নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে রথখোলা এলাকায় বসে লোকজ মেলা।
Published : 06 Oct 2024, 10:27 PM
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে হয়ে গেল আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা।
কুমার নদে মুকসুদপুর উপজেলার বাটিকামারী ইউনিয়নের বাহারা গ্রামে ‘আসমত স্পোর্টিং ক্লাব’ শনিবার বিকালে এ বাইচের আয়োজন করে।
এতে গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের ১৫টি সরেঙ্গা, ছিপ, কোষা, চিলাকাটা, জয়নগর বাচারি নৌকা অংশ নেয়।
কুমার নদের বাহার গ্রাম থেকে শিবগঞ্জী পর্যন্ত ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ছিল নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা।
বিভিন্ন বয়সের মানুষ নদীর দুই পাড়ে দাঁড়িয়ে বাইচ প্রত্যক্ষ করেন।
বিকাল থেকে নানা বর্ণে ও বিচিত্র সাজে সজ্জিত নৌকা ও মাল্লার বাইচ শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে।
পুরো সময়জুড়ে ঠিকারি ও কাঁশির বাদ্যের তালে নেচে-গেয়ে, হেইও হেইও রবে এক অনবদ্য আবহ সৃষ্টি হয়।
নদীর দুই পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের করতালি ও হর্ষধ্বনিতে এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।
নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে রথখোলা এলাকায় বসে লোকজ মেলা। মেলায় শতাধিক দোকান বসেছিল।
সেখানে মুড়ি-মুরকি, মিষ্টি, কসমেটিকস, কুটির শিল্পে উৎপাদিত পণ্য, খেলনাসহ তৈজসপত্র বিক্রি হয়েছেও দেখা যায়।
নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় মুকসুদপুর উপজেলার বাগাদিয়া গ্রামের দিলীপের নৌকা প্রথম, ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার রামেরচর গ্রামের রেজাউলের নৌকা দ্বিতীয় ও ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদি গ্রামের সামাদের নৌকা তৃতীয় হয়েছে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আসমত স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি ও বাটিকামারী ইউপির চেয়ারম্যান এবাদত হোসেন এবাত মাতুব্বরসহ গণমান্য ব্যক্তিরা বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
এছাড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া সব নৌকাকে সান্ত্বনা পুরস্কার দেওয়া হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান এবাদত হোসেন বলেন, “২৫ বছর আগে এখানে গ্রামবাসীর উদ্যোগে নৌকা বাইচের প্রচলন হয়। ১১ বছর আগে গ্রামবাসী এটির আয়োজন করতে হিমশিম খাচ্ছিল। তারপর থেকে আমাদের ক্লাবের পক্ষ থেকে নৌকা বাইচ করে আসছি। বিগত এক দশক ধরে আমরা উৎসবের আমেজে প্রতিবছর এ আয়োজন করি।”
প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এ প্রয়াস অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানের সহযোগী মমতাজ হারবাল কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি কেএম আবু বক্কার বলেন, “আমাদের কোম্পানি এটিতে স্পন্সার করেছে। আমরা টিশার্ট ও ২-১টি পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছি। কোম্পানির সামান্য সহযোগিতায় নৌকা বাইচটি আরো সমৃদ্ধ হয়েছে।”
মাল্লা আলামিন শেখ বলেন, “বাইচের নৌকার মাল্লা হয়ে তালে তালে বৈঠা মেরে নিজে আনন্দ পাই; নদীর দুই কূলে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদেরও আনন্দ দিই। এটিই আমাদের পরম পাওয়া।”
মুকসুদপুর ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা বলেন, “এই কালারফুল নৌকা বাইচ আমাদের আনন্দ দিয়েছে। এমন বিনোদন সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারলে যুবসমাজ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হবে। মাদক থেকে মুক্তি পাবে।”