“গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার কেবল জামাই-শ্বশুরের নয়। সবারই রয়েছে। জনগণ বিচার করে যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই নির্বাচিত করবেন।”
Published : 16 May 2024, 04:39 PM
জয়পুরহাটে পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে শ্বশুরের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হয়েছেন মেয়ের জামাই।
ভোটের মাঠে এখন তারা আলোচনার তুঙ্গে রয়েছেন। নির্বাচনে জয় পেতে জামাই-শ্বশুর কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে বিপাকে পড়েছেন স্বজনরা।
দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে পাঁচবিবি উপজেলা পরিষদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসার বসতে মোট ছয়জন প্রার্থী লড়াই করছেন। নির্বাচনি যুদ্ধে জয় পেতে সব প্রার্থী মাঠ ‘গরম’ রাখলেও দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শ্বশুর-জামাই মূলত এখন ভোটারদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। দুজনই আওয়ামী লীগের নেতা।
তাদের মধ্যে শ্বশুর আবু বকর সিদ্দিক পাঁচবিবি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং জামাই সাঈদ জাফর সুমন চৌধুরী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (প্রস্তাবিত কমিটি)।
এই দুজন ছাড়া চেয়ারম্যান পদের লড়াইয়ে রয়েছেন, পাঁচবিবি উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুনিরুল শহীদ মুন্না, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাহেদুল আলম বেনু, উপজেলার বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও কুসুম্বা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহবার হোসেন এবং নারী প্রার্থী সাবেকুন নাহার শিখা। জয়ের লক্ষ্য নিয়ে গণসংযোগ, বৈঠকসহ প্রচারে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এই প্রার্থীরা।
শ্বশুর জেলার প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা আবু বকর সিদ্দিক দীর্ঘ সময় ধরে পাঁচবিবি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। বঙ্গবন্ধুর সময়কাল থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে থাকলেও এখন পর্যন্ত জনপ্রতিনিধি হতে পারেননি বা তেমন কোনো সুযোগও পাননি।
তাই জীবনের পড়ন্ত বেলায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে সাধারণ মানুষের সেবা করে তাদের মনে জায়গা নিয়ে পৃথিবী ছাড়তে চান বলে জানালেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।
আবু বকর বলছিলেন, “বঙ্গবন্ধুর সময়কাল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকলেও আমি দল থেকে কোনো সুবিধাই পাইনি। এখন বয়স হয়েছে; আর কয়দিনই বাঁচবো? জীবনে একটি বার উপজেলা চেয়ারম্যান হতে চাই। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে জনসেবা করা সহজ হয়।
“হজ্ব পালন করেছি; তাই লোভ-লালসার ঊর্ধে থেকে জনসেবা করে দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের সেবা করে তাদের দোয়া নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চাই।”
নির্বাচনে জেতার পথে প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়ের জামাই; বিয়য়টিকে কীভাবে দেখছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “শুধু জামাই কেনো? আমার দলের অনেক প্রার্থীকে আমার মত একজন বৃদ্ধ মানুষকে শেষ বারের মত ছাড় দিতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা কেউ ছাড় দেয়নি। গণতন্ত্র, তাই যে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। আমার ভাগ্যে সৃষ্টিকর্তা লিখে রাখলে কেউ ঠেকাতে পারবে না।”
একই পদে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন আবু বকরের জামাই সাঈদ জাফর সুমন চৌধূরী্। তিনি ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে একদিকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। অন্যদিকে তিনি পেশায় শিক্ষক। এছাড়া স্থানীয় পরিমণ্ডলে ‘তুখর’ বক্তা।
সকল সক্ষমতায় নিজেকে একজন যোগ্য চেয়ারম্যান প্রার্থী দাবি করে ভোট চাইছেন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। এ ছাড়াও নিজের পক্ষে রায় পেতে উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতিও দিয়ে চলেছেন তিনি। ভোটের মাঠে তার অবস্থানও ‘শক্ত’।
শ্বশুরের সঙ্গে নির্বাচনি টক্কর দিতে কেমন লাগছে জানতে চাইলে সুমন বলেন, “গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার কেবল জামাই-শ্বশুরের নয়। সবারই রয়েছে। জনগণ বিচার করে যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই নির্বাচিত করবেন।”
শ্বশুর-জামাই একই পদে প্রতিদ্বন্দিতা করার কারণে তাদের ভোটার বিভক্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে এলাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এ কারণে জয়-পরাজয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু না বললেও সতর্ক মন্তব্য করেছেন সাধারণ ভোটাররা।
খাস বাগুড়ি এলাকার সাইদুল ইসলাম বলেন, “অন্যান্য প্রার্থীদের সঙ্গে শ্বশুর-জামাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শ্বশুরও ভালো মানুষ। জামাই শিক্ষক যুবক; সেও ভালো মানুষ। জনগণ তাদের গুণ-বিচার করে যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই বেছে নিবেন।”
শিমুলতলী বাজারের মলিন চন্দ্র মহন্ত বলছিলেন, “শ্বশুর-জামাই দুজনেই আওয়ামী লীগের লোক। ভোটাররা এখন দ্বিধা-দ্বন্দে পড়ে গেছেন।”
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক এক তরুণ ভোটার বলেন, “একজনকে অন্তত ছাড় দেওয়া দরকার ছিল, তাহলে জয়টা সহজ হতো।”
জামাই সুমন চৌধুরীর চাচাত ভাই বাবু চৌধুরী বলেন, “শ্বশুর-জামাই দুজনই চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে চান। এতে আমরা বিব্রত বোধ করছি।”
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফজলুল করিম জানান, পাঁচবিবি উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন মিলে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪০ হাজার ৬৪৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২ হাজার ২৫ জন। আর নারী ভোটার ১ লাখ ২ হাজার ৬১৮ জন।
তৃতীয় লিঙ্গের তিনজন ভোটার রয়েছেন ।