বিএনপি নেতা নূরের লোকজন আরেক নেতা আকলুকে আটক করে পেটালে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
Published : 06 Sep 2024, 08:48 PM
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরে সংঘর্ষে এক বিএনপি নেতার মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত চারজন।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের নাশু মার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. নাজমুস সাকিব খান জানান।
নিহত ৬০ বছর বয়সী এএসএম এমদাদুল হক আকলু মোক্তারপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এবং রামচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।
আহতরা হলেন- রাথুরা গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে জহিরুল ইসলাম (৩৫), ফাইজ উদ্দিন শেখের ছেলে মনজু শেখ (৬৫), রামচন্দ্রপুর গ্রামের ইসমাইল শিকদারের ছেলে সীমান্ত শিকদার ইমন (২৪) এবং বজলুর সরকারের ছেলে মেহিদী হাসান সরকার (৩১)।
তাদের মধ্যে জহিরুল ও মনজুকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আর ইমন ও মেহেদীকে দেওয়া হয়েছে প্রাথমিক চিকিৎসা।
নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, গত ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনে ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এমদাদুল হক আকলুর পক্ষের লোকজনের মোক্তারপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভপাতি শরিফুল ইসলাম তোরণের সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আখতারুজ্জামানের (ট্রাক) পক্ষে মৌন সমর্থন ছিলো। অন্যদিকে প্রতিপক্ষ মোক্তারপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নূর মোহাম্মদের অণুসারীরা সরাসরি সমর্থন দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেহের আফরোজ চুমকিকে (নৌকা)।
এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। সম্প্রতি ক্ষমতার পালা বদলের পর এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যেই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছিলো। বৃহস্পতিবার আকলুর পক্ষের লোকজন নূর মোহাম্মদের পক্ষকে ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ আখ্যা দিয়ে এলাকায় প্রচার করে। এর জেরে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে আকলুর নেতৃত্বে স্থানীয় নেতাকর্মীরা ৮-১০টি মোটরসাইকেল নিয়ে এলাকায় মহড়া দিয়ে মিছিল করে।
এক পর্যায়ে তারা নাশু মার্কেট এলাকায় অবস্থান নিলে নূরের অনুসারী প্রায় ৪০-৫০ জন নারী-পুরুষ মিলে তাদের ধাওয়া দেয়। ওই সময় নূরের লোকজন আকলুকে আটক করে পেটালে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ গিয়ে আকলুর লাশ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
এ ঘটনায় আকলুর দলের যে চারজন আহত হয়েছেন, তারা আকলুকে রক্ষা করতে গিয়েছিলেন। অপরদিকে ঘটনার পর বেলা ১২টার দিকে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম তোরণের বাড়ি ও অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
মোক্তারপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মজনু শেখ বলেন, “দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এমদাদুল হক আকলু নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়িত বলে জানতে পেরেছি।”
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুস সাকিব বলেন, “এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় ওই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। অবশ্য এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।”