ত্রুটি থাকায় সোমবার মামলাটি জমা দিয়েও তুলে নেওয়া হয়েছিল বলে জানান বাদী পক্ষের আইনজীবী।
Published : 14 May 2024, 10:52 PM
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসামি ধরতে সাদা পোশাকে অভিযান চালানোর সময় এক নারীর মাথায় পিস্তল তাক করার ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ও দ্রুত বিচার আদালতে ভুক্তভোগী বন্যা বেগম বাদী হয়ে গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিমসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী শওকত আলী জানান, প্রধান আসামি করা হয়েছে এনামুল হককে। এ ছাড়া পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আটজনকে। মামলায় মারধর ও লুটপাটের অভিযোগও আনা হয়েছে।
শওকত জানান, বিচারক রাকিবুল ইসলাম আদেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (সদর সার্কেল) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
ত্রুটি থাকায় সোমবার মামলাটি জমা দিয়েও তুলে নেওয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি।
আইনজীবী জানান, সদর উপজেলার থলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা বন্যা বেগমের স্বামী ও সৌদি আরব প্রবাসী নূরুল আলম নূরুর বিরুদ্ধে ২ এপ্রিল সদর থানায় একটি মামলা হয়।
সেই মামলায় সদর উপজেলার চান্দিয়ারা গ্রামের এনামুল হক অভিযোগ করেন, নূরুল ইসলাম সৌদি থেকে ৪০০ গ্রাম স্বর্ণ এনে তাকে পুরোটা বুঝিয়ে দেননি। আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবি পুলিশ।
এরই জের ধরে ১০ মে বিকালে এনামুল হক ও গোয়েন্দা পুলিশের এসআই রেজাউল করিম দল নিয়ে নূরে আলমের বাড়িতে প্রবেশ করেন। নূরুল আলম বাড়িতে নেই বললে বন্যা বেগমের মাথায় পিস্তল তাক করে গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এ সময় ফাঁকা গুলিও ছোড়া হয়।
এ সময় বাড়িতে লুটপাট ও অন্য লোকজনের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে বলেও মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঘটনার সময় উপস্থিত নূরুল আলমের ভাই সারোয়ার আলম অভিযোগ করেন, “সাদা পোশাকে লোকজন বাড়িতে ঢুকেই ভাইকে খোঁজ করতে থাকে। ভাই বাড়িতে নেই বলা হলেও তারা বিষয়টি মানতে চাননি। এ সময় পুলিশ সদস্যরা ভাবী বন্যা বেগমসহ কয়েকজনকে মারধর করে। ভাইয়ের নিশাত নামের নয় বছরের মেয়েও তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। তার ওপরও হামলা হয়।”
এ সময় মোবাইল ফোনে করা কিছু ভিডিও পুলিশ সদস্যরা ডিলিট করে দিয়ে যায় বলেও অভিযোগ করেন সারোয়ার আলম।
বাদী বন্যা বেগম বলেন, “প্রবাসে ব্যবসায়িক অংশীদার না করায় আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। ঘটনার দিন আমাদের বাড়িতে সুন্নতে খৎনার অনুষ্ঠান চলছিল। এমন সময় পাঁচ-ছয়জন সাদা পোশাকে এসে তল্লাশি শুরু করে।
“বিষয়টি দেখে চিৎকার করায় শিশু নিশাতের মাথায় বন্দুক দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করা হয়। প্রতিবাদ করায় তারা আমার কপালে পিস্তল ঠেকায় এবং ফাঁকা গুলি ছোড়ে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”
তবে ডিবি পুলিশের এসআই রেজাউল করিম সাংবাদিকদের কাছে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, “প্রথমে পরিদর্শক মোফাজ্জল আলী একজন কনস্টেবলকে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর আমি যাই। দূর থেকেই ওই বাড়িতে চিল্লাফাল্লা শুনছিলাম। আমি যাওয়ার পর তারা খারাপ আচরণ করে। আসামিকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে। এ নিয়ে ধস্তাধস্তি হয়।”
তিনি বলেন, “আমার হাতে পিস্তল ছিল। তবে কারো দিকে তাক করিনি। কাউকে মারধর করা হয়নি। আমাদের টার্গেট যেহেতু আসামি ধরা সেহেতু সেই লক্ষ্যেই আমরা এগুচ্ছি। যে কারণে তখন আমরা অ্যাকশনে যাইনি।”
তিনি বলেন, “মামলার তদন্তভার আমাদের হাতে। মূল আসামির বিরুদ্ধে প্রায় ৪০০ গ্রাম স্বর্ণ আত্মসাতের অভিযোগ আছে। মামলা হওয়ার পর থেকে তিনি পলাতক। সেদিন বাদী এসে বাড়িতে আসামির অবস্থানের কথা জানালে সেখানে যাওয়া হয়।”
শুক্রবার বিকালে নুরুল আলম বাড়িতে থাকার খবর পেয়ে এসআই রেজাউল করিমসহ ডিবি পুলিশের সদস্যরা সেখানে অভিযান চালায়।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, অভিযানের সময় ডিবি পুলিশ সাদা পোশাকে ছিলেন। বাড়িতে উপস্থিত নারীসহ অন্যদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় পুলিশকে নারীর দিকে পিস্তল তাক করতে দেখা যায়।
ঘটনাটি জানাজানি হলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. জয়নাল আবেদীনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন।
কমিটির অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. বিল্লাল হোসেন, পরিদর্শক (ক্রাইম) মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ। বুধবার পুলিশ সুপারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
তদন্ত দলের প্রধান মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, “প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্ধারিত শেষ দিন বুধবারই জমা দেওয়া হবে।”
এরই মধ্যে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
জানতে চাইলে জেলা ডিবির ওসি মো. আফজাল হোসাইন বলেন, “আসামি ধরতে গিয়ে ওই বাড়িতে যে সমস্যা হয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রেজাউল করিম আমাকে কিছু জানায়নি। তাই তাৎক্ষণিকভাবে আমি বিষয়টি অবগত হইনি। তবে পরে বিষয়টি জেনেছি।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ ব্যাপারে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।