কৃষক খয়বর হোসেন ৩ বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ ধান আবাদ করেছিলেন; কিন্তু এক ছটাক ফসলও তুলতে পারেননি বলে জানান।
Published : 02 May 2023, 07:47 PM
ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ধানের শিষ শুকিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার অনেক কৃষক। চাষ করা বোরো ধানের অধিকাংশ চিটা হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে স্থানীয় আগাম জাতের প্রায় সব ধানই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ব্রি-২৮ ও ব্রি-৮১ জাতের বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগের প্রকোপ দেখা দেওয়ায় ক্ষতির মাত্রা বেশি।
জমিতে ব্লাস্ট রোগের প্রকোপ দেখা দিলেও উপজেলা কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্ট কারো দেখা বা পরামর্শ পাননি বলে অভিযোগ কৃষকদের।
উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, চলতি বোরো মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন। উপজেলায় মোট ১৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে ব্রি-২৮ এবং ৪০ হেক্টর জমিতে ব্রি-৮১ জাত আবাদ করা হয়েছে।
কৃষকরা বলছেন, মৌসুমের প্রথম দিকে ব্রি-২৮ ও ব্রি-৮১ জাতের ধানের ফলন ভালো হয়েছিল। কিন্তু দাঁড়াতে শুরু করার পরপরই হঠাৎ করেই শুকিয়ে যেতে থাকে শিষ।
উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের হবিবুল্লাপুর গ্রামের বর্গাচাষি আমির হোসেন প্রামানিক বলেন, চলতি মৌসুমে ৩০ হাজার টাকা ঋণ করে সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান আবাদ করেছেন তিনি। পাকা ধান কাটার পর দেখতে পান, ব্লাস্ট রোগে ৯০ শতাংশ ধানই চিটা হয়ে গেছে।
এখন দেনা শোধ করবেন কীভাবে আর সারা বছরের খাবরের যোগানই বা কোথা থেকে আসবে সেই চিন্তায় দিশেহারা তিনি।
একই গ্রামের আছির উদ্দিন আকন্দ দেড় বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান আবাদ করেছিলেন। প্রথমে ধানের শিষ বের হলে প্রতিবেশীরা বলেছিলেন এবার সবার চাইতে ভালো ধান হবে তার জমিতে। কিন্তু পরে দেখা গেল ধানের সব শিষ চিটা হয়ে গেল।
আরেক কৃষক আইজল আকন্দ জানান, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) ডিলারদের কাছ থেকে বীজ কিনে ৪০ শতক জমিতে ব্রি-৮১ জাতের ধান আবাদ করেছিলেন। সব ধান চিটা হয়ে গেছে। অথচ এই দুঃসময়ে কৃষি বিভাগের কোনো লোকজনের দেখা মেলেনি।
উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাঙ্গামোড় গ্রামের খয়বর হোসেন বলেন, তিনি ৩ বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান আবাদ করেন। শুরুতে ধান গাছ ভালো হলেও ব্লাস্ট রোগের কারণে এক ছটাক ফসলও ঘরে তোলা যায়নি।
নলডাঙ্গা ইউনয়নের শ্রীরামপুর হাজিপাড়া গ্রামের ছাদেক আলী মোল্লা দুই বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ ধানের আবাদ করেছিলেন। রসুলপুর ইউনয়নের মধ্যপাড়া গ্রামের সফিউল ইসলাম ৩৬ শতক জমিতে ও একই ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামের আব্দুল মান্নান ৩৫ শতক জমিতে ব্রি-২৮ ধানের আবাদ করেছিলেন।
এদের প্রত্যেকের অবস্থাই এক। মুনাফা করা তো দূরের কথা এখন লোকসান কীভাবে সামাল দেবেন সেটাই বড় দুশ্চিন্তা তাদের।
হঠাৎ করেই ব্লাস্ট রোগের প্রকোপ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়ন ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শেখ শাদী বলেন আবহাওয়ার কথা।
তিনি বলেন, “চলতি মৌসুমে দিনে গরম এবং রাতে ঠাণ্ডা ছিল। মাঝে মাঝে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি, রাতে কুয়াশা ও দিনে তীব্র গরমের কারণে ব্রি-২৮ ও ব্রি-৮১ জাতের ধানে নেক ব্লাস্ট রোগের সৃষ্টি হয়।”
এ বিষয়ে কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল আলম বসুনিয়া।
তিনি বলেন, “চলতি বছর ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ না করতে স্থানীয় কৃষকদের বলা হয়েছিল। কিন্তু কৃষকরা পরামর্শ অনুযায়ী কাজ না করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।”
একই কথা বলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মতিউল আলম।
তিনি বলেন, “কোনো ফসলের বীজ দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তাই কৃষি বিভাগ থেকে ব্রি-২৮ জাতের ধান আবাদ না করার জন্য কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল।”
তিনি জানান, এরপরও কৃষকরা এ জাতের ধান আবাদ করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে রোগ প্রতিকারের জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের ছত্রাকনাশক রাসায়নিক ‘নাটিভো’, ‘এমিস্টার টপ’ ও ‘ট্রুপার’ পানিতে মিশিয়ে জমিতে স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।