সড়ক জনপদ বিভাগের জায়গায় এগুলো অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল, বলেন শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)।
Published : 23 Feb 2024, 09:56 PM
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও মহাসড়ক আইন অনুযায়ী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জমিতে গড়ে ওঠা তিন সহস্রাধিক দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইজারাদাররা।
জেলার শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আল মামুন বলেন, শুক্রবার উপজেলার এমসি বাজার, নয়নপুর বাজার ও জৈনা বাজারে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন।
সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পরিচালিত এ উচ্ছেদ অভিযানে সহায়তা করে গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও হাইওয়ে থানা পুলিশ।
এতে নেতৃত্ব দেন শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমিন।
সঙ্গে শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনারসহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা ছিলেন।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জয়দেবপুর থেকে শ্রীপুরের জৈনা বাজার পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার এলাকা গাজীপুর সড়ক বিভাগের অধীন। ১৯৬৭-১৯৬৮ সালে জমি অধিগ্রহণ করে মহাসড়কটি নির্মাণ করা হয়।
সময় যত যাচ্ছে, এই মহাসড়কে যানবাহনের আধিক্য তত বাড়ছে। কারণ, গাজীপুরের চৌরাস্তার পর থেকে ভালুকা, ত্রিশাল উপজেলায় প্রচুর শিল্প, কল-কারখানা ও পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠছে। ফলে আগের মহাসড়কটি সংস্কার করে বর্তমান সরকারের সময়ে চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে।
এরপরও মহাসড়কের পাশে বেশ কিছু খালি জায়গা অবশিষ্ট রয়েছে। এর সুযোগ নিয়েছেন ইজারাদাররা। উপজেলা প্রশাসন থেকে তারা প্রতিবছর যে জায়গা ইজারা নেন তার বাইরে গিয়ে মহাসড়ক ঘেঁষে বাজার বসিয়ে ইজারাদাররা বাড়তি আয় করেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
শুক্রবারের অভিযানের বিষয়ে এমসি বাজারের ইজারাদার মো. ইব্রাহিম জানান, তিনি মহাসড়কের পাশের ওই বাজার এক কোটি ৬৮ লাখ ৮২ হাজার ১২৫ টাকায় এক বছরের জন্য ইজারা নেন।
তিনি বলেন, “এখানে ইজারা দেওয়ার মত সরকারি কোনো খাস জমি নেই। যে জমি ইজারা দেওয়া হয়েছে, সেখানেই আমরা দোকানপাট বসিয়েছি। পরে আমরা জানতে পেরেছি, সড়ক ও জনপথের জমিই উপজেলা প্রশাসন আমাদের কাছে বাজারের জন্য ইজারা দিয়েছে।”
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এমসি বাজার ইজারা দেওয়ার মত সরকারের এক শতাংশ জায়গাও নেই। এ বাজারের জন্য আমার ইজারার মেয়াদ শেষ হবে এ বছরের চৈত্র মাসে। কিন্তু শুক্রবার এসব দোকানপাট উচ্ছেদ করায় আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।”
উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই ইজারার টাকা কয়েক কিস্তিতে পরিশোধ করেছেন দাবি করে ইব্রাহিম বলেন, “আমার কাছে এখনও প্রশাসন কিস্তির ৪৩ লাখ ৮২ হাজার ১২৫ টাকা পাবে। এমতাবস্থায় আমি কীভাবে ওই টাকা পরিশোধ করব?”
“বৃহস্পতিবার আমার বাড়িতে গিয়ে বকেয়া টাকার জন্য চাপ দেওয়া হয়। ওই টাকা না দিলে উপজেলা থেকে বাড়ি ক্রোকেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে।”
একই কথা বলেন, নয়নপুর বাজারের ইজারাদার আবু হানিফ ও জৈনা বাজারের ইজারাদার মো. নাইম হাসান।
তারা বলছেন, এ উচ্ছেদের আগে তাদের কোনো নোটিসও দেওয়া হয়নি।
যদিও ইতোপূর্বে তাদের দোকানপাট সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার মো. আল মামুন।
তিনি বলেন, “মহাসড়কের পাশেই জৈনা, নয়নপুর ও এমসি বাজার নামে আলাদা আলাদা বাজার রয়েছে। আমরা সেগুলোই ইজারা দিয়েছিলাম। আমরাতো মহাসড়কের অংশ ইজারা দেইনি। কিন্তু ইজারাদারদের সহায়তায় দোকানিরা ওইসব অংশ ছাড়িয়েও মহাসড়কের জমিতে স্থাপনা তুলে অবস্থান নিয়েছিল। এমনকি তারা মহাসড়কেও ভাসমান দোকান বসিয়েছিল। যা সম্পূর্ণ অবৈধ। তাই আমরা উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও মহাসড়ক আইন অনুযায়ী ওইসব দোকান/স্থাপনা উচ্ছেদ করে দিয়েছি।”
মহাসড়কের পাশে থাকা ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে দোকানপাটের বিষয়ে তিনি বলেন, “হাট-বাজার কখনো ব্যক্তি মালিকানাধীন হয় না। হাট যেখানেই বসবে, তা সঙ্গে সঙ্গেই সরকারি জায়গা হয়ে যায়। আর সেখানেই বসবে, ওই হাটটা সরকার ইজারা দিতে পারবে। তা সঙ্গে সঙ্গে সরকারি জায়গা হয়ে যায়। সরকার অর্থাৎ প্রশাসন চাইলে যেকোনো হাট যেকোনো সময় বন্ধ করে দিতে পারবে।”
উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী হাকিম শামীমা ইয়াসমিন বলেন, “দখলকারীরা মহাসড়কের পাশে অবৈধ পার্কিংসহ দোকান গড়ে তোলায় পরিবহন ও পথচারীদের চলাচলে বিঘ্নিত হচ্ছিল। মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে ও সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
আরও পড়ুন...