এই প্রথম মেয়রের চেয়ারে বসছেন লন্ডন আওয়ামী লীগের এই নেতা।
Published : 21 Jun 2023, 11:40 PM
সিলেটবাসীর ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন নবনির্বাচিত সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
সিলেটে এসে নির্বাচন করে প্রথমবারেই মেয়র হওয়া আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “আমার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে সিলেট সিটি করপোরেশনের নগর পিতা নয়, সেবক হিসাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমিও তা হতে চেয়েছি এবং আপনাদের কাছে এসেছি।
“সিলেটবাসী আমাকে যে ভালোবাসা জানিয়েছেন, আপন করে গ্রহণ করেছেন, সেই ঋণ জীবনে শোধ হওয়ার নয়।”
লন্ডন আওয়ামী লীগের এই নেতা সিলেট মহানগরের নৌকার কাণ্ডারি হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার পর নগরবাসীর অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। দলীয় নেতা যারা বদর উদ্দিন কামরানের মৃত্যুর পর মনোনয়নের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন; তারা প্রকারান্তরের তাকে ‘বাইরের লোক’ বলে বিরোধিতাও করেছেন। কিন্তু পরে আবার অনেকেই তার নির্বাচনী প্রচারে যুক্ত হয়েছিলেন।
বিজয়কে সিলেটের আওয়ামী লীগের জন্য উৎসর্গ করে নিজের ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের সবার সহযোগিতা চেয়ে নবনির্বাচিত মেয়র বলেন, “সেজন্য অবশ্যই সিলেট জেলা ও মহানগর আওযামী লীগ নেতাদের পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রয়োজন। আমি আপনাদের স্নেহ-ভালোবাসা চাই। চাই আমাদের এই আধ্যাত্মিক পূণ্যভূমিকে একটি স্মার্ট, ক্লিন ও তিলোত্তমা নগরী হিসাবে গড়ে তুলতে। এ কাজে আমি আমার নেতাদের আন্তরিক সহযোগিতা চাই।
আনোয়ারুজ্জামান তার ওপর আস্থা রাখার জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, তার ছোট বোন শেখ রেহানার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের ১৯০টি কেন্দ্রে একযোগে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয়। রাতে নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদের।
ফলাফলে আনোয়ারুজ্জামান নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ১লাখ ১৯ হাজার ৯৯১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ৫০ হাজার ৮৬২ ভোট।
অনেকটা প্রত্যাশিত এই জয়ের পর রাত ৯টার দিকে নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “আমি আমার উন্নয়ন তৎপরতা, সেবা আর ইশতেহার ঘোষিত ২১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে তার প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করবো। আমি আমার ইশতেহার শতভাগ না পারলেও অবশ্যই অন্তত ৯০ ভাগ বাস্তবায়ন করতে পারবো।”
তিনি বলেন, “সিলেটবাসীর ভালোবাসার ঋণ শোধ হওয়ার নয়। কিন্তু তবু সবার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার ও চেষ্টা করে যাব।
এ সময় তিনি নির্বাচনী প্রচার ও আওয়ামী লীগের ঐক্যকে সংহত রাখার জন্য দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, জেবুন্নেসা হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খানের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান।
১৯৭০ সালের ১ জুন সিলেটে জন্মগ্রহণ করা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ছাত্রাবস্থায় নগরীতে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও জীবনের একটি বড় অংশই কাটিয়েছেন দেশের বাইরে। তবে প্রবাসেও তিনি রাজনীতির বাইরে ছিলেন না।
নব্বইয়ের দশকে লন্ডনে পাড়ি জমিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। তিনি প্রথমে লন্ডন মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্য যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য হিসেবেও মনোনীত হন।
যুবলীগের রাজনীতি থেকেই তিনি সরাসরি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হন এবং বিভিন্ন সময় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
ওসমানীনগর উপজেলার বুরুঙ্গা বাজার ইউনিয়নের পশ্চিম তিলাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করা আনোয়ারুজ্জামানা বিগত দুটি সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসন (ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ) থেকে মনোনয়নের চেষ্টা করেছিলেন। সেখানে তিনি বিফল হন।
তবে মেয়র নির্বাচনে এসে সফলতা পান নৌশা মিয়া চৌধুরী এবং মোছা. গহিনুন্নেছা চৌধুরীর ছয় ছেলের মধ্যে সবার ছোট আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
তিনি পশ্চিম তিলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক, বুরুঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাসের পর সিলেট সরকারি কলেজে ভর্তি হন।
কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে ছাত্র-মিলনায়তন সম্পাদক পদে নির্বাচনও করেন। পরে তিনি লন্ডন গিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।
ব্যবসা ও রাজনীতির পাশাপাশি আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী খেলাঘর ও নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী তিন সন্তানের জনক। সন্তানরা যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে কর্মক্ষেত্রে আছেন। তার স্ত্রী হলি চৌধুরী এন.এইচ.এস ইউকে-তে হেলথ অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত আছেন।