“ধারদেনা করে আড়াই লাখ টাকা খরচ করে চিকিৎসা চালানো হয়েছে। বাকি চিকিৎসা কীভাবে চলবে এটা ভেবে আমরা দিশেহারা।”
Published : 17 Oct 2024, 10:19 AM
ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে বাম চোখ হারিয়েছে সাহেদুল ইসলাম। তার মাথা, মুখ ও বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে অন্তত তিন শতাধিক ছররা গুলি লেগেছিল।
৫ অগাস্টের পর ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালসহ (সিএমএইচ) বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও একটি গুলিও বের করা যায়নি। তাকে দেশের বাইরে নিয়ে গুলি বের করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে অর্থের অভাবে সেটি সম্ভব না হওয়ায় চিকিৎসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে তার পরিবার।
ফেনীর ছাগলনাইয়া পৌরসভার দক্ষিণ যশপুর মির্জাপাড়ার নুর আলমের ছেলে সাহেদুল দুই ভাই আর দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট। নুর আলম হৃদরোগ ও অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়ে প্রবাস থেকে দেশে ফিরে অসুস্থ অবস্থায় বেকার জীবনযাপন করছেন।
ফলে বড় ভাই তৌহিদুল ইসলামের আয়ে কোনো রকমে সংসার চলে সাহেদুলদের। এরই মধ্যে চিকিৎসা খরচ চালাতে ধারদেনা করতে হয়েছে; নতুন করে খরচ চালাতে হিমশিম অবস্থা পরিবারটির। এ অবস্থায় সরকারি সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।
সাহেদুলের বোন ফাহিমা আক্তার বলছিলেন, ৫ অগাস্ট ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার পৌর শহরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেয় তার ভাই। এক পর্যায়ে সেখানে সংঘর্ষ বেঁধে গেলে ছুটোছুটির এক পর্যায়ে মাটিতে পড়ে যায় সাহেদুল। পরে দাঁড়ানোর সময় তার চোখ, মুখ, মাথা ও বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কয়েকশ ছররা গুলি এসে লাগে।
সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে ফেনী জেনারেল হাসপাতাল হয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গত দুই মাসে পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতাল, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতাল ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে সাহেদুলকে চিকিৎসা দেওয়া হয় বলে জানান ফাহিমা।
তিনি বলেন, “পাহাড়তলী চক্ষু হাপসাতালের চিকিৎসকরা গুলি বের করতে পারেননি। আমার ভাইয়ের বাম চোখে এখনও দুটি গুলি রয়েছে। এ ছাড়া মাথায় ১৯৪টি, দুই হাতে শতাধিক, বুকে তিন-চারটাসহ তিন শতাধিক গুলি রয়ে গেছে। সিএমএইচ থেকে এক সপ্তাহের ছুটি দেওয়ায় সাহেদুলকে বাড়ি নিয়ে এসেছি। এরপর পূজার ছুটিসহ বিভিন্ন কারণে ১৫ দিনেও তাকে আবার সিএমএইচএ নেওয়া হয়নি।”
সাহেদুলের বাবা নুর আলম বলেন, “দেশে চিকিৎসা অনুযায়ী তার শরীর থেকে গুলি বের করতে গেলে ব্রেইন এমনকি জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। ছেলের সুচিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত থাইল্যান্ড নেওয়া প্রয়োজন।”
টাকা জোগাড় হয়েছে কী-না চাইলে তিনি বলেন, “শুরুর দিকে সরকারিভাবে ‘জুলাই ফাউন্ডেশন’ থেকে এক লাখ টাকা সহায়তা পেয়েছিলাম। কিন্তু এরইমধ্যে ধারদেনা করে আড়াই লাখ টাকা খরচ করে চিকিৎসা চালানো হয়েছে। বাকি চিকিৎসা কীভাবে চলবে এটা ভেবে আমরা দিশেহারা।
“এখন চিকিৎসা করানোর জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। সরকারি সহযোগিতা পেলে দেশের বাইরে নিয়ে ছেলের উন্নত চিকিৎসা করানো যেত।”