“বাংলাদেশের মুক্তিপাগল মানুষ এইসব সহ্য করবে না।”
Published : 07 Feb 2025, 09:53 PM
আওয়ামী লীগের লোকজন পালিয়ে গেলেও তারা দেশকে ‘অস্থির’ করতে উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মুক্তিপাগল মানুষ এইসব সহ্য করবে না। উস্কানির কারণে যে পরিবশ সৃষ্টি হবে তার দায় নিতে হবে উস্কানিদাতাদের।”
শুক্রবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ নগরীর ইসদাইরে ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে আয়োজিত এক জনসভায় বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে সকাল ৯টায় দলটির হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থকের উপস্থিতিতে জনসভা শুরু হয়। বেলা সোয়া ১১ টার দিকে শফিকুর রহমান তার বক্তব্য শুরু করেন। প্রায় ত্রিশ মিনিট তিনি বক্তব্য দেন।
শফিকুর রহমান বলেন, “আওয়ামী লীগের লোকজন পালিয়ে গিয়েও দেশকে অস্থির করতে উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। সে রকম একটি উস্কানি দু-একদিন আগে তারা দিয়েছিলেন। এদেশে হাজার-হাজার মানুষ খুন হলেন, রক্তাক্ত ও পঙ্গু হয়ে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন। সেই সময় আপনারা আবার উস্কানি দেন।”
আওয়ামী লীগ ‘সুকৌশলে’ ৫৪ বছর এই জাতিকে বিভিন্নভাবে ‘ভাগ-বিভক্ত-টুকরো’ করে রেখেছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি স্বাধীনতার পর পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘অস্থিরতা’ তৈরির পেছনেও আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন।
জামায়াতে ইসলামীর আমীর বলেন, “স্বাধীনতার পক্ষ আর বিপক্ষের কথা বলেও তারা জাতিকে আরেকবার ভাগ করে। স্বাধীনতা যুদ্ধে যার যে ভূমিকা ছিল মানুষ তার সাক্ষী। কিন্তু দেশটা স্বাধীন হওয়ার পরে কেউ কি জনসভা করে, রাস্তায় নেমে, মিছিল করে, পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে অথবা কোনো জায়গায় কোনো বক্তব্য রেখে কি বলেছে যে, আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা মানি না?
“এমন কোনো দলের নাম কি আপনারা জানেন? না, এমন কোনো দল নাই। সবাই প্রিয় দেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিয়ে স্বেচ্ছায়-সাদরে গ্রহণ করেছে।”
সবাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও উন্নয়নের গর্বিত অংশ হতে চায় বলেও উল্লেখ করেন শফিকুর।
জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে সর্বপ্রথম শিক্ষা-ব্যবস্থায় হাত দেবে বলেও জানান তিনি। সাড়ে ১৫ বছরে দেশ থেকে বিদেশে ২৬ লাখ-কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে এসব টাকা ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
“এই টাকা দিয়ে জনগণের সুষম উন্নয়ন করতে হবে”, বলেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ একটি শিল্পঞ্চল হলেও এ জেলায় মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, উন্নতমানের উচ্চতর কোনো সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শফিকুর রহমান।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, “নারায়ণগঞ্জে যেসব গডফাদাররা জমিদারি নিয়েছিলেন, তারা তাদের আপার কাছ থেকে এগুলো আদায় করেননি কেন? কারণ তাদের ভাবনাই ছিল, জমিদারি টিকিয়ে রাখা, মানুষের উপর সন্ত্রাসী করা এবং চাঁদাবাজি, লুণ্ঠন, দখলদারি চালিয়ে যাওয়া। জনগণকে নিয়ে তাদের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। এটা শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়, সারাদেশের দুর্ভাগ্য।”
“নারায়ণগঞ্জের গডফাদার-খ্যাত একজন দুর্ধর্ষ লোক জামায়াতের প্রয়াত আমীর গোলাম আযমকে প্রকাশ্যে খুন করতে চেয়েছিলেন। ওই লোক দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। অহংকার ভালো জিনিস নয়। দম্ভ, অহংকার, ক্ষমতার জোরে ছড়ি ঘোরানো, মানুষকে খুন, সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দিতে নাই। সুতরাং দাম্ভিকতা অহংকার পরিহার করুন।”
জনসভায় ৫ অগাস্টের পর নারায়ণগঞ্জে কোথাও চাঁদাবাজি, দখলদারি, অফিস-আদালতে ঘুষ চলে কি-না, প্রশ্ন করলে উত্তরে কর্মীদের পক্ষ থেকে ‘হ্যা’ আসে।
তখন তিনি বলেন, “তাহলে কেন আমাদের এতগুলো জীবন ঝরলো, এতগুলো মানুষ কেন পঙ্গু হলো? আমি বিনয়ের সঙ্গে দল-মত-ধর্মের সবাইকে বলবো, এই অপকর্মে যারাই জড়িত আছেন, মেহেরবানি করে এই অপকর্মগুলো ছেড়ে দেন। নাহলে শহীদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। ১৮ কোটি মানুষ আপনাদের অভিশাপ দেবে।”
“আগামীর বাংলাদেশ আমরা লড়াকু বীর সন্তানদের হাতে তুলে দেবো। তোরা দেশ চালাবি, পেছন থেকে আমরা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করবো, ভুল করলে শক্ত করে টান দিয়ে ধরবো। ভুল করা যাবে না, অনেক ভুল এই জাতি করেছে, আর তোমাদের করতে দেওয়া হবে না”, যোগ করেন জামায়াতে ইসলামীর এ নেতা।
জামায়াতে ইসলামীর নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখার আমীর মাওলানা আবদুল জব্বার জনসভায় সভাপতিত্ব করেন। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আরও অনেক নেতা সেখানে বক্তব্য রাখেন।