একাত্তরে গণহত্যার স্বীকৃতি দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রে র‍্যালি

আসছে ৩ অক্টোবর জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৫১তম অধিবেশনে ৩ নম্বর এজেন্ডায় রয়েছে বাংলাদেশের জেনোসাইড।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Oct 2022, 07:31 AM
Updated : 1 Oct 2022, 07:31 AM

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী এদেশে যে গণহত্যা চালিয়েছে তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রের টাইমস স্কোয়ারে র‌্যালি করেছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

শুক্রবার বিকেলে ‘হাই টাইম টু রিকগনাইজ জেনোসাইড ইন বাংলাদেশ ১৯৭১-অ্যানিহিলেশন অব থ্রি মিলিয়ন ইন অনলি নাইন মান্থ’ লেখা ব্যানার সামনে নিয়ে জাতিসংঘের কাছে এ দাবি জানান তারা।

সমাবেশ উদ্বোধন করেন ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুব জামান। চিত্রাঙ্কন পর্বের উদ্বোধন করেন সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদউল্লাহ। স্বাগত বক্তব্য দেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কর্মী মিথুন আহমেদ।

ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আশরাফুল হাসান বুলবুল, লুৎফুন্নাহার লতা, সুব্রত বিশ্বাস, মুজাহিদ আনসারী, মিনজাহ আহমেদ সাম্মু ও সেমন্তি ওয়াহেদ। র‍্যালি থেকে একাত্তরের গণহত্যার প্রতীকী চিত্র আঁকেন মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমাম, মাহমুদুল হাসান রোকন, কাইসার কামাল, জেবুন্নেসা কামাল, আলমা লিয়া ও মিথুন আহমেদ।

তাজুল ইমাম বলেন, “আমি গণহত্যার জন্য যে ফায়ারিং স্কোয়াড ছিল সেই দেয়ালের ছবি আঁকছি। পেছনে ধ্বংসযজ্ঞ-বাড়ি ঘরে আগুন লাগানোর দৃশ্য, সামনে লাশ পড়ে আছে। সেটাই হচ্ছে এই ছবির থিম অর্থাৎ জেনোসাইডের ব্যাপারে বিশ্বসম্প্রদায়ের সামনে অবিকল একটি চিত্র উপস্থাপনের প্রয়াস এটি।”

প্রবাসী বাংলাদেশি ডেনিস জুলিয়াস ঐশো (১২) বলেন, “১৯৭১ সালে পাকবাহিনী নির্বিচারে ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা, চার লাখের বেশি নারীর সম্ভ্রমহানি করেছে। ওরা কোটি বাঙালির বাড়িঘর জ্বালিয়ে ছাই করে দিয়েছে। পুড়িয়ে হত্যা করেছে অসংখ্য শিশু-নারী এবং প্রবীণকে। পাকিস্তানি হায়েনার দল সাড়ে ৭ কোটি মানুষের একটি জাতিগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। ওরা বাঙালির মায়ের ভাষা মুছে ফেলতে চেয়েছিল। বাঙালি সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার নির্লজ্জ প্রয়াস চালিয়েছিল। এসব কী গণহত্যা নয়? তাহলে গত ৫১ বছরেও কেন এ গণহত্যার স্বীকৃতি দেয়নি জাতিসংঘ? এই দাবি আদায়ের জন্য আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে?”

নতুন প্রজন্মের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন আব্রাহাম আরজু, জুবাইদা বাতেন ও সারাহ। র‍্যালিতে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বারি, মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার, মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক, মুক্তিযোদ্ধা ইমদাদুল হক নাসিমুন্নাহার নিনি, ওবায়দুল্লাহ মামুন, আল আমিন বাবু, ফাহিম রেজা নূর, লুৎফুন্নাহার লতা, রোকেয়া রফিক বেবী, জাকির হোসেন বাচ্চু, সঞ্জিবন সরকার, জাকির আহমেদ রনি, মাহফুজা হাসান, মুজাহিদ আনসারী, সাগর লোহানি, ক্লারা রোজারিয়ো, শরাফ সরকার, কানু দত্ত, শাহ ফারুক, মাসুদ মোল্লাহ, এম এ বাতিন, সুলেখা পাল, হিরো চৌধুর ও আলীমউদ্দিন।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের চিহ্নিত এবং আন্তর্জাতিক সংস্থায় এর স্বীকৃতির প্রশ্নে প্রবাসীরা আগে থেকেই সোচ্চার থাকলেও তা এখন প্রবল হয়ে উঠেছে তা জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের এজেন্ডায় পরিণত হওয়ায়। আসছে ৩ অক্টোবর এ পরিষদের ৫১তম অধিবেশনে ৩ নম্বর এজেন্ডায় রয়েছে বাংলাদেশের জেনোসাইড। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসরদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে এটি একটি মাইলফলক বলে মনে করা হচ্ছে।