ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে আগে মেইল ট্রেনের ভাড়া ছিল জনপ্রতি ১৫ টাকা, কমিউটারে তা বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা।
Published : 20 Oct 2023, 05:16 PM
পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের কারণে দীর্ঘ আট মাস বন্ধ থাকার পর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে ১ অগাস্ট থেকে।
বন্ধ হওয়ার আগে এই পথে মেইল ট্রেন চললেও এখন শুরু হয়েছে কমিউটার ট্রেন চলাচল। ভাড়াও বেড়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী যাত্রীসেবার মান বাড়েনি, সুযোগ-সুবিধাও বাড়েনি- এমনটাই দাবি এ পথে নিয়মিত যাত্রীদের।
তারা বলছেন, শিডিউল বিপর্যয়, হুটহাট ট্রেন বিকল হয়ে যাওয়া, ব্যবহারের অযোগ্য টয়লেট, নষ্ট লাইট এবং ফ্যানের সমস্যা এখনও রয়েছে। উল্টো ট্রেনের সংখ্যা কমিয়ে আনায় কোনো কারণে একটি ট্রেন ধরতে না পারলে অপেক্ষা করতে হয় দুই ঘণ্টা। অথচ আগে প্রতি ৩০ মিনিট পর পর একটি করে ট্রেন স্টেশন ছেড়ে যেত।
এ অবস্থায় ভাড়া কমিয়ে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবি যাত্রীদের। নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় নাগরিক সংগঠনগুলোও এই দাবি তুলেছে।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে আগে মেইল ট্রেনের ভাড়া ছিল জনপ্রতি ১৫ টাকা, কমিউটারে তা বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা।
নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম খান বলেন, “মেইল ট্রেনের চেয়ে কমিউটার ট্রেনে যাত্রী সুবিধা বেশি। এই কারণে ট্রেনের ভাড়াও ৫ টাকা বেশি।”
তবে এই পথে চলাচলকারী একটি ট্রেনের চালক নূর হোসেন মনে করেন, এসব ট্রেনের ক্ষেত্রে কেবল নামেই পার্থক্য। আদতে মেইল ট্রেন যা; কমিউটার ট্রেনও তা।
দেশে লোকাল, মেইল, কমিউটার ও ইন্টারসিটি- এই চার ধরনের ট্রেন চলাচল করে। লোকাল ট্রেনে সর্বনিম্ন ভাড়া পাঁচ টাকা এবং ইন্টারসিটিতে ৩৫ টাকা।
মঙ্গলবার সকাল ৮টায় নারায়ণগঞ্জ স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের যাত্রীদের চোখে-মুখে দেখা গেল বিরক্তির ছাপ। তারা বললেন, এই ট্রেনটি সকাল ৬টা ৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পরও ছাড়েনি।
স্টেশন মাস্টার জানান, ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ট্রেনটি স্টেশন ছাড়েনি। ইঞ্জিনের ত্রুটি মেরামতের পর ৮টা ২০ মিনিটে ছাড়ে ট্রেনটি। একই কারণে কমলাপুর স্টেশন থেকে ৯টা ২০ মিনিটে যে ট্রেনটি ছাড়ার কথা, তা ছাড়ে ৯টা ৪৮ মিনিটে।
রাজধানীর মহাখালীর বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সীমা আক্তার। সকাল ১০টায় তার অফিসে প্রবেশ করতে হয়। সকালের প্রথম ট্রেনটি ধরার জন্য ভোরে স্টেশনে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু ট্রেনটি সময়মতো না ছাড়ায় বিপদে পড়তে হয়েছে তাকে।
সময়মতো ট্রেন স্টেশনে না আসা এবং না ছাড়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে বলে অভিযোগ করলেন যাত্রীরা। তারপরেও বাসে যানজট ও অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে ট্রেনকেই বেছে নিতে হয়।
ট্রেনটির চারটি বগি ঘুরে অন্তত সাতটি ফ্যান অকেজো দেখা যায়। রাতে অধিকাংশ লাইটও জ্বলে না বলে জানান যাত্রীরা। প্রতিটি বগির টয়লেট ব্যবহার অযোগ্য। কোনোটির নলেই ছিল না পানি এবং নেই পানি রাখার কোনো পাত্র।
সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে স্নাতক তৃতীয় বর্ষে পড়েন নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার বাসিন্দা খুশবুন নাহার। নিয়মিত ট্রেনে ঢাকায় যাতায়াত করা এই শিক্ষার্থী বলেন, “ট্রেনের কোনো টয়লেটই ব্যবহারের যোগ্য না। নারীদের জন্য তো নয়ই, পুরুষদের জন্যও না।”
বাড়তি কোনো সুবিধা যোগ না করে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই শিক্ষার্থী। সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা ভাড়ায় চলাচলের সুবিধা রাখার দাবি তার।
নারায়ণগঞ্জ যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, “ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথের দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া হওয়ার কথা ১০ টাকা। তারপরও ১৫ টাকা পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু কমিউটার ট্রেনের কথা বলে মূলত লোকাল ট্রেন চালিয়ে ২০ টাকা ভাড়া নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
“মূলত যাত্রীদের ট্রেনবিমুখ করার চিন্তা থেকেই ভাড়া বাড়ানো ও তাদের পর্যাপ্ত সুবিধা বঞ্চিত করা হয়। পরিবহন সিন্ডিকেটের সঙ্গে আঁতাত করেই এইভাবে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়।”
তবে আগের তুলনায় টিকেট বিক্রি বেড়েছে বলে জানান স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম।তিনি জানান, অগাস্টে ৬০ হাজার টিকেট বিক্রি হয়েছে। আগে মাসে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকার টিকেট বিক্রি হত।
নারায়ণগঞ্জ স্টেশন থেকে কমলাপুরের দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার। কোভিড মহামারীর আগে এই রুটে ১৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করত। ওই সময় ৩০ মিনিট পরপর একটি ট্রেন স্টেশন ছেড়ে যেত। কিন্তু মহামারীর কারণে সৃষ্ট সংকটের সময় এই ট্রেনের সংখ্যা কমিয়ে ৮ জোড়ায় আনা হয়। এরপর এই সংখ্যা আর বাড়ানো হয়নি। ফলে এখন দুই ঘণ্টা পরপর একটি ট্রেন স্টেশন ছেড়ে যায়।
তবে রেল কর্মকর্তারা বলছেন, এই পথে চলমান ডুয়েল গেজ রেললাইন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ট্রেন ও বগির সংখ্যা বাড়ানো হবে।
২০১৪ সালে হাতে নেওয়া ওই প্রকল্পের কাজ এখনও শেষ হয়নি। গত ২৫ জুলাই নারায়ণগঞ্জে এই প্রকল্প কাজের পরিদর্শনে এসে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা যায়নি।
স্টেশন মাস্টার বললেন, ডুয়েল গেজ লাইনের কাজ চলার কারণে ট্রেনের ক্রসিং করানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই আটটির বেশি ট্রেন চালানোর এখন সুযোগ নেই। আর ভাড়া কমানোর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত।
[ প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: সেটির ফেইসবুক লিংক