বিকাল পর্যন্ত যমুনা সেতু পশ্চিম মহাসড়কে সিরাজগঞ্জ এলাকার কড্ডার মোড়, মুলিবাড়ি চেকপোস্ট, ঝাঐলওভার ব্রিজ, নলকা সেতু ও হাটিকুমরুল গোলচত্বরের কোথাও যানজট দেখা যায়নি।
Published : 29 Mar 2025, 05:53 PM
ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে মহাসড়কে বাড়ছে যানবাহনের চাপ। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ঈদযাত্রার চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। ঢাকা থেকে উত্তরের পথে যানবাহনের চাপ থাকলেও নেই যানজট।
প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তা ও প্রযুক্তির সঠিক প্রয়োগ এবার উত্তরের পথে ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষেকে স্বস্তি দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন।
সেনাবাহিনী, র্যাব, হাইওয়ে পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যরা রাতদিন মহাসড়কে নিরাপত্তা দিচ্ছেন। ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রোন ও সিসিটিভি ক্যামেরা। মহাসড়কের পাশে বসানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। প্রস্তত রাখা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স, রেকার ও ফায়ার সার্ভিস। যমুনা সেতুতে বাড়ানো হয়েছে লেন। যানবাহনের চাপ বাড়ায় সেতুর আয়ও বেড়েছে কয়েকগুণ।
শনিবার বিকাল পর্যন্ত যমুনা সেতু পশ্চিম মহাসড়কে যানজট প্রবণ এলাকা কড্ডার মোড়, মুলিবাড়ি চেকপোস্ট, ঝাঐলওভার ব্রিজ, নলকা সেতু, হাটিকুমরুল গোলচত্বর ও চান্দাইকোনা কোথাও যানজট দেখা যায়নি।
তবে প্রতিনিয়ত মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লেও ভোগান্তি ছাড়াই স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছেন উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ২২ জেলার মানুষ। যাত্রীবাহী যানের পাশাপাশি ট্রাক, পিকআপ ও মোটরসাইকেলেও ফিরছেন ঘরমুখো মানুষ।
যমুনা সেতু পার হওয়ার পর হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে একটি চারলেন মহাসড়ক। মহাসড়কের এই অংশে যানবাহনের সবচেয়ে বেশি চাপ থাকে। এরপর হাটিকুমরুল গোলচত্বরে গিয়ে যানবাহনগুলো তিন ভাগে পাবনা, রাজশাহী ও বগুড়া মহাসড়কে চলে যায়।
এই তিন মহাসড়কের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যানবাহন চলাচল করে ঢাকা-বগুড়া-রংপুরমুখী মহাসড়কে। মহাসড়কে প্রায় ১১০০ পুলিশ সদস্য পোশাক ও সাদা পোশাকে মাঠে রয়েছেন। এর মধ্যে জেলা পুলিশ ৬৪৮, হাইওয়ে পুলিশ ৩২২ এবং এপিবিএনয়ের ১০০ সদস্য রয়েছেন।
এ ছাড়া র্যাব, গোয়েন্দা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা মহাসড়কের সার্বিক নিরাপত্তা দিচ্ছেন। রয়েছে মোবাইল টিম ও মোটরসাইকেল টহল। ভোগান্তি এড়াতে পার্শ্ব রাস্তাগুলোর প্রবেশ মুখের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি কিংবা ছিনতাইয়ের কোনো ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ঘটেনি বড় কোনো দুর্ঘটনা।
সাসেক-২ প্রকল্প পরিচালক ওয়ালিউর রহমান বলেন, সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে কোনো ভোগান্তির শঙ্কা নেই। দুর্ভোগ এড়াতে যমুনা সেতু পশ্চিম সংযোগ সহাসড়কের ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে নির্মিত ১১টি উড়াল সেতুর মধ্যে নয়টি ও হাটিকুমরুল গোলচত্বরে ইন্টারচেঞ্জের সার্ভিস সড়ক খুলে দেওয়া হয়েছে।
বগুড়া সেনানিবাসের ১১ পদাতিক ডিভিশনের লেফটেন্যান্ট কর্নেল জুনায়েদ বিন কবির বলেন, যমুনা সেতু থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর হয়ে ও চান্দাইকোনা পর্যন্ত মহাসড়কে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা কাজ করছেন। সন্দেহজনক যানবাহন দেখলেই চালানো হচ্ছে তল্লাশি।
এ ছাড়া মহাসড়কে যাতে কোনো দুর্ভোগের সৃষ্টি না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন বলে জানান তিনি।
হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়নের পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি) শহিদ উল্লাহ বলেন, “ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তিনগুণ বেশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ড্রোন ক্যামেরায় দিনে ও রাতে মহাসড়কের সবকিছু মনিটরিং করা হচ্ছে।
“এ ছাড়া চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইরোধে মহাসড়কের ১৮টি পয়েন্টে গোপন সার্ভিলেন্স সিস্টেম চালু করা হয়েছে। হাটিকুমরুল গোলচত্বরে স্থাপিত ওয়াচ টাওয়ার থেকে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিনটি রেকার ও দুটি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।”
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন বলেন, “ঈদযাত্রায় মহাসড়ক দিয়ে নির্বিঘ্নে যানবাহন ও ঘরমুখো মানুষ চলাচল করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টা মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছেন। মোবাইল টিমের পাশাপাশি মোটরসাইকেল টিম টহল দিচ্ছে।
“আশা করছি ঈদযাত্রায় কোনও ভোগান্তি হবে না। ঈদ পালন শেষে মানুষ কর্মস্থলে ফেরার সময়ও অন্তত তিন দিন পুলিশ সদস্যরা একইভাবে মহাসড়কে থাকবেন।”
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা সেতুতে সর্বোচ্চ টোল আদায় হয়েছে বলে জানান যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল।
তিনি বলেন, টোল আদায়ের জন্য আগের ১২টির স্থলে আরও ছয়টি বুথ বসানো হয়েছে। ১৪টি বুথ দিয়ে বাস, ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন এবং চারটি দিয়ে মোটরসাইকেল যাতায়াত করছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় এ সেতু দিয়ে ৪৮ হাজারের বেশি যানবাহন পারাপার হয়েছে; যা থেকে তিন কোটি ৩৮ লাখ টাকার বেশি টোল আদায় হয়েছে বলে জানান প্রকৌশলী পাভেল।