নির্বাচন নিয়ে প্রবাসীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে শুরু হয়েছে মানুষের নানা তর্ক, সমালোচনা ও প্রত্যাশা। দেশের হাট-বাজার, চায়ের দোকান কিংবা গণপরিবহনে উঠলে টের পাওয়া যায় নির্বাচনী উত্তাপ।

প্রবাস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2018, 04:54 AM
Updated : 13 Dec 2018, 04:18 PM

পৃথিবীর ১৬৫ দেশে প্রায় ১ কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। নির্বাচন ঘিরে তাদের রয়েছে দেশে এসে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা ও পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করার আশা।

সুইজারল্যান্ডে বসবাস করেন ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট অমি রহমান পিয়াল। তিনি বলেন, “সত্তর দশকের মাঝ পর্যন্ত বিদেশে ‘বাংলাদেশ’ কথাটা শুনলেই লোকে আগ্রহী হতো, কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করতো- তুমি শেখ মুজিবের দেশের লোক! এরপর একটা সময় সবুজ পাসপোর্ট ছিলো এক অপমানের নাম। লাইন থেকে বের করে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করা হতো বাংলাদেশিদের। সেই দিন আর নেই, আবার বদলেছে।”

তিনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনার জনমুখী ও উন্নয়ননির্ভর রাষ্ট্র পরিচালনার সুফল পাচ্ছে সেই সবুজ পাসপোর্ট। বাংলাদেশের পাসপোর্ট। এই গর্বের জায়গা আমি ধরে রাখতে চাই। সে কারণেই চাই আগামী নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগ আসুক, দেশের শাসনভার শেখ হাসিনার হাতেই থাকুক। পাশাপাশি আমার প্রত্যাশা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুরোপুরি বাস্তবায়ন এবং এখনও জীবিত সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার তার জীবদ্দশাতেই তিনি সেরে যান। বাংলাদেশ আরও এগোক। লোকে যেন নাম শুনেই বলে- তুমি শেখ হাসিনার দেশের লোক! জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।”

সুইডেনে থাকেন লেখক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলামনিস্ট সাব্বির খান। প্রবাসে থেকে তিনি ১৯৭২ এর সংবিধানের আলোকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক স্বদেশ দেখতে চান।

নির্বাচন নিয়ে সাব্বির বলেন, “২০১৮ সালের নির্বাচন সুস্পষ্টভাবে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে সামিল হওয়ার নির্বাচন। একাত্তরের মতো করে এ নির্বাচনে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির বিজয় আমি দেখতে চাই।”

ডেনমার্কে বসবাস করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিদ্যুৎ বড়ুয়া। আগামী নির্বাচনে প্রবাসীরা ভোট দিতে ‘প্রবাসীবান্ধব দল’ খুঁজছে বলে জানান তিনি।

বিদ্যুৎ বলেন, “প্রবাসীদের ভোট দেওয়া সহজতর করা, প্রবাসীদের স্মার্ট কার্ড প্রবাসী মিশনগুলো থেকে দিলে সরকার আরও বেশি প্রশংসা পাবে।”

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক ভিপি বিদ্যুৎ আরও বলেন, “প্রবাসীদের কল্যাণে নতুন নতুন বাংলদেশ মিশন ও কনসুলার অফিস করে সরকার সেবা দিচ্ছে। এছাড়া প্রবাসী মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া, প্রবাসী সন্তানদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোটা প্রচলন, বিদেশগামী কর্মীদের জন্য  স্বল্পসুদে ঋণসহ আর্থিক সুবিধা দিতে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ভোট দেওয়ার সময় প্রবাসীরা নিশ্চয়ই এগুলো মাথায় রাখবেন।”

বর্তমানে জার্মানে পড়াশোনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শান্তা তাওহিদা। তিনি জানান, শিশুমৃত্যুর হার কমানো ও নারীর ক্ষমতায়নে সাফল্য দেখিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। গ্রামীণ নারী, নারী উদ্যোক্তা, মেয়েদের শিক্ষাব্যবস্থা, চাকরিতে নারীর অধিকার, রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো ইত্যাদিতে সাফল্য রয়েছে দলটির। আগামী নির্বাচনে এটাও কি-পয়েন্ট হতে পারে।

নরওয়েতে পিএইচডি করছেন বাংলাদেশি ছাত্র সাইফ ইশতিয়াক। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছু সুপারিশ জানালেন তিনি, শিক্ষায় দশম শ্রেণি পর্যন্ত গ্রেডিং সিস্টেম উঠিয়ে দিয়ে শিশুদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষা করতে হবে। এতে কোচিং বাণিজ্যও বন্ধ হবে। স্নাতকে স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষাঋণ দিতে হবে। গবেষণাখাতে বাজেট বাড়াতে হবে।

নিরাপদ সড়ক তৈরিতে আইন কঠোর হওয়া উচিত বলে মনে করেন সাইফ। যোগাযোগ ব্যবস্থায় যারা উন্নতি আনতে পারবেন আগামীতে সেই দলকেই জনগণ ভোট দেবে বলে মনে করেন তিনি।

প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান বসবাস করছেন জার্মানিতে। তিনি জানান, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে জার্মানির প্রবাসীদের মধ্যেও বেশ আগ্রহ ও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।

হাবিবুর বলেন, “এ নির্বাচনটি হতে চলছে কোনও দলীয় সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, যা নিঃসন্দেহে সরকার, নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশকে জিততেই হবে, তা না হলে এখন পর্যন্ত জাতীয় জীবনের অনেক অর্জন পিছিয়ে যাবে।”

বাংলাদেশে নবনিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহোলদ বলেন, “আপনার একটি ভোট যেন আবারো রাজাকার বা তাদের উত্তরসূরিদের মন্ত্রী বানিয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে ৩০ লাখ শহীদ আর লাখো বীরাঙ্গনার আত্মত্যাগকে অপমান করতে না পারে, এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।”

সুইডেনে প্রবাস জীবনযাপন করছেন প্রকৌশলী হেদায়েতুল ইসলাম। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সূচনা থেকে প্রবাসীদের বিশেষ অবদান রয়েছে। আসছে নির্বাচনে আবারও আমরা বরাবরের মতো নড়েচড়ে বসেছি আরও একটি সফল নির্বাচন দেশবাসীর সঙ্গে দেখবো বলে।”

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!