আগের চার দাবির সঙ্গে দক্ষ ও যোগ্য পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়ে সাত দিনের জন্য কর্মবিরতি স্থগিত করেছেন শিক্ষানবিশরা।
Published : 29 Sep 2024, 03:38 PM
শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এইচএম সাইফুল ইসলাম।
রোববার বেলা ১১টার দিকে তিনি পদত্যাগ করেন বলে হাসপাতালের উপ-পরিচালক এসএম মনিরুজ্জামান শাহীন জানিয়েছেন।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে আন্দোলনরতরা প্রথমে হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন করে। এরপর তারা পরিচালকের কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত আইন-শৃংখলা বাহিনী মোতায়েনসহ বিভাগীয় কমিশনার, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতনরা বৈঠকে বসেন। পরে পদত্যাগ করেন হাসপাতালের পরিচালক এইচ এম সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “বরিশালের সন্তান আমি। বরিশালের প্রতি, এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমার আবেগ আছে, ভালোবাসা আছে। তবে এখন থেকে পরিচালকের পদে এখন থেকে আমি আর থাকবো না।”
পদত্যাগ পত্রে এই চিকিৎসক লিখেছেন, “আমি পরিচালক হিসেবে এই হাসপাতাল পরিচালনায় অপরাগ বিধায় আমি স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে অত্র হাসপাতালের পরিচালনার দায়িত্ব থেকে বিরত আছি। অবিলম্বে আমার দায়িত্ব হস্তান্তর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করছি।”
হাসপাতালের উপ-পরিচালক এসএম মনিরুজ্জামান শাহীন জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের শিশু মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এক রোগীর মৃত্যু হয়। তখন শিশুর স্বজনরা এক চিকিৎসককে শারিরীকভাবে আঘাত করেছে। অন্যান্য চিকিৎসককে হুমকি দিয়েছে।
“যার কারণে শনিবার সকাল থেকে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা ধর্মঘটের ডাক দেয়। তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার না করায় রোববার বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা করা হয়।
“সেখানে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা পরিচালকের পদত্যাগ দাবি করে। চিকিৎসকদের দাবির প্রেক্ষিতে পরিচালক পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ পত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দিবে সেটা করা হবে।”
বিক্ষুব্ধ শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের অভিযোগ, গত ৩ অগাস্ট পরিচালক সাইফুল ইসলামসহ তার অনুসারীরা স্বৈরাচারের পক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। তার বিগত কর্মকাণ্ডের জন্য আগেই তার পদত্যাগ দাবি করা উচিত ছিল।
এছাড়াও পরিচালক নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত দাবি করে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা বলেন, তিনি হাসপাতালের প্রত্যেক ক্ষেত্রেই অনিয়ম ও দুর্নীতি করে মেডিকেলের চিকিৎসা ব্যবস্থা বাণিজ্য নির্ভর করে তুলেছেন। মেডিকেলের সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, টাকা লুটপাট করা, সৎ-যোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানাভাবে হয়রানী করেন তিনি।
এ বিষয়ে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক আকিব জানান, তাদের দাবি মেনে পরিচালক পদত্যাগ করেছেন। তবে চার দাবিতে শুরু করা কর্মবিরতির সঙ্গে আরো একদফা- দক্ষ ও যোগ্য পরিচালক নিয়োগ দেয়ার দাবি জানিয়ে সাত দিনের জন্য তাদের কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়েছে।
তাদের দাবিগুলো হল- চিকিৎসকদের ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তার ব্যবস্থা, রোগীর চিকিৎসা সেবায় বেড অনুযায়ী ভর্তির ব্যবস্থা ও অনতিবিলম্বে চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন।
আকিব বলেন, “আমাদের দাবি পূরণের সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছি। এর মধ্যে দাবি পূরণ করা না হলে আবারো কর্মবিরতি পালন করা হবে।”
পরে রোববার বিকাল ৩টা থেকে কাজে যোগদান করেন শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা।
এদিকে চিকিৎসকের ওপর ঘটনায় হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার বাদী হয়ে এক নারীকে আসামিকে করে মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, “আসামিকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছেন।”