২৪ ঘণ্টায় এ জেলায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।
Published : 22 Aug 2024, 09:02 PM
চার দিনের টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে চাঁদপুর জেলার ৩১টি ইউনিয়নে ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সেইসঙ্গে বন্যা কবলিত এলাকায় দুই দিন ধরে ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।
গত ২৪ ঘণ্টায় এ জেলায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চাঁদপুর সেচ প্রকল্প এলাকার বাসিন্দারা। পানিবন্দি শত শত পরিবার খাবারের কষ্টের পাশাপাশি গৃহপালিত পশু নিয়ে দুর্বিষহ দিন পার করছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সদর উপজেলার বাগাদী, ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা, কড়ইতলি, পৌরসভা, গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, অতি বৃষ্টির কারণে বহু ঘরবাড়ি ও সড়ক তলিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত জেলার ৩১টি ইউনিয়নে ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন।
এদিকে চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের সদর উপজেলার বাগাদি পাম্প হাউজ পানি নিষ্কাশনে দিন ও রাত সেচ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে জোয়ারের সময় মেশিনগুলো বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
বাগাদি ইউনিয়নের বাসিন্দা জামাল হোসেন বলেন, “চার দিনের বৃষ্টিতে আমার তিনটি ঘরে পানি ঢুকেছে। গবাদিপশু নিয়ে খুব বিপাকে আছি। রান্নাও করা যাচ্ছে না। দুদিন ধরে বিদ্যুৎও নেই। আমাদের কেউ এসে খোঁজ খবরও নেয় না।”
একই এলাকার বাসিন্দা জোৎস্না বেগম বলেন, জলাবদ্ধতায় তার পরিবারের সদস্যরা খুব কষ্ট আছেন। পানি কমছে না। তিনি সরকারি সহায়তা চেয়েছেন।
ফরিদগঞ্জ বালিথুবা ইউনিয়নের চান্দ্রা বাজার এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, অতিবৃষ্টিতে বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সবখানেই পানি আর পানি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে সবকিছুই তলিয়ে যাবে।
পাশের মানিকরাজ গ্রামের সোহেল আহমেদ বলেন, “এলাকার প্রায় ১০ বাড়ির লোকজন পানির কারণে নামতে পারছেন না। বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের নিয়ে অনেক কষ্টে রাস্তা পার হতে হচ্ছে। পানি না কমায় ফসলেরও ক্ষতি হচ্ছে।”
চরবাগাদি পাম্প হাউজের মেশিন অপারেটর মো. হুমায়ুন কবির বলেন, “আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি পানি নিষ্কাশনের। দিন-রাত কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বর্তমানে সেচ প্রকল্পের ভেতরে পানির লেভেল ৩ দশমিক ৯৫ থেকে ৪ দশমিক ২০ মিলিমিটার। এটি বাড়ছে এবং কমছে।”
ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌলি মণ্ডল বলেন, উপজেলার প্রায় সবগুলো ইউনিয়নের লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের সব দপ্তরের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. রহুল আমিন বলেন, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সেচ প্রকল্প এলাকায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ১০০ কিলোমিটার প্রকল্প এলাকা থেকে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
“পানি কমালেও বৃষ্টিতে আবার একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। পাম্প হাউজ ছাড়াও প্রকল্প এলাকার হাজিমারা পাম্প হাউজ দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে। আশা করি বৃষ্টি কমলে দুদিনের মধ্যে পানি স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসবে”, বলেন তিনি।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বশির আহমেদ বলেন, পানিবন্দি বাসিন্দাদের মধ্যে শাহরাস্তি উপজেলায় ২৮ হাজার ৯৪০ পরিবার, হাজীগঞ্জ উপজেলার এক ইউনিয়নে ১২ পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। ফরিদগঞ্জ উপজেলার চারটি ইউনিয়নে ৬০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। তাদেরকে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া সদরের আট ইউনিয়নে ৮০০ এবং হাইমচরের এক হাজার পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে বলে জানান তিনি।
চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ নরজদারিতে রাখা হয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।