষি অহিদুজ্জামান জানান, ২০২২ সালে টেলিভিশনে ‘দেশের মাটিতে বিদেশি ফলের চাষ হচ্ছে’ এমন একটি প্রতিবেদন দেখেন তিনি। প্রতিবেদনটি দেখার পরে রামরঙ্গন কমলা চাষের আগ্রহ জন্মায় তার।
পরে একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুই বিঘা জমি ১০ বছরের জন্য লিজ নিয়ে ১৯৬টি রামরঙ্গন কমলার চারা রোপণ করেন তিনি। সেই সময় তিনি জানতেনও না, এই গাছে কেমন ফল হবে। প্রথম বছর কিছু ফল আসে। সেই ফল সুস্বাদু হওয়ায় তাতে কলম লাগান। পরে ওই চারা লাগালে দ্বিতীয় বছর গাছ ফলে ভরে যায়।
দুই বিঘা জমিতে কমলা চাষ করতে প্রথম বছর ৮০ হাজার টাকা খরচ করেন অহিদুজ্জামান। এক বছর পরে ফল বিক্রি করে পেয়েছেন এক লাখ ৬৬ হাজার টাকা। তবে এ বছর আট থেকে ১০ লাখ টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি।
আগামী মৌসুমে প্রতিটি গাছে দুই মণ করে কমলা পাওয়ার আশা করছেন অহিদুজ্জামান।
বাগান ঘুরে দেখা গেছে, হলুদ রঙে থোকায় থোকায় রামরঙ্গন কমলা লেবুতে ছেয়ে গেছে পুরো বাগান; যা দেখে যে কারোরই মন ভরে উঠবে। প্রায় প্রতিদিন দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত থাকে এই কমলা বাগান।
যদি বাণিজ্যিকভাবে এই কমলার চাষ করা হয়, তাহলে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। তাই বিপুল অর্থ খরচ করে দেশের বাইরে না গিয়ে তরুণ, বেকার এবং শিক্ষিত যুবকদের রামরঙ্গন কমলা চাষের পরামর্শ দেন অহিদুজ্জামান।
তার ‘জিসান নার্সারির’ মাধ্যমে কৃষি বিপ্লবের আশার কথা জানান এই চাষি। এখান থেকে রামরঙ্গন কমলার চারা তৈরি করে বিক্রিও করছেন তিনি। প্রতিটি চারা ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এখান থেকে চারা সংগ্রহ করে আশপাশের অনেকেই বাগান তৈরির পরিকল্পনাও করছেন।
ঝিকরগাছা উপজেলার ফলের ব্যাপারী আব্দুল মজিদ বলেন, দেশে চায়না জাতের রামরঙ্গন কমলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই কমলা বিদেশ থেকে আমদানি করতে প্রায় ফলের দামের সমান ভ্যাট দিতে হয়। দেশি এই ফল ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে পারলেও ভালো লাভ হয়।
রামরঙ্গন কমলা চাষের পদ্ধতি
বছরের যেকোনো সময় জমিতে চারা রোপণ করা যায়। তবে শুষ্ক মৌসুম হলে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। সামান্য কিছু পরিচর্যা করলে এ চাষে সাফল্য আসে।
রামরঙ্গন কমলা চাষে পোকামাকড়ের আক্রমণও কম। একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছ থেকে এক মৌসুমে দেড় মণ থেকে দুই মণ ফল পাওয়া সম্ভব। সাধারণত নভেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে ফল হারভেস্ট করা হয়।
এ জাতের কমলার গাছ থেকে দুই বছরের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়; যা ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত ফলন দেয় বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বলেন, এ অঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটি বিভিন্ন ফল চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এখানে দেশি বিদেশি বিভিন্ন জাতের আম, কুল, আঙুর, কমলা, ড্রাগন, স্ট্রবেরি, মাল্টা, লিচু ও চায়না লেবু (কমলা) চাষ হয়ে থাকে।
রামরঙ্গন কমলার চাষ সম্পর্কে তিনি বলেন, বেলে দোআঁশ মাটিতে জুন ও জুলাইয়ে চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। তবে ব্যাগিং চারা যেকোনো সময় সেচ দিয়ে লাগানো যায়।