সোমবার মধ্যরাত থেকে শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা

ইস্টার সানডের প্রার্থনার মধ্যে গির্জা আর পাঁচ তারা হোটেলে একযোগে বোমা হামলায় ২৯০ জনের মৃত্যুর পর শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি করা হচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2019, 09:39 AM
Updated : 22 April 2019, 03:16 PM

সোমবার মধ্যরাত থেকে পুরো শ্রীলঙ্কায় এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের মিডিয়া ইউনিট এক বিবৃতিতে বলেছে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়তেই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল জরুরি অবস্থা জারির এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এর ফলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী আদালতের পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার, তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করার অনেক বেশি ক্ষমতা পাবে। তবে এক্ষেত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা হবে না বলে ওই বিবৃতিতে আশ্বস্ত করা হয়েছে।  

এদিকে রাজধানী কলম্বোতে টানা দ্বিতীয় রাতের মত কারফিউ জারি করেছে শ্রীলঙ্কা সরকার। সোমবার রাত ৮টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত এই কারফিউ বলবৎ থাকবে।  

রোববার সকাল ও দুপুরে দুই দফায় তিনটি গির্জা ও চারটি হোটেলসহ আট জায়গায় ওই বোমা হামলার পর শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি অভিযান চলছে। এ পর্যন্ত ২৪ জনকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা শ্রীলঙ্কার নাগরিক।   

গত বছর একটি বৌদ্ধমূর্তি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শ্রীলঙ্কার উগ্রপন্থি মুসলিমদের সংগঠন ন্যাশনাল তাওহীদ জামায়াতের নাম খবরে এসেছিল।

শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভার মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজিথা সেনারত্নে বলেছেন, রোববারের হামলার পেছনে ‘ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত’ নামে শ্রীলঙ্কার একটি উগ্রপন্থি মুসলিম সংগঠন রয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন।

গত বছর একটি বৌদ্ধ মন্দির গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ন্যাশনাল তাওহীদ জামাতের নাম প্রথমবারের মত খবরে এসেছিল।

তবে কেবল স্থানীয় কোনো দলের পক্ষে এত ব্যাপক মাত্রায় সমন্বিত হামলা চালনো সম্ভব বলে মনে করেন না রাজিথা সেনারত্নে। তার বিশ্বাস, কোনো আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক এর পেছনে রয়েছে ।

প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার অফিস বলেছে, শ্রীলঙ্কায় যে একটি বিদেশি সন্ত্রাসী গ্রুপের সহায়তায় হামলা হতে পারে, সে বিষয়ে দুই সপ্তাহ আগেই সতর্ক করেছিল একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা। তাই তদন্তের ক্ষেত্রে বিদেশি সরকারগুলোর সহযোগিতা চাওয়া হবে।

তদন্তকারীদের বরাত দিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার সকালে তিনটি গির্জা ও তিনটি হোটেলে হামলায় অংশ নেয় মোট সাতজন আত্মঘাতী হামলাকারী। এর মধ্যে শাংরি-লা হোটেলে দুইজন হামলাকারী নিজেদের উড়িয়ে দেয়।  

সকালের হামলার কয়েক ঘণ্টা পর কলম্বোর আরও একটি হোটেল এবং একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটে। তবে ওই দুটো ঘটনায় ঠিক কী ঘটেছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

রয়টার্স জানিয়েছে, হামলার পর থেকে চলা অভিযানের মধ্যে কলম্বোর প্রধান বাস টার্মিনাল এলাকায় ৮৭টি বোমার ডেটোনেটর পেয়েছে পুলিশ। কলম্বোর বন্দরনায়েকে বিমানবন্দরের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি পাইপ বোমা।

এছাড়া দিয়াতালাভার কাহাগোলা এলাকা থেকে চায়নিজ অ্যাসল্ট রাইফেরের ১৫২টি গুলি এবং নাইন এমএম বোরের গুলির আটটি ক্লিপ উদ্ধার করা হয়েছে। 

এই তল্লাশি অভিযানের মধ্যে সোমবার বিকালে সেইন্ট অ্যান্থনির গির্জার কাছে পুলিশ সদস্যরা একটি বোমা নিষ্ক্রিয় করার সময় বিস্ফোরণ ঘটলে সেই শব্দে আতঙ্কিত লোকজন ছুটোছুটি শুরু করে। 

শ্রীলঙ্কার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই গির্জাও রোববারের হামলায় আক্রান্ত হয়, হতাহত হয় বহু মানুষ।