বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা ও কয়েকজন ছাত্র সমন্বয়কের সঙ্গে যোগাযোগ করে ‘চুক্তি অনুযায়ী’ ভবনসহ জমি দখলের কথা বলছেন ওই ব্যবসায়ী।
Published : 27 Mar 2025, 12:16 AM
লক্ষ্মীপুর শহরের পাশে তিনতলা একটি ভবনসহ ৪ কোটি টাকার সম্পত্তি দখল করেছেন এক ব্যবসায়ী।
বুধবার বিকালে শহরের মধ্য বাঞ্চানগর এলাকায় ‘সেন্ট মার্টিন রেস্টুরেন্ট’ ভবনটি দখলের খবর পাওয়ার কথা জানান লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল মোন্নাফ।
জমির মালিক বলছেন, ভবনটি বায়না হলেও রেজিস্ট্রি হয়নি। তার ব্যাংক ঋণের ঝামেলা চুকিয়ে সেটি রেজিস্ট্রি করার কথা ছিল। তবে এখন বায়নার টাকা লভ্যাংশসহ ফেরত দিতে চাচ্ছেন, কিন্তু সেই ব্যবসায়ী নিচ্ছে না।
আর দখলকারী ব্যবসায়ী বলছেন, চুক্তি অনুযায়ী জমি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। নয় মাস পরও সেটি না করায় স্থানীয় ‘প্রভাবশালীদের পরামর্শে’ ভবন দখলে নিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, রায়পুর উপজেলার বামনী গ্রামের আনোয়ার হোসেন বুধবার বিকালে লোকজন নিয়ে ভবনটিতে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন। সেখানে লেখা, বায়নাসূত্রে তিন তলা ভবনসহ ১২ শতাংশ জমির মালিক ‘মেসার্স আনোয়ার ট্রেডার্স’। ভবনটি দখলে গেইটের সামনে ১০টির মত ট্রাক রাখা হয়।
জমির মালিক মো. মাঈনুদ্দিন বলেন, ব্যাংক থেকে তিনি ৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ধারদেনায় পড়ে আনোয়ারের কাছে জমিটি প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকায় বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। ২৮ লাখ টাকার বায়নায় নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিও হয়।
“ব্যাংকের জটিলতা শেষ করে আনোয়ারকে জমি রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ব্যাংকের সমস্যা এখনও সমাধান হয়নি। এর মধ্যেই জমিটি দখলে নিতে আনোয়ার পাঁয়তারা করে আসছিল। জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে বায়না হলেও তা রেজিষ্ট্রি ছিল না।
“তিনি আমাকে ২৮ লাখ টাকা দিয়েছেন। আমি তা লভ্যাংশসহ ফেরত দিতে চেয়েছি, কিন্তু তিনি নিচ্ছেন না। ভাড়াটে ক্যাডারদের এনে আমার সম্পত্তি দখল করেছেন। আমার ভবনে ‘সেন্ট মার্টিন রেস্টুরেন্টের’ সাইনবোর্ড ছিল, তিনি তা সরিয়ে নিজের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছেন।”
ভবন দখলের কথা স্বীকার করে আনোয়ার হোসেন বলেন, “নয় মাস আগে ২৮ লাখ টাকা দিয়ে জমি কেনার জন্য নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে বায়না করেছি। চুক্তি অনুযায়ী আমাকে ভবনসহ জমি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। প্রায় ৪ কোটি টাকা আমার ব্যাংকে পড়ে আছে, উত্তোলন করতে পারছি না। আমি বিএনপি নেতা লোকমান হোসাইন, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা হারুনুর রশিদ, ছাত্র সমন্বয়ক এনামুল হক ও অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেই চুক্তির ভিত্তিতেই ভবনসহ জমি দখল করেছি।”
বিষয়টি নিয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সদস্য লোকমান হোসাইনের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি ধরেননি।
তবে লক্ষ্মীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক হারুন বলেন, “জেমি কেনাবেচার ঘটনাটা আমি জানি। তবে তিন মাস আগে এ থেকে সরে আসছি। আজকে (বুধবার) যে দখল করা হয়েছে, সেটি আমি জানি না। এর সঙ্গে সম্পৃক্তও না।”
আর লক্ষ্মীপুর জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের একজন এনামুল হক বলেন, “জমির কাগজপত্র সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে আমরা আনোয়ারকে সহযোগিতা করেছি। জমি দখল করার ঘটনা আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।”
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল মোন্নাফ বলেন, “খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। ভুক্তভোগীকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”