নাঙ্গলকোট হাসপাতালে ৪০% জনবল নেই, ফায়দা লুটছে ক্লিনিক

কর্তৃপক্ষ জানায়, লোকবল থাকার কথা ১৫৯ জন, এর মধ্যে ৬৬টি পদই শূন্য হয়ে পড়ে আছে।

আবদুর রহমানকুমিল্লা প্রতিনিধি
Published : 22 April 2023, 01:04 PM
Updated : 22 April 2023, 01:04 PM

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষের স্বাস্থ্যসেবার ভরসাস্থল ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিকিৎসার জন্য আধুনিক প্রায় সব ধরনের যন্ত্রপাতি রয়েছে। কিন্তু জনবল সঙ্কট আর অবহেলার কারণে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। 

৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির ৪০ শতাংশ জনবল না থাকায় রোগীদের পরীক্ষা-নীরিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি মধ্যে পড়তে হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, এ সুযোগে ফায়দা লুটছে উপজেলা সদরে থাকা মানহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার। 

নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দেবদাস দেব বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে মোট লোকবল থাকার কথা ১৫৯ জন। এর মধ্যে ৬৬টি পদই বছরের পর বছর ধরে শূন্য হয়ে পড়ে আছে। 

“লোকবল সঙ্কটের বিষয়টি প্রতিমাসেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ বন্ধ। যার কারণে এসব সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তবে লোকজনের চরম সঙ্কটের পরও আমরা জোড়াতালি দিয়ে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছি।” 

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানায়, একটি পৌরসভা ও ১৬টি ইউনিয়নের জনগোষ্ঠীকে সঠিক স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার জন্য ২০০৫ সালে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ওই সময় প্রায় আট কোটি টাকা ব্যয়ে একটি হাসপাতাল ভবন ও কয়েকটি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়।

২০০৫ সালের শেষের দিকে ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু ওই সময়েও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিনটি চালু করা যায়নি লোকবলসহ নানান সমস্যার কারণে। 

ছয় মাস আগে নতুন একটি মেশিন স্থাপন করা হলে অপারেটর না থাকায় গত মার্চ মাসের শুরুতে লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে একজন অপারেটর এনে সপ্তাহে মাত্র দুইদিন এটি চালু রাখা হয়েছে।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা হুমায়ুন কবির, মরিয়ম আক্তার, আবদুল কুদ্দুসসহ অন্তত ১০ জন রোগী জানান, অন্তঃসত্ত্বা নারী, শরীরে আঘাতপ্রাপ্ত বা হাড়ভাঙা রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এলেও গত ২০ বছরে তারা এক্স-রে কিংবা ইসিজি সেবা পায়নি। 

সম্প্রতি এগুলো চালু হলেও এখনও কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না। যার কারণে বাধ্য হয়ে হাসপাতালের আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালে গিয়ে এসব পরীক্ষা করাতে হয় রোগীদের। 

আর এই সুযোগে রোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় ক্লিনিক ব্যবসায়ী ও দালাল চক্র। 

লাবনী আক্তার নামে এক রোগী বলেন, “দাঁতের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে এসে শুনি দীর্ঘদিন ধরে এই বিভাগে ডাক্তার নেই। সরকার জনগণের জন্য হাসপাতাল করেছে, কিন্তু ডাক্তার দেয়নি- এটা কেমন কথা! আমরা দ্রুত এখানে সব সেবা চাই।” 

নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দেবদাস দেব বলেন, “আমাদের হাসপাতালে বর্তমানে সব আধুনিক সেবাই পাচ্ছেন রোগীরা। এক্স-রে মেশিনটি বর্তমানে সপ্তাহে দুইদিন চালু থাকলেও শিগগিরই এটি সপ্তাহে ছয় দিন চালু রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।” 

হাসপাতালে কর্মরতরা বলছেন, এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে জনবল সঙ্কট। যার কারণে অনেক সময় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও রোগীদের সঠিক সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। 

তবে সবচেয়ে বেশি সংকট হচ্ছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের। তাই রোগীদের সমস্যা আরও প্রকট হচ্ছে। 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, ৬৬টি শূন্য পদের মধ্যে রয়েছে- জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) একজন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু) একজন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি) একজন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি) একজন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থোসার্জারি) একজন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন) একজন, মেডিকেল অফিসার একজন, মেডিকেল অফিসার (ইনডোর) একজন, মেডিকেল অফিসার (ইউনানি) একজন, সহকারী ডেন্টাল সার্জন একজন, সিনিয়র স্টাফ নার্স দুইজন, সহকারী নার্স একজন, প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক একজন, হিসাবরক্ষক একজন, ক্যাশিয়ার একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর তিনজন, পরিসখ্যানবিদ একজন, ফার্মাসিস্ট দুইজন, মেডিকেল টেকনিশিয়ান (ল্যাব) দুইজন, মেডিকেল টেকনিশিয়ান (রেডিওলজি) একজন, মেডিকেল টেকনিশিয়ান (ডেন্টাল) একজন, স্বাস্থ্য পরিদর্শক দুইজন, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক একজন, স্বাস্থ্য সহকারী ১৯ জন, কার্ডিওগ্রাফার একজন, মেডিকেল টেকনিশিয়ান (ইসিজি) একজন, জুনিয়র মেকানিক একজন, ওটি বয় একজন, অফিস সহায়ক তিনজন, ওয়ার্ড বয় দুইজন, বাবুর্চি একজন, সহকারী বাবুর্চি একজন, আয়া একজন, পরিচ্ছন্নকর্মী তিনজন, দারোয়ান দুইজন এবং ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট একজন।