ড্রেজারের চিফ মাস্টার জানান, ঘণ্টায় ঘণ্টায় যন্ত্র বন্ধ করে আবর্জনা পরিষ্কার করায় তিনদিনের কাজ ১২ দিনেও শেষ হচ্ছে না।
Published : 10 Jan 2023, 04:18 PM
প্লাস্টিক বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাচ্ছে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর তলদেশ। যার কারণে বরিশাল নৌ-বন্দর এলাকায় এই নদীর ড্রেজিং বা খনন কাজে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।
নগরীর বিভিন্ন ড্রেন ও লঞ্চ থেকে পলিথিন-প্লাস্টিকের বর্জ্য ফেলা বন্ধ না হলে নদী ড্রেজিং করা দুরুহ হয়ে পড়বে। এতে কীর্তনখোলা নাব্যতা হারাবে বলে আশঙ্কার কথা জানান বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নাব্য সঙ্কট থাকায় কীর্তনখোলা নদীর বরিশাল নৌ-বন্দর এলাকায় খনন কাজ চলছে। গত ৪ ডিসেম্বর খনন কাজ শুরু হয়েছে। ভাটির সময় নৌ-বন্দর এলাকায় যাতে ১৪ ফুট গভীরতা থাকে, সেই লক্ষ্য নিয়ে আপাতত এক লাখ ঘন মিটার বালু উত্তোলন করা হবে।
প্রকৌশলী মিজানুর বলেন, “কিন্তু নদীর তলদেশে জমা হওয়া পলিথিন ও প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্যের কারণে খনন কাজ বিলম্বিত হচ্ছে।প্লাস্টিকের কারণে একটু পর পর খননযন্ত্র আটকে যায়। খনন যন্ত্র পরিস্কার করে আবারও কাজ শুরু করতে হয়। এ কারণে খনন কাজ ব্যাহত হচ্ছে।”
নগরীর বিভিন্ন ড্রেন থেকে কীর্তনখোলা নদীতে বর্জ্য বের হওয়া বন্ধ করার জন্য সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সুয়ারেজ প্লান্ট ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে কীর্তনখোলা নদীতে খনন কাজ করা যাবে না বলে জানিয়েছেন এই প্রকৌশলী।
তিনি বলেন, “আপদকালীন ব্যবস্থা হিসেবে কীর্তনখোলা নদীতে নগরীর খাল ও ড্রেনের প্রবেশমুখে নেট দিয়ে প্লাস্টিক ও পলিথিনসহ বর্জ্য প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। সেগুলো নিয়মিত পরিস্কার করলে এ থেকে কিছুটা রক্ষা হবে।“
বিআইডব্লিউটিএর বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, খাল এবং ড্রেনের মাধ্যমে নগরীর সব বর্জ্যই কীর্তনখোলায় পড়ে। সেগুলো এসে নদীর তলদেশ ভরাট করে ফেলছে। নদীর ভরাট ও দূষণ প্রতিরোধ করতে হলে নগরীর খাল সংস্কার ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
সরেজমিনে মঙ্গলবার বরিশাল নৌ-বন্দরে গিয়ে দেখা গেছে পলিথিন, প্লাস্টিকের বিভিন্ন ব্যাগ, ছেড়া জালসহ বহুবিধ ময়লা আবর্জনার স্তুপে নদী খনন কাজের যন্ত্র আটকে যাচ্ছে। নৌকা নিয়ে তিন-চার জন শ্রমিক কাঁচি দিয়ে কেটে কেটে যন্ত্র পরিষ্কার করছে।
পরে সেই আবর্জনা সদর উপজেলার চরকাউয়ায় ভাঙ্গনপ্রবণ এলাকায় ফেলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ড্রেজারের চিফ মাস্টার মো. রফিকুল ইসলাম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় যন্ত্র বন্ধ করতে হচ্ছে। ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে আবর্জনা পরিষ্কার করতে। এতে করে তিনদিনের কাজ ১২ দিনেও শেষ হচ্ছে না।”
রফিক আরও জানান, বেশিরভাগ ময়লাই পলিথিন ও প্লাস্টিকের বিভিন্ন বস্তু। এগুলো পচনশীল না হওয়ার কারণে নদীর ভিতরে জট পাকানো অবস্থায় পড়ে থাকে, এরসঙ্গে পলিযুক্ত হয়ে মোটা আস্তরণ তৈরি করছে।
অভ্যন্তরীণ রুটের এমভি লক্ষীপুর লঞ্চের সুকানি মো. মনির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বর্তমানে ঘাট এলাকায় নদীর পানির গভীরতা সাড়ে পাঁচ ফুট। এতে লঞ্চ ঘাটে ভেড়ানো কষ্টসাধ্য। খনন করা হলে আর সমস্যা থাকবে না।”
বরিশাল-ঢাকা রুটের ডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের মাস্টার আলমাস দেওয়ান বলেন, শীতের সময়ে এমনিতেই সব নদীতে নাব্যতা কম থাকে। নদী শাসনের এটাই উপযুক্ত সময়।
“প্রতিবছর এই খনন হয়। কিন্তু এটা পরিকল্পিত হওয়া উচিত। মাস দুয়েক ঠিক থাকে, তারপর আবারও একই অবস্থা। এর স্থায়ী সমাধান হওয়া উচিত। প্রতিবার খননে কত টাকার ক্ষতি হয় ভাবা উচিত।”
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)র জেলা সমন্বয়ক ও নদী গবেষক রফিকুল আলম বলেন, দ্রুত এ অবস্থা ঠেকানো না গেলে কীর্তনখোলাও ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর মতোই হবে। এতে নদীর জীববৈচিত্র্যই শুধু ক্ষতিগ্রস্থ হবে তা নয়, বরং দু-এক বছরে মাছ শূন্য হয়ে যাবে কীর্তনখোলা নদী।
তিনি বলেন, “এভাবে খননের আগে ওয়াটার ক্যামেরা ব্যবহার করে নদীর এসব ময়লা পরিষ্কার করা জরুরি। তা না হলে এ ড্রেজিং কোনো কাজে আসবে না।”
তিনি এ সময় বরিশাল বন্দর সংশ্লিষ্ট নগরীর রসুলপুর এলাকায় জেগে ওঠা দৃশ্যমান চর গভীরভাবে কেটে চরকাউয়া অংশের ভাঙন ঠেকানোর পরামর্শও দেন।