‘পাকিস্তানিরা তোমাদের খুব টরচার করেছে? খুবই সংগ্রাম করে তোমরা দেশ স্বাধীন করেছো’। কানাডিয়ান এক নারীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল- সিনেমাটা কেমন লাগলো? সেই প্রশ্নের উত্তর দেবার আগে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁডে দেন তিনি।
আবার তাকে প্রশ্ন করা হয়- ছবির ঠিক কোন জিনিসটা তোমাকে টেনেছে? ‘যুদ্ধটা’- বলেই হন হন করে হাঁটতে থাকেন তিনি। অবাঙালি এই তরুণী এসেছিলেন টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে বাংলা চলচ্চিত্র মেঘমল্লার দেখতে। কেবল এই তরুনীই নন- প্রবাসী ছাড়াও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভিনদেশি দর্শক ভিড় জমিয়েছিলেন মেঘমল্লার দেখতে।
টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালের 'ডিসকভারি-দি ফিউচার অব ওয়ার্ল্ড সিনেমা' বিভাগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রদর্শিত হয় জাহিদুর রহিম অঞ্জন পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি মেঘমল্লার।
টরন্টোর মূলধারার সিনেপ্লেক্সের বড় পর্দায় বাংলা ভাষার সিনেমা- সম্ভবত এই কারণেই বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি স্কশিয়া ব্যাংক সিনেপ্লেক্সে ভিড় জমিয়েছিলেন। দর্শকদের মধ্যে ভিন্ন ভাষাভাষী দর্শকের সংখ্যাও ছিলো উল্লেখ করার মতো। হলভর্তি দর্শকরা পিনপতন নিস্তব্দতায় ছবিটি উপভোগ করেন।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ছোটগল্প 'রেইনকোট' অবলম্বনে নির্মিত ছবিটির কাহিনি বিন্যাস গড়িয়েছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় টানা তিনদিনের বর্ষার গল্প নিয়ে। মফস্বল শহরের সরকারি কলেজের রসায়নের শিক্ষক নুরুল হুদা এর মূলচরিত্র। মধ্যবিত্ত সংসার তার। আছে স্ত্রী আসমা ও ৫ বছর বয়সী কন্যা সুধা। আসমার ছোটভাই মিন্টুও থাকে তাদের সংসারে। কাউকে কিছু না বলে মিন্টু একদিন মুক্তিযুদ্ধে চলে যায়। এদিকে নুরুল হুদা পড়ে যান বিপদে।পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে একদিন তিনিও আবিষ্কার করেন যুদ্ধে না গিয়েও তিনি আসলে নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা। ছবিতে মফস্বল শহরের সরকারি কলেজের শিক্ষক নুরুল হুদা চরিত্রে অভিনয় করেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম, তার স্ত্রী আসমা চরিত্রে অপর্ণা ঘোষ। তার পাঁচ বছরের মেয়ে সুধা চরিত্রে অভিনয় করেছেন জারা। ছবিটি প্রযোজনা ও পরিবেশনায় রয়েছে বেঙ্গল এন্টারটেইনমেন্ট।
পশ্চিমা দেশে একটি উৎসবে নিজের ছবির প্রদর্শনী এবং দর্শকদের আগ্রহে উৎফুল্ল ছবিটির পরিচালক জাহিদুর রহিম অঞ্জনও। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানান, বাঙালির গৌরবের, অস্তিত্বের উপাদান মুক্তিযুদ্ধকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরতে পেরে তার খুবই ভালো লাগছে। বিশেষ করে ছবিটি দেখার পর অবাঙালি দর্শকদের মধ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং পাকিস্তানিদের নির্যাতন নিয়ে যে জিজ্ঞাসা তৈরি হয়েছে তাতে তিনি অনুপ্রাণিত বোধ করছেন।
প্রবাস জীবনের গল্প ও অভিজ্ঞতা এখন থেকে আমাদের সরাসরি জানাতে পারেন। পুরো নাম ও সংশ্লিষ্ট ছবিসহ লেখা পাঠিয়ে দিন এই ঠিকানায় probash@bdnews24.com