Published : 30 Apr 2025, 05:36 PM
বিভেদের রাজনীতি হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে থাকা গভীর বন্ধনের ঐতিহ্য নষ্ট করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, “আমরা মুসলিম এবং হিন্দু এক বৃন্তে দুটি ফুলের মতো। বিভেদের রাজনীতি আমাদের ঐতিহ্য নষ্ট করেছে অথচ এ দেশে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে এক সময় গভীর বন্ধন ছিল।”
বুধবার সকালে ঠাকুরগাঁও শহরের কালীবাড়ি বাজারে অবস্থিত শ্রী শ্রী কালীবাড়ি মন্দির প্রাঙ্গণে শ্রী শ্রী ‘শনিদেব’-এর মন্দির ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
সামাজিক বিভাজনের বিরুদ্ধে ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “কে হিন্দু, কে মুসলমান এসব ভুলে নতুন ধারার বাংলাদেশ গড়তে হলে সবাইকে একত্রিত হতে হবে। রাজনীতি বা ধর্ম কোনোটিই মানুষের মূল পরিচয় নয়।
তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে অবস্থানকালে অনেকে প্রশ্ন করত- মুসলমান হয়ে আমরা কেন ভারতে এসেছি? তখন হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকেই বলতেন, আমরা মানুষকে হিন্দু-মুসলমান হিসেবে দেখি না। আমাদের পরিচয়- আমরা বাংলাদেশি।”
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, “আমাদের পরিবার সবসময় আপনাদের সঙ্গে ছিল, আছে এবং থাকবে। নিজের শরীরের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও আপনাদের রক্ষা করব আমরা।”
বক্তব্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “অনেকেই বলেন, আমার মধ্যে রবীন্দ্রনাথের প্রতি একটা আলাদা প্রীতি রয়েছে। আমি তাকে কেবল কবি হিসেবে নয়, একজন দার্শনিক হিসেবেও দেখি।”
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয় মন্তব্য করে ব্যক্তিগতভাবে এগুলো ব্যবহার করেন না বলে জানান তিনি।
পরে বুধবার দুপুরে শহরের মন্দিরপাড়া এলাকায় অবস্থিত সেন্ট মাদার তেরেসা স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন মির্জা ফখরুল।
মতবিনিময়ে তিনি হিংসা-প্রতিহিংসা, হানাহানি দূর করে বিভেদমুক্ত সমাজ গড়তে মানুষের মধ্যে প্রেম সৃষ্টি করার তাগিদ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “গোটা পৃথিবী জুড়ে আজকাল একটা হিংসা-প্রতিহিংসা, হানাহানি চলছে। এটা থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ হলো মানুষের মধ্যে ভালোবাসা সষ্টি করা, মানুষের মানুষে প্রেম সৃষ্টি করা, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য নতুন করে সমাজ গঠন করার একটা তাগিদ সৃষ্টি করা।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “৭১ সালে যখন আমরা বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ করি, স্বাধীনতার যুদ্ধ। তখন আমাদের প্রধান লক্ষ ছিল একটা সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরি করা। এই যে সবার মতামতের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে ওঠা, দুর্ভাগ্যক্রম এটা থেকে আমরা অনেকদিন বঞ্চিত ছিলাম।
“তবে এখন আবার সুযোগ পেয়েছি, আন্দোলনে আমাদের ছেলে মেয়েরাই বুকের তাজা রক্ত ঢেলে আমাদের সুযোগ করে দিয়েছে। একটা নতুন বাংলাদেশ তৈরি করার… নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করার।
“তাই সব সমস্যাকে দূর করে আমাদের সামনোর দিকে এগিয়ে যেতে হবে।”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুঃসময়’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত করে ফখরুল বলেন, “যদিও সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মন্থরে, সব সংগীত গেছে ইঙ্গিতে থামিয়া… তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর, এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা…। আমরা পাখা বন্ধ করব না, উড়তে থাকব, যাতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি।”
অনুষ্ঠানে স্কুলের পক্ষ থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে অভ্যর্থনাও দেওয়া হয়। তাই বক্তব্য শেষে তার হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন স্কুলের শিক্ষকরা।
এ সময় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিনসহ নেতাকর্মীরা ও সাধারণ জনগণ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড়গাঁও ও দেবীপুর ইউনিয়নে গণসংযোগ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন বিএনপির মহাসচিব।