নিউ ইয়র্কে শিল্পী তৈয়বার ব্লেডের তৈরি শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে কূটনীতিকরা

জনবান্ধব কূটনীতির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশি শিল্পী তৈয়বা বেগম শিল্পীর একক প্রদর্শনীতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2019, 04:19 PM
Updated : 16 May 2019, 04:39 PM

তার আমন্ত্রণে শিল্পী তৈয়বার শিল্পকর্মের চলমান একক প্রদর্শনীতে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিভিন্ন দেশের কন্সাল জেনারেলসহ জাতিসংঘের পদস্থ কর্মকর্তাদের এক সমাবেশ ঘটে।

নিউ ইয়র্ক সিটির মিড টাউনে চেলসির ‘সুন্দরম টেগোর গ্যালারি’তে ২ মে শুরু এই প্রদর্শনী চলবে ১ জুন পর্যন্ত।

প্রদর্শনী কেন্দ্রে সমবেত কূটনীতিক-সুধীজন।

এরইমাঝে শিল্পীর উপস্থিতিতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের নিয়ে এ সমাবেশের মাধ্যমে প্রকারান্তরে বাঙালিদের বিশেষ শৈল্পিক চেতনাকে উপস্থাপনের চেষ্টা চালিয়েছেন সাদিয়া।

শিল্পীর নিজস্ব ভঙ্গিমার ভাস্কর্য, আলোকচিত্র এবং ভিডিও ইন্সটলেশন।

শিল্পী জানান, নারীর অস্তিত্ব এবং তার চেতনার স্বরূপকে সন্ধান করতে চেয়েছেন তিনি। আর সে প্রয়াস পরিলক্ষিত হয়েছে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ইকোলজিক্যাল এবং বায়োফিজিক্যাল নিরিখে।

লিপির স্বপ্নের এ নারীরা তারই প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছেন ব্লেডে তৈরি এসব শিল্পকর্মে। তিনি তার ভাস্কর্যকর্মের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছেন ‘শাণিত প্রতীক’। সে প্রতীক হচ্ছে স্টিলের ‘রেজর ব্লেইড’। একটির সাথে আরেকটির সুনিপুণ জোড়া লাগিয়ে তৈরি করেছেন ভাস্কর্য।

তার সাবজেক্ট হচ্ছে- মেয়েদের জুতা, বুট, হাইহিল, স্যান্ডেল, ব্যাগ, ইস্ত্রি, ইস্ত্রি করার টেবিল, সেলাই মেশিন, ট্রেডমিল, মেয়েদের অন্তর্বাস, দোলনা ইত্যাদি। সবই মেটালিক, ব্লেড দিয়ে তৈরি।

রেজর ব্লেইডকে ভাস্কর্য তৈরির প্রধান উপাদান হিসেবে বাছাই করার প্রসঙ্গে শিল্পী বলেন, “নিজের জন্ম থেকেই ব্লেডের ব্যবহার। মা-বাবার ১২ সন্তানের এগারতম আমি। সকলের জন্মই বাড়িতে। আমি দেখেছি জন্মের সময় ধাত্রীরা কেবল একটি যন্ত্র ব্যবহার করেন- সেটি রেজর ব্লেড, নাড়ি কাটার জন্যে। সেই স্মৃতিতে তাড়িত হয়েই রেজর ব্লেইডকে আমার মাধ্যমে পরিণত করেছি।”

শিল্পী জানান, শিল্পের উপকরণ হিসেবে রেজর ব্লেইড বেছে নেওয়া নারীবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে নানা জায়গায় তিনি ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছেন। 

প্রদর্শনীতে রেজর ব্লেডে তৈরী জুতা এবং হাই হিল।

সমাবেশে নিজের অনুভূতি ব্যক্তকালে লিপি বলেন, “প্রদর্শনীস্থলে এসে অনেকেরই মনে হতে পারে যে, এটি একটি শো রুম, বিক্রয় কেন্দ্র। সেভাবেই সাজানো সবকিছু। আর এ প্রদর্শনীর নাম দেও হয়েছে, ‘দিস ইজ হোয়াট আই লুক লাইক’।”

প্রদর্শনীতে ভাস্কর্যের পাশাপাশি রয়েছে দুই গ্রুপে ১০টি করে আলোকচিত্র। সবগুলোই শিল্পী লিপির কাজ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে ড্রইং ও পেইন্টিংয়ে ১৯৯৩ সালে মাস্টার্স করেছেন তৈয়বা লিপি। এরপর ২০০০ সালে তিনি ডাবলিনে আইরিশ মিউজিয়াম অব  মডার্ন আর্টে আর্টিস্ট ইন রেসিডেন্স হন। ২০০৩ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এশিয়ান আর্ট বিনিয়ালে সেরা শিল্পীর পুরস্কার পান। ২০১১ সালে ভেনিস বিনিয়ালে বাংলাদেশ প্যাভেলিয়নের কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন।

প্রদর্শনীতে রেজর ব্লেডে তৈরী লিপির প্রতিচ্ছবি।

কন্সাল জেনারেল সাদিয়ার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে প্রদর্শনীতে এসেছিলেন ভারতের কন্সাল জেনারেল সন্দ্বীপ চক্রবর্তী, জর্জিয়ার কন্সাল জেনারেল ডায়ানা জিগনেটি, সৌদি আরবের কন্সাল জেনারেল খালেদ আলশরিফ, থাইল্যান্ডের কন্সাল জেনারেল নিপন পেচপর্নপ্রপাস, তুরস্কের ভাইস কন্সাল ডেমলা সেমলিক, কুয়েতের কন্সাল জেনারেল হামাদ এ আল হাজিম, সিঙ্গাপুরের কন্সাল জসিম উই, মেক্সিকোর রাজনীতি বিষয়ক কন্সাল জর্জ টুডন, এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহকারি পরিচালক নিকিতা দেশাই, নেপালের কন্সাল জেনারেল মি. পুষ্প।

এছাড়াও ছিলেন নাইজেরিয়ায় বাংলাদেশের হাই কমিশনার শামিম আহসান, বেইজিং অলিম্পিকে স্বর্ণবিজয়ী আর্টিস্ট খুরশিদ আলম সেলিম, আর্টিস্ট-অভিনেত্রী বিপাশা হায়াত, আর্টিস্ট মাহবুবুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের প্রেসিডেন্ট মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের প্রেসিডেন্ট লাবলু আনসার এবং সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক কানু দত্ত। ছিলেন জাতিসংঘের পদস্থ কর্মকর্তারাও। তারা সকলেই লিপির শিল্পকর্মের প্রশংসা করেছেন।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!