নিউ ইয়র্কে বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে বিজয় দিবসের সমাবেশ অনুষ্ঠিত

মর্যাদা ও উৎসবের আমেজে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশন এবং এবং বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল, নিউ ইয়র্ক যৌথভাবে বিজয় দিবস উদযাপন করেছে।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2019, 01:10 PM
Updated : 17 Dec 2019, 02:18 PM

সোমবার সকালে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপনের সূচনা হয়। সেইসময় মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

সন্ধ্যায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে বিজয় দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। 

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক নেতারা, ব্যবসায়ী এবং সাংবাদিকরা আলোচনায় অংশ নেন।

উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে উঠে আসে জাতির পিতার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম, বাঙালির বিজয় অর্জনের ইতিহাস, মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধকালীন স্মৃতি, দেশের উন্নয়ন এবং রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের বিভিন্ন দিক।

আলোচকরা জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী সামনে রেখে বাংলাদেশকে তার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করার লক্ষ্যে স্ব স্ব অবস্থান থেকে অবদান রাখার দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা জানান।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন এবং এরপর শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়। এরপর বিজয়ের দিন উপলক্ষে দেওয়া রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনানো হয়।

আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।

বক্তব্য দিচ্ছেন কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা।

রাষ্ট্রদূত তার স্বাগত বক্তব্যেই স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও দুইলাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনসহ সকল মুক্তিযোদ্ধার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল, একটি দায়িত্বশীল ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত। জাতিসংঘেও আমাদের অবস্থান অত্যন্ত সম্মানের”।

তিনি এলডিসি থেকে উত্তরণ, রোহিঙ্গা ইস্যু, এসডিজি বাস্তবায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন, বিশ্ব শান্তি রক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ইস্যুতে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন।

প্রবাসী বাংলাদেশীদের কর্মকাণ্ড বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি করছে বলেও উল্লেখ করেন রাবাব ফাতিমা।

রেমিটেন্স পাঠানো ছাড়াও দক্ষতা, নলেজ রেমিটেন্স ও বিনিয়োগের মাধ্যমে সরাসরি দেশের উন্নয়নে আরও ভূমিকা রাখতে প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা তার বক্তব্যে বিজয়ের দিনে দেশের উন্নয়নে প্রায় এক কোটি প্রবাসী বাংলাদেশির অবদানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আপনারাই বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের প্রকৃত প্রতিনিধি। আপনাদের প্রেরিত রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে বিশেষ অবদান রাখছে”।

নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের সাথে রাষ্ট্রদূত ও কন্সাল জেনারেল।

যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা শিশুদের বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি শিক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি অভিভাবকদের ধন্যবাদ জানান।

সফলভাবে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উৎক্ষেপনের কথা উল্লেখ করে কনসাল জেনারেল বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন”।

তিনি বিদেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে বিচারের আওতায় আনতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহায়তা চান।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বক্তব্য দেন আব্দুল মুকিত চৌধুরী, রাশেদ আহমেদ, ডা. বাতেন। শহীদ পরিবারের সন্তানদের পক্ষে বক্তব্য দেন- মাসুদুল হাসান ও ফাহিম রেজা নুর।

এছাড়া প্রবাসী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে বক্তব্যদের আইরিন পারভীন, শাহনাজ মমতাজ ও মুজাহিদুল ইসলাম। প্রবাসীদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন নাইমা খান ও শেলী এ মুবদি।

আলোচনা পর্ব শেষে স্থানীয় সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী বাপা এর শিল্পীরা দেশাত্ববোধক ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশন করে। সঙ্গীত ও কবিতার সাথে নৃত্যের পরিবেশনা অনুষ্ঠানটিতে ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়। অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোর শিল্পীদের উপহার হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’ বই দুটি দেওয়া হয়।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!