জনশ্রুতি রয়েছে সন্যাসী পূজাকে ঘিরে দুইশ বছরের বেশি সময় আগে মেলাটির উৎপত্তি ঘটে।
Published : 17 Jun 2023, 04:27 PM
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার তুলশীগঙ্গা নদীর তীরে জমে উঠেছে ঘুড়ির মেলা। প্রায় দুইশ বছরের পুরোনো এই মেলা ঘিরে আশেপাশের জেলা থেকে আসেন হাজার হাজার মানুষ। পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোয় হাজির হন মেয়ে-জামাই ও স্বজনরা।
শুক্রবার বিকাল থেকে তুলশীগঙ্গা নদীর তীরে সন্যাসতলী মন্দিরের পাশে দু’দিন ব্যাপী এই গ্রামীণ মেলা শুরু হয়েছে। মেলার সঠিক ইতিহাস কেউ বলতে না পারলেও জনশ্রুতি রয়েছে সন্যাসী পূজাকে ঘিরে দুইশ বছরের বেশি সময় আগে মেলাটির উৎপত্তি ঘটে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মন্দিরে পূজা দিয়ে দিনটি উদ্যাপন করলেও এটি মূলত হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সন্যাসতলী মেলা কমিটির সভাপতি মন্টু চন্দ্র।
তিনি বলেন, “প্রতি বছরের মত এবারেও বসেছে প্রায় দু’শ বছরের পুরাতন এই মেলা। হিন্দু-মুসলিম সবাই মিলেই এ মেলা পরিচালনা করে থাকি। মেলা ঘিরে আশপাশের গ্রামে যেমন অতিথির ভিড় জমে তেমনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এ মেলায় আসেন।”
ঐতিহ্যবাহী মেলাকে ঘিরে জামাই-মেয়ের পাশাপাশি স্বজনদের আপ্যায়ন রীতি চলে মেলা সংলগ্ন আশপাশের কয়েক গ্রামে।
পঞ্জিকা অনুসারে প্রতিবছর বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার এই মেলা হলেও এবারই আষাঢ়ের দ্বিতীয় দিন এই মেলা বসে।
বিকালে বসা এই মেলার প্রধান আকর্ষণ রং-বেরংয়ের ঘুড়ি। ফসলের মাঠ জুড়ে ওড়ানো হয় রঙ বেরঙয়ের ঘুড়ি। এরপর সময় গড়ানোর সাথে সাথে ঘুড়ি কেনা ও ওড়ানোকে কেন্দ্র করে মেলায় ঢল নামে মানুষের।
এ ছাড়া বর্তমানে মেলায় বসা বিভিন্ন দোকানের রকমারি মিষ্টি ও চিনির শাহী জিলাপিও আকৃষ্ট করে দর্শকদের। মেলায় বাঁশ কাঠ ও লোহার তৈরি সংসারের বিভিন্ন সামগ্রী ও মাছ ধরার নানা যন্ত্রের আমদানিও নজর কাড়ে মানুষের। এ ছাড়া শিশুদের খেলনা এবং প্রসাধনীর দোকানও বসে দুইদিনের এ মেলায়।
স্থানীয় মহব্বতপুর গ্রামের আনিছুর রহমান, দেওগ্রামের জেমিয়ার হোসেন বলেন, তাদের বাবা-দাদারা এই মেলা করতে এসেছিল, এখন তারাও এই মেলাতে কেনাকাটা করতে আসেন।
এ মেলায় আশেপাশের জেলা থেকেও অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। মেলাতে আসা সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার ফারুক হোসেন, বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার নিতাই চন্দ্র, দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা আলিফ হোসেন বলেন, ঘুড়ি কিনতে তারা প্রতি বছর এই সন্যাসতলী মেলাতে আসেন।
ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই সন্যাসতলী মেলার মূল আকর্ষণ ঘুড়ি। এ সময় আশেপাশের জেলা থেকে আসা সব-ধর্ম-বর্ণের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয় এলাকাটি।