অনেকেই কৌতুহল নিয়ে বাগান দেখতে আসেন। যাওয়ার সময় চারা ও ফল কিনে নিয়ে যান তারা।
Published : 14 Dec 2024, 11:18 PM
যশোরের শার্শা উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে আফ্রিকান জাতের ননি ফলের চাষ শুরু হয়েছে।
নানা রোগের ওষুধ হিসেবে এ ফলের চাষ করে প্রশংসা পাচ্ছেন উপজেলার বেনাপোল পৌর এলাকার নারায়ণপুর গ্রামের চাষি ইস্রাফিল হোসেন।
তিনি বলেন, “ইউটিউবে একটি প্রতিবেদন দেখি ‘দেশের মাটিতে বিদেশি ননি ফলের চাষ হচ্ছে।’ প্রতিবেদনটি দেখার পর সেখান থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ ফলের চাষ শুরু করেছি।”
শার্শা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বলেন, ননি ফলের বৈজ্ঞানিক নাম ‘মরিন্ডাসিট্রিফলিয়া’। এটি আফ্রিকা অঞ্চলের একটি ফল। তবে ফলটি ক্রান্তীয় অঞ্চল অর্থাৎ ভারত উপমহাদেশেও জন্মায়।
ননি গাছে বারো মাস ফল ধরে। বর্তমানে এ ফল বাজারে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এর চারাও ৫০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি করেন বলে জানান ইস্রাফিল।
ননি গাছের পাতা ও ফল মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় দাবি করে তিনি বলেন, “যদিও এখন পর্যন্ত খুব কম মানুষের কাছেই এ ফলটি পরিচিত।”
চাষি ইস্রাফিল হোসেন আরও বলেন, শার্শা উপজেলায় বেনাপোল পৌরসভার নারানপুর গ্রামে দুই বছর আগে ১৫০টি চারা দিয়ে ১০ শতক জমিতে বাগান তৈরি করেন তিনি।
বাগানের এক পাশে ননি গাছের নার্সারিও গড়ে তুলেছেন।
বাকি অংশে ৬ ফুট দূরত্ব রেখে গাছ রোপন করেছেন। ছোট-বড় মিলিয়ে তার বাগারে ১৫০টি গাছ আছে। এ বছর কম বেশি সব গাছে ফল ধরেছে।
বাগনটি সুরক্ষিত রাখতে তিনি পুরো জায়গায় কাটাতারের বেড়া দিয়েছেন।
অনেকেই কৌতুহল নিয়ে তার এই বাগান দেখতে আসেন। যাওয়ার সময় গাছের চারা ও ফল কিনে নিয়ে যান তারা।
ইস্রাফিল হোসেন বলেন, “আমি অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি, ননি ফল ও গাছের গুণাগুণের কথা। তারপর আমি বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে ১৫০টি চারা কিনে আনি। সেখান থেকেই আমার বাগান এ পর্যন্ত হয়েছে।”
“এই ফল সম্পর্কে মানুষ খুব একটা জানে না। তাই বেনাপোলে তেমন বিক্রি হয় না; লোকমুখে শুনে কিছু মানুষ আসেন। এই ফলের অনেক গুণ থাকায় এই এলাকাসহ আশপাশের এলাকা থেকে অনেকেই আমার বাগান দেখতে আসে।”
এ ফলের গুণাগুণ সম্পর্কে মানুষ জানতে পারলে প্রচুর চাহিদা তৈরি হবে বলে মনে করেন ইস্রাফিল।
বাগান দেখতে আসা বিল্লাল হোসেন বলেন, “আমি এই ফলের নাম আগে কখনো শুনিনি। ইন্টারনেট থেকে জানতে পারি, এই ফল ও গাছের পাতা গ্যাস্ট্রিক ও চর্ম রোগের কাজ করে, তাই আগ্রহ নিয়ে বাগান দেখতে এসেছি। যাওয়ার সময় একটা গাছ ও কিছু ফল কিনে নিয়ে যাব।”
শফিকুল ইসলাম নামের আরেকজন বলেন, “এই ফল সম্পর্কে জেনে পাশের এলাকা থেকে এসেছি। যশোরের কোথাও এই গাছের খোঁজ পাইনি।”
ইস্রাফিল বলেন, বাগান করতে তার খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকা। আর খরচ নেই। শুধু সার-ওষুধে হাজার দুয়েক টাকা খরচ হবে বছরে। তাছাড়া আর খরচ লাগবে না। ২০ বছর পর্যন্ত আর কোনো বিনিয়াগ ছাড়াই আয় করা যাবে।
তিনি বলেন, শীতে এ ফলের দাম বেশি থাকে। এ বছর প্রায় ৫ লাখ টাকা আয় হলে সামনের বছর ১০ লাখ টাকার ফল বিক্রি করতে পারবেন। গাছ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফলও বাড়বে।
নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে ইস্রাফিল বলেন, “ভেজষ উদ্ভিদ চাষ করে ব্যবসায় সাফল্যের পাশাপাশি মানুষের উপকারও হয়। যেকেউ ননি ফলের চাষসহ ওষুধি গুণসম্পন্ন ভেজষ উদ্ভিদ চাষে এগিয়ে এলে আমি তাকে সার্বিক সহযোগিতা করব।
“দেশের যেকোনো প্রান্তে যেকেউ যদি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, অবশ্যই তাকে উদ্বুদ্ধ করব। তারা যেন লাভবান হয় সেজন্য সহযোগিতা করব। এটা তো একটা ব্যবসা। মানুষের উপকার হবে, ব্যবসাও হবে।”
শার্শা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বলেন, ইস্রাফিল হোসেন আমাদের ভালো উদ্যোক্তা। তার আবাদ ননি ফল গাছে এবার প্রচুর ফল ধরেছে। এই ফল বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এই ফল খাওয়ার পদ্ধতি খুব সহজ। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারাও এগুলো কালেকশন করে খাচ্ছে। গুণাগুণের দিক থেকে আমরা জানতে পেরেছি, এই ফল ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। পুরাতন বাতের ব্যথা সারাতে এই গাছের ফল ও পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।”
“আমাদের দেশে ভেজষ গাছ কমে যাচ্ছে। নিজেদের স্বার্থে ভেজষ গাছ লাগানো দরকার। ভেজষ উদ্ভিদে ইস্রাফিল হোসেনের মত উদ্যোক্তারা এগিয়ে এসেছে।”
ইস্রাফিল হোসেনের মত উদ্যোক্তা তৈরি হলে সহযোগিতা করা হবে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা জানান।