নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন স্থগিত

যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসীদের সামাজিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ সোসাইটি’র নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দিয়েছে নিউ ইয়র্ক স্টেট সুপ্রিম কোর্ট।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2021, 06:42 AM
Updated : 13 Nov 2021, 06:42 AM

২৭ হাজার ৫১০ ভোটের এ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ১৪ নভেম্বর। সেভাবেই পাঁচটি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরাও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

কিন্তু নিরু এস নীরা নামে এক প্রবাসীর দায়ের করা মামলায় অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার নিউ ইয়র্ক স্টেট সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় থমকে গেল সব কার্যক্রম। এর আগে ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর একইভাবে স্থগিত হয়েছিল এ নির্বাচন।

মামলায় বাংলাদেশ সোসাইটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল আহমেদ জনিসহ সবাইকে ২৪ নভেম্বরের মধ্যে আত্মপক্ষ সমর্থন করে জবাব দিতে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে শুনানির দিন ধরা হয়েছে ২ ডিসেম্বর।

তবে এবারের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারির ব্যাপারটি অপ্রত্যাশিত ছিল না। প্রবাসী কমিউনিটিতে জল্পনা-কল্পনা চলছিল যে আবারও থামিয়ে দেওয়া হতে পারে নির্বাচনের আয়োজনকে। এর ফলে নির্বাচন কমিশনের কেউ কেউ খুশি হলেও দুই প্যানেল এবং স্বতন্ত্রসহ ৩৮ প্রার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি কর্মঘণ্টারও অপচয় ঘটলো বলে তারা অভিযোগ করেছেন।

শেষ মুহূর্তে নির্বাচন স্থগিত হওয়ার জন্য কে বা কারা দায়ী তা চিহ্নিত করার দাবি উঠেছে কমিউনিটিতে। প্রবাসীরা জানান, ৪৬ বছরের পুরনো এ সংগঠনে এবারই প্রথম সবচেয়ে বেশি প্রবাসী নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে সদস্য বা ভোটার হয়েছেন।

নিউ ইয়র্ক স্টেট সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের কপি

২০১৭ ও ২০১৮ সালে প্রবাসীরা সদস্য ফরম পূরণ করেন দু’বছর মেয়াদি কার্যকরী কমিটির নির্বাচনে ভোট দিতে। নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর। তার দুদিন আগে সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ এসেছিল। সে আবেদন করেছিলেন নির্বাচনে অংশগ্রহণের মনোনয়নপত্র বাতিলের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করা দুই সদস্যপ্রার্থী আলী আকবর বাপ্পী ও লিটন। সেই মামলার জট খুলে গত বছরের মার্চে।

এরপর মহামারীর অজুহাতে নির্বাচন ঝুলে ছিল। অবশেষে নতুন তারিখ ঘোষণা করা হলেও অনেক প্রবাসী নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দিহান থাকার পাশাপাশি সোসাইটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে না বলে অভিযোগ করছিলেন। এমনকি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী একটি প্যানেলের প্রতি নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতের অভিযোগও করা হয়েছে আরেকটি প্যানেলের সমাবেশ থেকে।

সবকিছু মিলিয়ে পুনরায় নির্বাচন স্থগিত হওয়ার সংবাদ জানাজানি হওয়ার পর নতুন দাবি উঠেছে নির্বাচন কমিশন বিলুপ্তির এবং নতুন করে সদস্য-তালিকার। নতুন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী আবারও মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার কথাও বলেছেন সংস্থাটির আজীবন সদস্যরা।

শুক্রবার রাতে বাংলাদেশ সোসাইটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান এম আজিজ ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার পৃথক পৃথকভাবে জানান, স্থগিতাদেশ নিয়ে সোসাইটির অ্যাটর্নির সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তার পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তারা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এতবড় একটি নির্বাচন, এত মানুষ সম্পৃক্ত আর কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করার পর শেষ মুহূর্তে তা থমকে দাঁড়ানো সত্যি দুঃখজনক। এটা কারও কাম্য ছিল না। স্থগিতাদেশের কপির সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠায় সোসাইটির কর্মকর্তারা তাদের অ্যাটর্নির মাধ্যমে শনিবার সুপ্রিম কোর্টে খোঁজ নেবেন বলে উল্লেখ করেছেন সোসাইটির এ দুই কর্মকর্তা।

এ নির্বাচনে 'নয়ন-আলী’ এবং ‘রব-রুহল’ প্যানেল ছাড়াও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একজন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। সভাপতি পদে লড়ছিলেন কাজী আশরাফ হোসেন নয়, মো. রব মিয়া ও জয়নুল আবেদীন, সাধারণ সম্পাদক পদেও তিন প্রার্থী- মোহাম্মদ আলী, রুহুল আমিন সিদ্দিকী ও আব্দুল মোমেন সোহেল।

স্থগিতাদেশের পর সভাপতিপ্রার্থী কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন বলেন, “আমরা হতাশ হয়েছি। এমন পরিস্থিতির জন্যে যারা দায়ী তাদেরকে চিহ্নিত করা দরকার এবং সামাজিকভাবে বর্জনেরও প্রয়োজন রয়েছে।”