প্রথম বঙ্গবন্ধু গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেল ‘প্ল্যানেট গ্রিন আফ্রিকা’

২০২১ সালের নভেম্বরে জলবায়ু সম্মেলন চলার সময় এ পুরস্কার প্রবর্তনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2022, 03:58 PM
Updated : 7 Dec 2022, 03:58 PM

আফ্রিকার দেশ মালাবির বেসরকারি সংস্থা ‘প্ল্যানেট গ্রিন আফ্রিকা’ পেল প্রথম ‘কমনওয়েলথ-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’।

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাই কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মালাবির কৃষিতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির প্রসারে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্ল্যানেট গ্রিন আফ্রিকাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার লন্ডনে দুই দিনের ‘কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান প্ল্যানেট গ্রিন আফ্রিকার প্রতিনিধির হাতে এ সম্মাননা তুলে দেন।

২০২১ সালের নভেম্বরে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৬) চলাকালে কমনওয়েলথ-সিভিএফ-এর ‘ক্লাইমেট প্রসপারিটি পার্টনারশিপ’ শীর্ষক এক উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে যৌথভাবে এই পুরস্কার প্রবর্তনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন কমনওয়েলথের মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড এবং কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিলের (সিডব্লিউইআইসি) চেয়ারম্যান লর্ড মারল্যান্ড।

কমনওয়েলথ মনোনীত একটি জুরি বোর্ড জোটভুক্ত ৫৪টি সদস্য দেশের পরিবেশবান্ধব ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্ভাবনী প্রযুক্তি-নির্ভর ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করে। যাচাই-বাছাইয়ের পর অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, ঘানা ও মালাউইর চারটি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়।

এরপর জুরিবোর্ড এই চার প্রতিষ্ঠান থেকে প্ল্যানেট গ্রিন আফ্রিকাকে চূড়ান্তভাবে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করে।

সালমান এফ রহমান অনুষ্ঠানে বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগেই ১৯৭২ সালের ১৮ এপ্রিল কমনওয়েলথের সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক অবদানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তার সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মালাউইর প্ল্যানেট গ্রিন আফ্রিকাকে এই পুরস্কার হস্তান্তর করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত।

“আশা করি, এই পুরস্কার কমনওয়েলথভুক্ত ৫৪টি সদস্য দেশে জলবায়ুবান্ধব ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তি-নির্ভর টেকসই ব্যবসার প্রসার উৎসাহিত করবে।”

বাংলাদেশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে কমনওয়েলথের মহাসচিব এবং সিডব্লিউইআইসির চেয়ারম্যানকে ‘বঙ্গবন্ধু গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড' ঘোষণার জন্য ধন্যবাদ জানান সালমান এফ রহমান।

সিডব্লিউইআইসি-এর আনুষ্ঠানিক কৌশলগত সদস্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বেজা) যোগদানের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “কমনওয়েলথের বিজনেস-টু-বিজনেস কানেক্টিভিটি লিড কান্ট্রি হিসেবে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে ২ ট্রিলিয়ন (দুই লাখ কোটি) ডলারের আন্তঃকমনওয়েলথ বাণিজ্য লক্ষ্য অর্জন ত্বরান্বিত করতে সিডব্লিউইআইসির গ্লোবাল নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করবে।”

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ, জ্বালানি, জলবায়ু ও পরিবেশ বিষয়কমন্ত্রী লর্ড গোল্ডস্মিথ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা, পরিবেশের অনুকূল ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, নারীর ক্ষমতায়ন এবং মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অসাধারণ ভূমিকার প্রশংসা করেন।

বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বছরের পর বছর ধরে আশ্রয় ও সুরক্ষা দেওয়ার জন্যও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বলেন, স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে প্রথম কমনওয়েলথের সদস্যপদ পায়। বঙ্গবন্ধু কমনওয়েলথের মূল্যবোধের প্রতি দ্ব্যর্থহীন একাত্মতা ঘোষণা করেন।

সেই ঐতিহাসিক ঘটনা স্মরণীয় করে রাখতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ‘বঙ্গবন্ধু গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রবর্তনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আজ এই পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে কমনওয়েলথের ৫৪টি দেশে জাতির পিতার মূল্যবোধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলার পাশাপাশি জলবায়ু-বান্ধব প্রযুক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিভিন্ন উদ্ভাবনী উদ্যোগ উৎসাহিত করতে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে বিশেষভাবে তুলে ধরা হল।”

কমনওয়েলথের মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড যুক্তরাজ্যের বাইরে থাকায় এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি। তবে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, “এই পুরস্কার কমনওয়েলথে বাংলাদেশের নেতৃত্বের ও অংশীদারিত্বের আরেকটি বড় উদাহরণ যা কমনওয়েলথে ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি ব্যবসায় সবুজ অর্থায়ন আরও উৎসাহিত করবে এবং আমাদেরকে কম কার্বন, উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও জলবায়ু সহনশীল অর্থনীতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।”

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান লর্ড মারল্যান্ড কমনওয়েলথজুড়ে নতুন প্রজন্মকে পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবনে, বিশেষ করে জলবায়ুর সুরক্ষা সহায়ক ব্যবসা-বাণিজ্যে ‘বঙ্গবন্ধু গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রেরণা যোগাবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আগামীতেও এ পুরস্কার প্রদান অব্যাহত থাকবে।

যুক্তরাজ্যের এসএলএম পার্টনার্সের চেয়ারম্যান ও বঙ্গবন্ধু গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড-এর জুরি বোর্ডের অন্যতম সদস্য জাস্টিন মুন্ডি অনুষ্ঠানে পুরস্কারের মনোনয়ন ও চূড়ান্ত নির্বাচনের প্রক্রিয়া তুলে ধরেন।

‘বঙ্গবন্ধু গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণের পর প্ল্যানেট গ্রিন আফ্রিকার প্রতিনিধি এমবুনডেরি কাম্পেসি এ পুরস্কারের জন্য তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিলসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, “কমনওয়েলথ এবং বাংলাদেশের জাতির পিতার নামে প্রবর্তিত এই বিশেষ অ্যাওয়ার্ড প্ল্যানেট গ্রিন আফ্রিকাসহ কমনওয়েলথ পরিবারে পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও জলবায়ু-বান্ধব ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্যোগকে আরও উৎসাহিত করবে।”

অনুষ্ঠানে কমনওয়েলথভুক্ত বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজজের প্রতিনিধি, ব্রিটিশ ও ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী এবং বিভিন্ন পেশাজীবীসহ ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।