প্রবাসের উজ্জ্বল তারুণ্যের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এক সন্ধ্যা

নতুন প্রজন্মের ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের সঙ্গে আনন্দময় একটি সন্ধ্যা কাটালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; তিনি বললেন, প্রাণবন্ত এই প্রবাসী কমিউনিটিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে দুই দেশের অংশীদারিত্বের ভিত।

সৈয়দ নাহাস পাশা লন্ডন প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Nov 2021, 07:19 AM
Updated : 4 Nov 2021, 10:25 AM

গ্লাসগোতে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে বুধবার লন্ডনে পৌঁছে ব্রিটিশ ফরেইন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের লকার্নো রুমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্ট আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ মন্ত্রী পেনি মরটন, হাউজ অব লর্ডসের সদস্য জিতেস গাধিয়া, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের তিন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলী, রূপা হক ও আপসানা বেগমসহ বেশ কয়েকজন এমপি। 

প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাথে কথা বলার সময় বেশ উৎফুল্ল ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এসেছিলেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটির তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা, যাদের মধ্যে গবেষক, ফুটবলার, সংগীত শিল্পী এবং নবীন উদ্যোক্তারাও ছিলেন।

খোলামেলা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে পেরে তারা ছিলেন দারুণ উচ্ছ্বসিত। প্রধানমন্ত্রীও আগ্রহ নিয়ে তাদের কথা শুনেছেন, ছবি তোলার জন্য তাদের সঙ্গে দাঁড়িয়েছেন ক্যামেরার সামনে। বঙ্গবন্ধুর আরেক মেয়ে শেখ রেহানাও এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।

অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের অংশীদারিত্বের কেন্দ্রে রয়েছে প্রাণবন্ত ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটি।

“প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে আমরা গর্বিত। ওয়েস্টমিনস্টারে তাদের প্রতিনিধিত্ব ক্রমশ বাড়ছে, তাতে আমি খুবই আনন্দিত। এখন যে চারজন (বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি) আছেন, তাদের সবাই নারী।”

শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যতে এ কমিউনিটির আরও অনেকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে জায়গা করে নেবে, এ বিষয়ে তিনি আত্মবিশ্বাসী।  

 

বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে এ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন ফুটবলার হামজা চৌধুরী। ২৪ বছর বয়সী হামজা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লেস্টার সিটির মিডফিল্ডার।

তিনিই একমাত্র বাঙালি যিনি এখন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলছেন। প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে ক্যামেরাবন্দি হওয়ার সুযোগ হারাতে চাননি তিনি। 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম হামজা বলেন, মা-বাবাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে পেরে তিনি সম্মানিত বোধ করছেন।

প্রধানমন্ত্রী যখন হামজার সাথে কথা বলছিলেন, পাশে থাকা শেখ রেহানা বলেন, তার ছেলে ববিও (রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক) দেখেন হামজার খেলা।

এ সময় পেছন থেকে একজন বলে ওঠেন, সালমান এফ রহমান তো হামজাকে আবাহনীতে নিয়ে যেতে চান। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বাংলাদেশের ক্লাব আবাহনী লিমিটেডের চেয়ারম্যান।

ব্রিটিশ বাংলাদেশি তরুণ গায়ক সৈয়দ নিশাত মনসুরকে লন্ডনের বাঙালিরা চেনেন নিশ নামে। তিনি নিজে গান লেখেন এবং পিয়ানো বাজান। নতুন প্রজন্মের ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় নিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পেরে দারুণ খুশি।

ব্রিটিশ ফরেইন অফিসের কর্মকর্তা যখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিশাত মনসুরের  পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেলেন, শেখ হাসিনা তখন বলেন, “কই, গান তো শুনলাম না।”

তরুণ গবেষক সাদিয়া খানমও প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে এসেছিলেন বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে। প্রধানমন্ত্রীও আগ্রহভরে শোনেন সাদিয়ার কথা।

২৬ বছর বয়সী সাদিয়া খানম এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী এক স্প্রে তৈরি করে আলোচনায় আসেন। পরে বিভিন্ন দেশ থেকে ওই জীবাণুনাশকের জন্য তিনি ১০ মিলিয়ন পাউন্ডের অর্ডার পাওয়ার কথা তিনি জানিয়েছেন। 

সাদিয়ার বাবা কবির আহমদ লিভারপুলের কাছে এলেসমেয়ার পোর্ট শহরে রেস্তোরাঁর ব্যবসা করেন। তিনি জানান, তার মেয়ে এখন পিএইচডি করছে, পাশাপাশি তার ব্যবসাও চালাচ্ছে।

ফরেন অফিসের লকার্নো রুমের এ অনুষ্ঠানটি ছিল প্রধানমন্ত্রীর আগের অনেক অনুষ্ঠানের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। নিরাপত্তার অতি কড়াকড়ি ছিল না বলে সবাই ছিলেন বেশ প্রাণবন্ত। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে এই অনুষ্ঠান।

যুক্তরাজ্যের নানা ক্ষেত্রে ব্রিটিশ বাংলাদেশি নতুন প্রজন্মের সাফল্য দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ছিলেন দারুণ খুশি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম ছাড়াও ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটির শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।