“ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বিষয়টি সড়ক ও জনপথ বিভাগকে এক সপ্তাহ আগে জানানো হলেও মেরামতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।”
Published : 03 Mar 2024, 06:06 PM
বরিশালের সদর উপজেলায় একটি বেইলি ব্রিজ ভেঙে ট্রাক খালে পড়ে গেছে। এতে কেউ হতাহত না হলেও ওই পথে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
উপজেলার টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাহেবের হাট স্লুইচ গেট এলাকার বরিশাল-ভোলা মহাসড়কে শনিবার রাত ১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে বরিশাল মহানগর পুলিশের বন্দর থানার ওসি আব্দুর রহমান মুকুল জানান।
ওসি বলেন, “ট্রাকটি খালে উল্টে যাওয়ার সময় ভেতরে চালক ও হেলপার ছিল। তাদের কেউ গুরুতর আহত হয়নি। খবর পেয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিকল্প সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করার চেষ্টা করলেও সফল হয়নি। বর্তমানে বরিশাল-ভোলা রুটে যান চলচল বন্ধ রয়েছে।”
টুঙ্গীবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য অমর দেবনাথ বলেন, তার ইউনিয়নের মেমানিয়া খালের ওপর বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। তাই এ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য পাশেই দুমাস আগে একটি বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করে দেওয়া হয়।
“তবে ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। কোনো পণ্যবাহী যানবাহন পার হওয়ার সময় মাঝখানে দেবে যেত। বিষয়টি সড়ক ও জনপথ বিভাগকে এক সপ্তাহ আগে জানানো হলেও মেরামতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি তারা।”
শনিবার রাতে একটি পণ্যবাহী ট্রাক ওই ব্রিজ পার হওয়ার সময় ভেঙে খালে পড়ে যায়। এরপর বরিশাল-ভোলা সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বলে জানান তিনি।
রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, বেইলি সেতুর দুই পাশে পচনশীল ভোগপণ্যের লরি ও যাত্রীবাহী বাস আটকা পড়েছে। দুই প্রান্তে এক কিলোমিটারের বেশি অংশে যানবাহনের লম্বা সারি।
দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাকের চালক মো. জাকির বলেন, “বেনাপোল থেকে লোহার কুচি নিয়ে চট্রগ্রাম যাচ্ছিলাম। পথে রাত ১টার দিকে বেইলি ব্রিজটি পার হওয়ায় সময় সেটি ভেঙে পড়ে এবং ট্রাক নিয়ে উল্টে আমি খালে পড়ে যাই।
“এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা এক নিরাপত্তাকর্মী আমি ও আমার সহকারীকে টেনে-হিঁচড়ে ট্রাক থেকে বের করে। তবে আমদের তেমন কিছু হয় নাই।”
জাকিরের অভিযোগ, বেইলি ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ কি-না বা কতটুকু পণ্য নিয়ে পার হওয়া যাবে, সে ধরনের কোনো সতর্কতা বার্তা দেওয়া ছিল না। এমনকি ঘটনাস্থলে ঠিকাদার ও সড়ক বিভাগের কোনো লোকজনও ছিল না। তারা যদি নিষেধ করতো, তাহলে সেতু পার হওয়ার সময় সতকর্তা অবলম্বন করা হতো।
দুর্ঘটনার পর বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মাসুদ খান ও নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন ঘটনাস্থলে গেলে জনগণের রোষানলে পড়েন। দায়সারা ভাবে বেইলি ব্রিজ তৈরি ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ার পরও মেরামত না করার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে সড়ক বিভাগকে দায়ি করে তারা।
নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বক্স কালভার্ট নির্মাণের কারণে বেইলি ব্রিজটি অস্থায়ীভাবে করা হয়েছে। এ ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য গাড়ি চলাচল করে।
“এ সেতু দিয়ে সর্বোচ্চ ১০ টন পণ্য নিয়ে কোন যানবাহন পার হতে পারবে। কিন্তু ট্রাকটি ৩০ টনের কাছাকাছি লৌহজাত পণ্য নিয়ে ব্রিজের রেলিংয়ে আঘাত করেছে। এতে ব্রিজটি বাঁকা হয়ে ট্রাকটি উল্টে পড়েছে।”
ব্রিজ মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে এবং সোমবার বিকাল নাগাদ যানবাহন চলাচল শুরু হবে বলে জানান তিনি।
ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ এবং সেটি মেরামতের বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে জানানো হয়েছিল কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ ধরনের কোনো বিষয় আমার নলেজে নাই।”