প্রতিটি ট্রেন যাওয়া-আসার সময় সেতুর কাছাকাছি পৌঁছালে লাল পতাকা দেখিয়ে থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরপর রেলওয়ের নির্দেশনা, অনুযায়ী আট কিলোমিটার গতিতে ট্রেন সেতু পার হচ্ছে।
Published : 17 Jan 2023, 03:49 PM
উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগের একমাত্র পথ ঈশ্বরদী-জয়দেবপুর রেললাইনের বাউনজান রেলসেতুর সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলায় চলনবিলের মাঝে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত গুরুত্বপূর্ণ এ রেলসেতুর পিলারের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ায় গত কয়েক মাস ধরে ‘কড়া সতর্কতায়’ ধীর গতিতে ট্রেন চলাচল করছে।
সেতুটি সংস্কারের কাজ করছে ‘ম্যাক্স আরটিসি’ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সংস্কার শেষে এটি পরবর্তী ৭০ বছরের জন্য নিরাপদে ব্যবহার উপযোগী হবে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন।
পাকশী বিভাগীয় রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, সেতুর ১৫টি পিলারের সংস্কার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ এ সেতুতে রেল চলাচলে সতর্কতা জারি থাকবে। একই সঙ্গে চলতি বছরের মে মাসের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ হবে।
রেলের পাকশী বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল বলেন, “রেল বিভাগ ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাউনজান সেতুর সংস্কার কাজ শুরু করেছে। এর আগে একবার কাজ শুরু হলেও পানি বাড়ায় বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিলো। সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত পিলারের পাশে লোহার খাঁচা দিয়ে নতুন পিলার তৈরি করা হচ্ছে।
১৫টি পিলারের মধ্যে এরই মধ্যে তিনটি পিলারের কাজ শেষ হয়েছে।”
নির্ধারিত সময়ের আগেই সংস্কার কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করে বীরবল আরও বলেন, “সেতুটি পুরনো হলেও ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি নেই। সংস্কার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত গতি কমিয়ে ট্রেন চললে কোনো ভয় নেই।”
পাকশী বিভাগীয় রেলের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী শিপন আলী বলছেন, “সড়ক পথের সেতুর নির্মাণ বা সংস্কার কাজের থেকে রেল সেতুর সংস্কার কাজ কিছুটা আলাদা। বাউনজান সেতু প্রায় ৬০০ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট; এখানে ১৫টি স্প্যান রয়েছে।
“এর মধ্যে আমরা দুটি স্প্যান সম্পূর্ণ নতুন করে তৈরি করছি। আর বাকি স্প্যানগুলো মজবুত করতে চারপাশে নতুন ঢালাই দিয়ে ঘিরে দেওয়া হচ্ছে।”
নির্মাণ কাজ শেষ হলে সেতুটির উপর দিয়ে ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলতে পারবে তথ্য দিয়ে তিনি বলছেন, “এতে এ পথে ট্রেনগুলোর যাতায়াতে সময় ও ভোগান্তি কমে যাবে।”
রেল চলাচল স্বাভাবিক রেখেই সেতুর সংস্কার কাজ চলছে জানিয়ে রেলের এ প্রকৌশলী আরও বলেন,
চলনবিলে বর্ষা মৌসুমে পানি থাকায় কাজ বন্ধ ছিলো। এ কারণে সময় কিছুটা বেশি লেগেছে। তবে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই সংস্কার কাজ শেষ হবে।
“সংস্কার শেষে এটি পরবর্তী ৭০ বছরের জন্য নিরাপদে ব্যবহার উপযোগী হবে।”
সেতুটি সংস্কারের কাজে নিয়োজিত ম্যাক্স আরটিসি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মী সাজু শেখ বলেন, “পুরনো এই সেতুর ১৪টি পিলারই দুর্বল। এর ফলে প্রতিটি পিলারের গা ঘেঁষে লোহার বেষ্টনি দেওয়া হচ্ছে। এই বেষ্টনিই মূল পিলারকে রক্ষা করবে। কাজ শুরুর পর দুটি পিলারে বেষ্টনি তৈরি করা হয়েছে।”
ভাঙ্গুড়া রেলস্টেশনের মাস্টার আবদুল মালেক জানান, ক্ষতিগ্রস্ত সেতুটি সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত ট্রেন চলাচলে বিশেষ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ট্রেন যাওয়া-আসার সময় সেতুর কাছাকাছি পৌঁছালে লাল পতাকা দেখিয়ে তা থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরপর রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী আট কিলোমিটার গতিতে ট্রেন সেতু পার হচ্ছে।
রেলের পশ্চিম বিভাগের উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগের একমাত্র পথ বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঈশ্বরদী-জয়দেবপুর রেললাইন। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৫টি যাত্রীবাহী ট্রেনে দেশের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার যাত্রী এই রেলপথ দিয়ে যাতায়াত করছে। পাশাপাশি আন্তন্তর্জাতিক মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনসহ মালবাহী ট্রেন এ পথ দিয়েই যাতায়াত করছে।
দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই রেলপথের পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার চলনবিলের উপর ব্রিটিশ আমলে নির্মিত বাউনজান রেলসেতুর পিলারের বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরায় ঝুঁকির মধ্যে পড়ে এ পথে ট্রেন চলাচল। পরে রেল কর্তৃপক্ষ সেতুটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়।
পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের এটিই একমাত্র পথ। এর ফলে বাধ্য হয়ে ধীরগতিতে ট্রেন চালিয়ে সেতুটি পার করতে হচ্ছে। এতে সময় বেশি লাগায় মাঝেমধ্যে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ও হচ্ছে।