দেশের সব আদালতে বিচারপ্রার্থী মানুষের বিশ্রামস্থল হিসেবে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ নির্মাণ করা হবে বলে প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন।
Published : 11 Apr 2023, 11:26 PM
মামলার জট কমাতে নিম্ন আদালতে শতাধিক বিচারক এবং হাই কোর্টে কয়েকজন বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন দেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
তবে ইতোমধ্যে দেশে মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়েছে বলে জানান তিনি।
মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ‘ন্যায়কুঞ্জ’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি দ্রুত মামলা জট কমিয়ে আনার। সুপ্রিম কোর্টে গত বছর ৮২ হাজার নতুন মামলা ফাইল হয়েছে। নিষ্পত্তি হয়েছে ৭৯ হাজার। অর্থাৎ ডিসপোজাল রেট ৯৫ শতাংশ।”
এখন প্রতি জেলায় যে পরিমাণ নতুন কেইস ফাইল হচ্ছে, তারচেয়ে বেশি পরিমাণ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে এখনও ৪০ লক্ষ কেইস পেন্ডিং রয়েছে। এর জন্য বর্তমানে জজের সংখ্যা মাত্র ২ হাজার।
“মামলা জট দ্রুত কমাতে আমরা চেষ্টা করছি নতুন বিচারক নেওয়ার। তাই দ্রুতই ১০১ জন জেলা জজসহ কিছু বিচারপতি নেওয়ার প্রসেস সম্পন্ন করা হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়াটি এখন পুলিশ ভেরিফিকেশন স্টেজে আছে। আমরা এই বছরেই তাদেরকে নিয়োগ দিতে পারব।”
বিচারকগণ পরিশ্রম করে দেশের যে মামলা জট তার সুরাহা করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ এই রাষ্ট্রের মালিক। প্রত্যেক দিন আদালত আঙ্গনে হাজার হাজার মানুষ বিচারপ্রার্থী হয়ে বিচারের আশায় কোর্টে আসেন। এজন্য তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। অথচ রাষ্ট্রের সেই মালিকদের কোর্টে বসার বা বিশ্রামের কোনো জায়গা নাই। শিশু নিয়ে একজন মা ব্রেস্ট ফ্রিডিং করাতে পারে না।
“তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই কষ্টটা লাঘব করার জন্য দেশের সমস্ত আদালতে বিচারপ্রার্থী মানুষের বিশ্রামস্থল হিসেবে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ নির্মাণের, যাতে আদালতে এসে তারা স্বস্তিতে বসতে পারে, কিছু আহার করতে পারে। এ জন্য সরকার ৩৫ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছে। অর্থাৎ ৬৪টি জেলায় প্রতিটিতে আমরা প্রায় ন্যূনতম ৫০ লক্ষ টাকা করে দিতে পারব।”
যেখানে বেশি জনসমাগম হয়, সেখানে একটু বেশি টাকা দিয়ে ন্যায়কুঞ্জ বানানো হবে বলে তিনি জানান।
মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে ন্যায়কুঞ্জের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে অন্যদের মধ্যে মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ মো. শহীদুল্লাহ, জেলা প্রশাসক মো. আজিজুল ইসলাম, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক মো. তোহিদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. রাফিউল আলম, মুখ্য বিচারিক হাকিম আবু বক্কর সিদ্দিক, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি কামরুল হাসান, সাধারণ সম্পাদক খ ম ইমতিয়াজ বিন হারুন জুয়েল উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী নিজের আইন পেশায় মেহেরপুর জেলার স্মৃতি তুলে ধরেন।
পরে তিনি জেলার বিচারকদের সঙ্গে বৈঠক করে জেলা আইনজীবী সমিতির সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন।
প্রধান বিচারপতি আইনজীবীদের পেশায় আরও পরিশ্রমী ও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান। তা না হলে বিচারপ্রার্থী মানুষ সঠিক সময়ের মধ্যে বিচার পাবে না মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আইনজীবীদের মাসে অন্তত একটি মামলা ফি ছাড়া করে দরিদ্র বিচারপ্রার্থী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান।
তিনি বলেন “বার ও বেঞ্চের মধ্যে সমম্বয় থাকতে হবে; তা না হলে বিচারাঙ্গন অর্থবহ হবে না। ইদানীং দেশের বিভিন্ন স্থানে বার ও বেঞ্চের মধ্যে কিছু ঘটনা আমাদের হতাশ করেছে।”
আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, “বিচারকদের নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে আপনারা সরাসরি আমাকে বলবেন। কিন্তু মানুষের সামনে বার এবং বেঞ্চের সম্পর্ক নষ্ট করবেন না। আজ সারাদেশের বিচারকরা অত্যন্ত ভালো কাজ করছে। সে কারণেই মামলা ডিসপোজাল সংখ্যা এত বেড়ে গেছে।”
প্রধান বিচারপতি পরে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স এলাকায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন শিল্পকর্ম ঘুরে দেখেন। এ সময় তিনি সব বিচারক ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। শেষে স্মৃতিসৌধ পাদদেশে একটি সফেদা ফলের চারা রোপন করেন।