প্রবাসে প্রথম ম্যারাথন দৌড়ে

লন্ডন ম্যারাথনে প্রতিবছর আবেদন পড়ে প্রায় অর্ধ মিলিয়নের মতো। তবে সবাই দৌড়ানোর সুযোগ পান না। বিপুলসংখ্যক এই লোকের সামাল দেয়া লন্ডন কর্তৃপক্ষের পক্ষে সম্ভব নয়।

নাঈম হাবিব, জার্মানি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2019, 06:23 PM
Updated : 8 May 2019, 06:24 PM

তাই তারা চালু করেছেন ব্যালট সিস্টেম। লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে কে দৌড়াবেন। যাদের নাম আসবে লটারিতে, শুধু তারাই পারবেন দৌড়াতে। বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয় ‘লন্ডন ম্যারাথন’। আপনি চাইলেই লন্ডন ম্যারাথনে দৌড়াতে পারবেন না, যদিও লন্ডনবাসী হন। লন্ডন ম্যারাথনে দৌড়ানটা আসলে লটারি ভাগ্যের উপর নির্ভর করে।

এবার চল্লিশ হাজারেরও বেশি দৌড়বিদের অংশগ্রহণে গত ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় লন্ডন ম্যারাথন। দৌড়াতে আবেদন করেছিলেন বিশ্বের অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ।

আমি শখের বসে আবেদন করতে গিয়ে একটা ধাক্কা খেলাম, নিয়ম-কানুন ও এর জনপ্রিয়তা দেখে। লন্ডন ম্যারাথন ওয়েবসাইট ঘেঁটে জানতে পারলাম রেকর্ডসংখ্যক আবেদন পড়েছিল এই বছর। যুক্তরাজ্য ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আবেদন পড়েছিল সত্তর হাজারের মতো।

লন্ডন ম্যারাথনে দৌড়াতে প্রস্তুতি নিতে হয় এক বছর আগে থেকে। ২০২০ সালের লন্ডন ম্যারাথনে দৌড়াতে এখনি আবেদনের সময়। আমি গত সপ্তাহে আবেদন করি। টিকিট পাইনি এখনো।

একবার থাইল্যান্ড গিয়েছিলাম একটা ভাষা কোর্স করতে। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ছিলাম। থাকতে হয়ছিল অনেকদিন সেখানে। ভাষা কোর্সের ফাঁকে ফাঁকে থাইল্যান্ডে আর কী দেখার এবং করার আছে? নিয়মিত ইন্টারনেটে খুঁজতাম আমি।

বিজ্ঞাপনে দেখলাম, ব্যাংককের লুমপিনি পার্কে ম্যারাথন দৌড় হবে। ঠিক করলাম, দৌড়ে অংশ নেবো। ব্যাপারটা আমার এক বন্ধুকে বললাম। সে বললো, আবেদন করে ফি প্রদান করতে হবে। ভাবলাম, আমার সঙ্গে মজা করছে সে? দৌড়াব আমি, আবার আমাকে টাকা দিতে হবে, এ কেমন কথা? মজা ছাড়া আর কিছুই নয় এটা!

বন্ধু জিজ্ঞেস করল, ফুল না হাফ ম্যারাথন দৌড়াব আমি? বললাম, অবশ্যই ফুল ম্যারাথন! একটি ফুল ম্যারাথন ৪২ কিলোমিটার আর হাফ ম্যারাথন ২১ কিলোমিটার দৌড়াতে সেদিনই প্রথম জানলাম। আরও জানলাম একটি ফুল ম্যারাথন দৌড়াতে কমপক্ষে এক-দেড় বছরের প্রশিক্ষণ থাকতে হয়। আর হাফ দৌড়াতে ছয় মাসের।

টিভিতে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা দেখে ভাবতাম, কিছুলোক দলবেঁধে দৌড়বেন এ আবার কি কঠিন হতে পারে? ম্যারাথন সম্পর্কে আমার তেমন ধারণা ছিলনা। বিশ্বের আর সব খেলাধুলার মতো ম্যারাথনও একটি জনপ্রিয় খেলা! প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ম্যারাথন-দৌড়ের প্রতিযোগিতা হয়। দৌড়বিদ উসাইন বোল্টকে তো আমরা সবাই চেনি। সর্বকালের দ্রুততম মানব বলা হয়ে থাকে। অন্যান্য সব খেলাধুলার মতো ম্যারাথনেও রয়েছে অর্থ উপার্জনসহ নাম কামানোর সুযোগ।

বন্ধু সেদিন পাঁচ কিলোমিটার 'ফান রানে' অংশ নেওয়ার পরামর্শ দিল। কথা মতো আবেদন করে থাইল্যান্ডের চারশ টাকা ফি প্রদান করলাম। বিনিময়ে অংশগ্রহণকারী হিসেবে পেলাম একটি ম্যারাথন টি-শার্ট।

নির্ধারিত দিনে টি-শার্ট ও ম্যারাথন নাম্বার সংগ্রহ করে সঠিক সময়ে হাজির হই ব্যাংককের লুমপিনি পার্কে। দেখি দলে দলে মানুষ আসছেন দৌড়াবেন বলে। ছোট-বড়, বুড়া-বুড়ি, চীনা, ভারতীয়, থাই, ইউরোপিয় সবজাতীয় মানুষের অংশগ্রহণে এ যেন এক মিলনমেলা জমছে এখানে। থাইল্যান্ডে বসবাসরত বাংলাদেশিরাও অংশ নিয়েছিলেন এ দৌড়ে। টানানো হয়েছিল লাল-সবুজের পতাকা। খুব বেশি আনন্দ লাগছিল আমার দেশের পতাকা দেখে।

ম্যারাথনে স্পন্সর প্রতিষ্ঠানগুলো বিনামূল্যে বিলিয়ে যাচ্ছিল নানা জিনিস, কলম, চকলেট, মিল্ক, এনার্জি ড্রিঙ্কস, তেল, থলে, নুডলস, থাই বাম ও আরও অনেক কিছু। জরুরি ডাক্তার, পুলিশ প্রয়োজনে ছিল অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও।

ম্যারাথন টি-শার্ট পড়ে কেউ কেউ বাড়িয়ে সেজেগুজে এসেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে হুইসেল বাজিয়ে দৌড় শুরু হয়। নারী-পুরুষ মিলেমিশে দৌড়ুলেন এক সঙ্গে। কোনো ঠেলাঠেলি, ধাক্কাধাক্কি দেখলাম না। থাই নতুন বছর চলছিল তখন। এজন্য বাড়তি আনন্দ ছিল। দৌড়েই চলছিল বর্ষবরণ। একদল বন্দুকে ভরে পানি ছুড়ছিলেন সবার উপর। বর্ষবরণে থাই-রা পানি খেলায় মেতে ওঠেন। বিশ্বে খুবই জনপ্রিয় থাই পানি উৎসব। এ উৎসবের সামিল হতে প্রতিবছর প্রচুর বিদেশি পর্যটক আসেন থাইল্যান্ডে।

বাদ্যযন্ত্রের তালে অতি উৎসাহ-আনন্দের সঙ্গে দৌড়ালেন সবাই। কয়েক হাজার দৌড়বিদের সঙ্গে দৌড়ানটা সত্যিই আনন্দের ব্যাপার। দৌড়বিদদের জন্য সারা পথ জুড়ে রাখা হয়েছিল ঠাণ্ডা পানি ও জুসের ব্যবস্থা। পিপাসায় জিরিয়ে পানি খেয়ে আবার দৌড়াই আমি। সেটা ছিল আমার প্রথম ম্যারাথন!

প্রথম ম্যারাথনের সেই আনন্দময় স্মৃতি ভোলার নয় কোনদিন। কোনরকম হাঁপাতে হাঁপাতে ফিনিশ লাইনে গেছিলাম সেদিন। দৌড় শেষে সবাইকে একটি করে মেডেল দেওয়া হয়। শেষে ছিল সবার জন্য হালকা খাবারের আয়োজন।

এরপর অবশ্য আরও অনেকগুলো আন্তর্জাতিক ম্যারাথনে দৌড়েছি আমি। দেশের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিই দেখা একশোরও বেশি আন্তর্জাতিক ম্যারাথনে অংশ নেয়া শৌখিন দৌড়বিদ জার্মান-বাংলাদেশি শিবশংকর পাল থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০২০ সালের লন্ডন ম্যারাথনে আবেদন করি। লটারির মাধ্যমে বাছাই হবে কে সুযোগ পাবেন আগামী লন্ডন ম্যারাথনে। চলতি বছর অক্টোবরে চিঠি দিয়ে জানাবে আগামী লন্ডন ম্যারাথনে টিকিটপ্রাপ্তদের নাম।

যদি পাই টিকিট, ২০২০ সালের এপ্রিলের পর কোনো এক লেখায় বলবো লন্ডনে দৌড়ানোর গল্প। অপেক্ষা সে দিনের।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!