কাউন্সিলর মো. সামসুজ্জোহাক অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে চর-থাপ্পর মারেন বলে লিখিত অভিযোগে সানিয়া আক্তার উল্লেখ করেছেন।
Published : 12 May 2024, 06:20 PM
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত এক নারী কাউন্সিলরকে মারধর করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর মো. সামসুজ্জোহাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন এ কথা জানান।
টিসিবি পণ্য বিতরণে দুর্নীতি এবং তাতে বাধা দিলে এক সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরকে শারীরিকভাবে আঘাত করার অভিযোগ প্রাথমিক তদন্তের পর কাউন্সিলর মো. সামসুজ্জোহার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, “টিসিবির পণ্য বিতরণে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সামসুজ্জোহার বিরুদ্ধে। এতে প্রতিবাদ জানালে ২৫, ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর সানিয়া আক্তারকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়।
“এই অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তের পর মন্ত্রণালয় কাউন্সিলরকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়।এই সংক্রান্ত চিঠি আমরা পেয়েছি এবং বরখাস্তের বিষয়ে অভিযুক্ত কাউন্সিলরকেও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।”
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য ওই ওয়ার্ডে আরেকজন কাউন্সিলরকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হবে বলেও জানান জাকির হোসেন।
এর আগে ৭ মে বরখাস্তের বিষয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগের আরেক চিঠিতে কাউন্সিলর সামসুজ্জোহার বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার আইন ২০০৯ এর ধারা ১৩ (৩) ধারা অনুযায়ী তাকে কাউন্সিলর পদ থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর আগে গত ৫ মার্চ সন্ধ্যায় ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য আসা টিসিবির পণ্য বিতরণে দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির প্রতিবাদ করায় সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরক সানিয়া আক্তারকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেন সামসুজ্জোহা ও তার লোকজন।
এই ঘটনায় কাউন্সিলর সামসুজ্জোহা (৫০), তার ভাই মো. জাহাঙ্গীর (৩৭) ও মো. রিপন ওরফে অটো রিপনের (৪০) বিরুদ্ধে বন্দর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন সানিয়া।
যদিও পরদিন একই থানায় পাল্টা অভিযোগ করেন কাউন্সিলর সামসুজ্জোহা।
সানিয়া আক্তারের অভিযোগ ছিল, “কাউন্সিলর সামসুজ্জোহা গত বছরের ৯ জানুয়ারি ২ হাজার পরিবারের জন্য আসা টিসিবির পণ্য বিতরণ না করে বিক্রি করে দেন। এই কারণে ৫ মার্চ বিকালে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ১৯শ’ পরিবারের জন্য আসা টিসিবির পণ্য বিতরণের আগে গুণে দেখতে চান সানিয়া। এতে বাধা দেন সামসুজ্জোহা।”
পরে তাকে অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে চর-থাপ্পর মারেন বলে লিখিত অভিযোগে সানিয়া আক্তার উল্লেখ করেছেন।
এ সময় কাউন্সিলর সানিয়া আক্তারের ব্যক্তিগত সচিব মো. নাঈমকেও মারধর করা হয় বলে জানান তিনি। পরে সানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাও নেন।
এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। তদন্তে সামসুজ্জোহার বিরুদ্ধে টিসিবি পণ্য বিতরণে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম এবং নারী কাউন্সিলরকে শারীরিকভাবে আঘাত করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় বলে মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
ওই সময় অভিযোগের বিষয়ে কাউন্সিলর মো. সামসুজ্জোহা বলেছিলেন, “কাউন্সিলর সানিয়া আক্তারকে বিকাল চারটায় কল করেছি কিন্তু তিনি এসেছেন সন্ধ্যা ছয়টায়। ততক্ষণে অনেক মানুষকে টিসিবির পণ্য বিতরণ করা হয়ে গেছে। তখন টিসিবির পণ্য গুণতে চাইলে তাকে বলি, বিতরণ থামিয়ে গুণতে গেলে লোকজন অযথা হয়রানি হবে। পরে প্যাকেট গুণলেই তো হবে।
“কিন্তু সে না শুনে আমার সাথে উচ্চবাচ্য করতে থাকে।এ নিয়ে আমাদের মধ্যে তর্ক হয়।তখন কাউন্সিলর সানিয়ার সচিব আমার দিকে তেড়ে আসে। তাকে চর মারতে গিয়ে কাউন্সিলরের গায়ে গিয়ে পড়ে। হঠাৎ করেই ব্যাপারটা ঘটে গেছে।”
বরখাস্তের বিষয়ে জানতে চাইলে সামসুজ্জোহা বলেন, “সিটি কর্পোশনের পক্ষ থেকে জেনেছি, আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।”