পদ্মা সেতু খুলল, মেট্রোরেল চলল

নতুন বছরে চালু হচ্ছে কর্ণফুলী টানেল; দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন।

জাফর আহমেদজ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Dec 2022, 04:30 AM
Updated : 31 Dec 2022, 04:30 AM

দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্ব ব্যাংকের সরে যাওয়ার এক দশক পর এ বছরের মাঝামাঝিতে চালু হলো নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু। আর বছরের শেষ প্রান্তে যানজটের নগরী ঢাকাতে মিললো মেট্রোরেলের অভিজ্ঞতা। 

মেগা প্রকল্প চালুর এখানেই শেষ নয়, নতুন বছরেই চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে খুলছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। শেষ হবে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ কাজও, ফলে আগামী বছরই ট্রেনে কক্সবাজার যাওয়া যাবে সরাসরি। একই বছরে ঢাকায় উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারে মেট্রোরেলের চলাচল শুরু হবে। 

শেষ হওয়া বছরে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না, নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। অবশ্য সেতু চালু হলেও দক্ষিণাঞ্চলে প্রত্যাশিত বিনিয়োগ হয়নি, যার জন্য রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধকে দুষছেন ব্যবসায়ীরা। 

বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি শেখ লিয়াকত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পদ্মা সেতুর কারণে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ দূরত্ব কমে যাওয়ায় এই অঞ্চলে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ হওয়ার আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দার এই সময়ে বিনিয়োগের সেই সাড়া পাচ্ছি না। 

“যৌক্তিকভাবেই এই মন্দার সময়ে বিনিয়োগে স্থবিরতা আসতে পারে- এটা স্বাভাবিক। তবে ঢাকার সঙ্গে দূরত্ব কমে যাওয়ায় মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টায় ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ স্থপতি হওয়ায় আমরা মোংলা বন্দরে আমদানি-রপ্তানি প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে পাওয়ার আশা করেছিলাম।” 

পদ্মা সেতু 

বিশ্বের অন্যতম খরস্রোতা নদী পদ্মায় নির্মিত সেতুটি ২৫ জুন উদ্বোধন করা হলে সেই খবর গুরুত্ব পায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও।এ সেতুতে অর্থায়নের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল বিশ্ব ব্যাংক, ঋণের চুক্তিও হয়েছিল, কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর সরকারের সঙ্গে শুরু হয় সংস্থাটির টানাপড়েন। 

দুর্নীতির সেই অভিযোগ কানাডার আদালত কিংবা দেশে দুদকের তদন্তে প্রমাণিত হয়নি। সেতু উদ্বোধনের আগে সেই জটিলতা নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের আক্ষেপ প্রকাশের কথা জানিয়েছিলেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছিলেন, “শেষ পর্যন্ত বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, পদ্মা সেতু থেকে সরে যাওয়া ভুল হয়েছে।” 

নানা নাটকীয়তা ঘটনার মধ্যে সম্ভাব্য দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকে সরে যাওয়ার পরই অনেকটা জেদের বশেই নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়, যা পরিণতি পায় এ বছর। 

উদ্বোধনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নিছক একটি সেতু নয়, এটা বাংলাদেশের ‘সামর্থ্য আর আত্মবিশ্বাসের প্রতীক’। 

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে সড়কপথে রাজধানীর নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনের পর বরিশাল ও খুলনার মানুষ ঢাকায় যাতায়াত করছেন মাত্র ৩ থেকে ৪ ঘণ্টায়। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শাকসবজিসহ নানা ধরনের কৃষিপণ্য আসছে রাজধানীতে। রাতে পদ্মা নদীতে জেলের জালে ধরা পড়া ইলিশ সকালে পৌঁছে যাচ্ছে রাজধানীবাসীর রান্না ঘরে। 

পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ওই অঞ্চলের বিশেষ করে কৃষক ও জেলেরা বেশি লাভবান হচ্ছেন বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। 

আমদানি বেড়েছে, বিনিয়োগও চাই 

পদ্মা সেতু চালু হলেও ইউক্রেইন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দায় দক্ষিণে বিনিয়োগে যেমন গতি আসেনি, তেমনই কর বিভাগের ‘নীতি বৈষম্যের’ কথাও বলছেন ব্যবসায়ীরা। 

বাগেরহাট জেলা চেম্বারের সভাপতি শেখ লিয়াকত আলী বলেন, পানগাঁও বন্দর কিম্বা ঢাকা আইসিডি থেকে পণ্য খালাস করতে যে পরিমাণ শুল্কায়ন করা হচ্ছে, মোংলা বন্দরে তার দ্বিগুণ শুল্কায়ন করা হচ্ছে। 

উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সম্প্রতি বিদেশ থেকে কন্টেইনারে করে শীতের কাপড় আমদানি করেন এক ব্যবসায়ী। এর মধ্যে একটি কন্টেইনার পানগাঁও বন্দর দিয়ে এবং আরেকটি কন্টেইনার মোংলা বন্দর দিয়ে খালাস করা হয়েছে। 

“পানগাঁও থেকে এক কন্টেইনার পণ্য আমদানিতে শুল্কায়ন করা হয়েছে ২২ লাখ টাকা। আর মোংলা বন্দর থেকে আমদানি করা একই পণ্য ও কন্টেইনারের শুল্কায়ন করা হয়েছে ৪০ লাখ টাকা।” 

শেখ লিয়াকতের ভাষ্য, “আমরা জেনেছি অন্য বন্দরে একটি জ্যাকেটকে ছোট জামা হিসেবে দেখিয়ে এক ধরনের শুল্কায়ন করা হচ্ছে। কিন্তু মোংলা বন্দরের শুল্ক কর্মকর্তারা কোনও ছাড় দিচ্ছেন না।” 

তবে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু করার পর বন্দরের আমদানি-রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ জুলাই থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৪০ লাখ ৪৮ হাজার টন পণ্য রপ্তানি ও আমদানি করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৭৭ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি ছিল প্রায় ২২ লাখ ৮৮ হাজার টন। 

পদ্মা সেতুর আয় কেমন 

গত ২৬ জুন সর্বসাধারণের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর প্রথম দিনে প্রায় ৫১ হাজার গাড়ি পারাপার হয়েছিল। তবে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার সূত্র ধরে সেতুতে মোটর সাইকেল ওঠা নিষিদ্ধ করায় যানবাহন চলাচলের সংখ্যা কিছুটা কমে আসে। 

প্রথম পাঁচ দিনেই ১ লাখ ১৭ হাজারের বেশি যানবাহন পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করে, টোল আদায় হয়েছিল দৈনিক গড়ে ২ কোটি ৩ লাখ টাকার। 

এরপর ১ জুলাই থেকে সেতু বিভাগ দৈনিক যানবাহন চলাচল ও টোল আদায়ের দৈনিক তথ্য প্রকাশ শুরু করে। 

তাতে দেখা যায়, জুলাই মাসে প্রতিদিন গড়ে যানবাহন চলেছে ২৫ হাজার ১৪৫টি, নভেম্বর মাসে এই সংখ্যা ১৮ হাজার ৬৪০টি গাড়ি। সার্বিকভাবে দৈনিক ২ কোটি টাকার বেশি টোল আদায় হয়েছে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রস্তাবে উদ্বোধনের বছর গড়ে দৈনিক ১৩ হাজার যানবাহন চলাচল করবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। ওই সমীক্ষায় দৈনিক এক কোটি টাকা করে টোল আদায় হতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিল। বাস্তবে যানবাহন চলাচল ও টোল আদায় হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। 

প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসলে পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের সমীক্ষা করা হয়েছিল ২০০৮-০৯ সালের দিকে। তখন ২০১৫ সালে প্রকল্প শেষ হতে পারে হিসাব করে প্রাক্কলন করা হয়েছিল। 

“কিন্তু ২০২২ সালে প্রকল্প শেষ হওয়ায় এবং এই সাত বছরে দেশের যানবাহনের সংখ্যা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই যানবাহন চলাচল এবং টোল আদায় দুটোই বেড়েছে। তবে আমাদের সর্বশেষ প্রাক্কলনে আমরা যে ধারণা করেছিলাম, এখন যান চলাচল এবং টোল আদায় প্রায় কাছাকাছি।“ 

নতুন বছরে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেল চলাচল শুরু হলে টোল আদায় বাড়বে বলে জানান তিনি। 

৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের ঋণ পরিশোধের বিষয়ে তিনি বলেন, “প্রতিটি প্রকল্পই ঋণ পরিশোধ শুরু করার জন্য একটা রেয়াতকাল দেওয়া হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্যও এই রকম একটি রেয়াতকাল দেওয়া উচিত। 

“এখন থেকেই ঋণ পরিশোধ শুরু হলে সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণে ঘাটতিতে পড়তে পারে। তাই অন্তত দুই বছর রেয়াতকাল রেখে ঋণ পরিশোধ শুরু করার সুযোগ দিলেও ঠিক মতো ঋণ পরিশোধ করা যাবে।” 

ঘুরল মেট্রোরেলের চাকা 

ঢাকাবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেল চালু হল ২৮ ডিসেম্বর; যানজটের নগরীতে ঠিক সময়ে ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোর আশা দেখাচ্ছে আধুনিক এই গণপরিবহন। 

২৮ ডিসেম্বর বর্ণিল আয়োজনে দেশের প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; পরে পতাকা নাড়িয়ে ট্রেন চালু করে দিয়ে টিকেট কেটে যাত্রী হয়ে তিনি গন্তব্যেও গিয়েছেন। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধান বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় আরেকটি পালক, আজ বাংলাদেশ তথা ঢাকায় আমরা দিতে পারলাম, সংযোজিত করতে পারলাম। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা।” 

জাপানের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। 

নির্মাণকাজ চলার মধ্যে প্রথম দফায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার থেকে ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথে বৈদ্যুতিক ট্রেনে সাধারণ যাত্রীদের চলাচল শুরু হয়েছে। 

দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালুর মাধ্যমে দুর্বার গতিতে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

মেট্রোরেলের সুবিধা নেওয়ার সঙ্গে উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন এই বাহন ব্যবহারের ক্ষেত্রে নাগরিকদের দায়বদ্ধতার বিষয়ও স্মরণ করিয়ে দেন সরকারপ্রধান। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, রক্ষণাবেক্ষণে সচেতনতা ও নিয়ম মেনে চলার অনুরোধ জানান সবাইকে। 

শেখ হাসিনা বলেন, “নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করে বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতি সারা বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে। আমরা আজকে আরেকটি নতুন অহঙ্কারের পালক বাংলাদেশের মুকুটে সংযোজিত করলাম।” 

ঢাকাকে যানজটমুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় মেট্রো নেটওয়ার্ক নির্মাণের কাজ শেষ করার আশা প্রকাশ করেন তিনি। মোট ছয়টি লাইনের এই মেট্রো নেটওয়ার্ক দিয়ে পুরা শহরের মানুষকে সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মেট্রোরেল চালু করার আমাদের যে সম্পূর্ণ পরিকল্পনা, তা চালু হওয়ার সাথে সাথে আমাদের দেশের মানুষের কর্মক্ষমতা বাড়বে, যোগ্যতা বাড়বে, কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে আর আমাদের জিডিপিতেও যথেষ্ট অবদান রাখবে।”  

খুলছে বঙ্গবন্ধু টানেল 

চট্টগ্রামের ইতিহাসের অন্যতম বড় উন্নয়ন প্রকল্প কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ চালু হচ্ছে নতুন বছরের শুরুতেই। 

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, “প্রকল্পটির কাজ শেষ করে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য টানেল খুলে দিতে পারব বলে আমরা আশা করছি।” 

চীনের সাংহাই শহরের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউনের আদলে চট্টগ্রাম নগর ও আনোয়ারার মধ্যে সরাসরি সংযোগের জন্য এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। গত ২৫ নভেম্বর কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের দক্ষিণ টিউবের পূর্তকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্তি ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। কিন্তু চীনের সঙ্গে চুড়ান্ত ঋণ চুক্তিতে কিছুটা কালক্ষেপণে কারণে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়ে ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে। 

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই প্রথমবারের মতো ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই টানেলে প্রতিটি টিউব বা সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। একটির সঙ্গে অপর টিউবের দূরত্ব ১২ মিটারের মতো। প্রতিটি টিউবে দুইটি করে মোট চারটি লেন তৈরি করা হয়েছে। 

নগরীর পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় নেমে যাওয়া এই টানেল কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ-পূর্বে আনোয়ারায় সিইউএফএল ও কাফকোর মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে স্থলপথে বের হবে। ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার টানেলে দুটি টিউব দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। 

তবে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা এই প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। 

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, “প্রকল্পটির প্রাথমিক প্রস্তাবে (ডিপিপি) টানেলের অভ্যন্তরীণ বিদ্যুতায়নে মাত্র ১ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। অথচ টানেলের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার জন্য অন্তত ১৫ মেগাওয়াটের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রয়োজন। এই কার্যক্রমে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২ কোটি টাকায়। 

“আবার টানেলের নিরাপত্তায় নতুন করে স্ক্যানার মেশিন বসানো হচ্ছে। আরও কিছু নতুন সংযোজন করতে হচ্ছে। বিশেষ করে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ছে।” 

দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেললাইন 

নতুন বছরের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা থেকে রেলযোগে কক্সবাজারে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে দেশবাসীর। 

প্রকল্পট পরিচালক মফিজুর রহমান জানিয়েছেন, আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে প্রকল্পটি শেষ করার জন্য দ্রুত গতিতে কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির মোট অগ্রগতি হয়েছে ৭৮ শতাংশ। 

“প্রকল্পটির আওতায় দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কিলোমিটার রেল লাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এরমধ্যে কক্সবাজার অংশে রেললাইন বসানো হয়ে গেছে, যা বাকি আছে তা দোহাজারী অংশে। 

“সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পুরোটাই শেষ হয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি।”

দোহাজারী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিদ্যমান যে রেললাইন আছে, তাতে নতুন করে পাথর ফেলে শক্তিশালী করা হবে বলেও জানান প্রকল্প পরিচালক মফিজুর। 

“কক্সবাজারের ঝিনুক আকৃতির আইকনিক রেলস্টেশন নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। স্টেশনটির পূর্ত কাজ শেষ। এখন অভ্যন্তরীণ ফিটিংসের কাজ চলছে।”

চট্গ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ করছে সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় ৩৯টি সেতু ও ২৪২টি কালভার্ট করা হচ্ছে। বন্যহাতি চলাচলের জন্য আন্ডারপাস ও ওভারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে।