বৈরী সময়েও জাতির পিতার আদর্শকে এগিয়ে নিয়েছেন এস এ মালেক: প্রধানমন্ত্রী

“দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও নেতা-কর্মীদের শিক্ষা দেওয়া এবং তাদের জানানোর বিষয়টি এস এ মালেক অনেক দক্ষতার সঙ্গে করে গেছেন,” বলেন সরকারপ্রধান।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2023, 01:30 PM
Updated : 26 Feb 2023, 01:30 PM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সামনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে যে কয়জন অবদান রেখে গেছেন, তাদের মধ্যে ডা. এস এ মালেক একজন।

“অত্যন্ত বৈরী পরিবেশের মধ্যেও তিনি জাতির পিতার আদর্শকে সামনে নিয়ে এসেছেন এবং বিশেষ করে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও নেতা-কর্মীদের শিক্ষা দেওয়া এবং তাদের জানানোর বিষয়টি তিনি অনেক দক্ষতার সঙ্গে করে গেছেন,” বলেন সরকারপ্রধান।

বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী রোববার তার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা ডাক্তার এস এ মালেক স্মরণে ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তৃতা করছিলেন। বঙ্গবন্ধু পরিষদের কলাবাগান অফিসে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন তিনি।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এস এ মালেক গত ৬ ডিসেম্বর রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ফরিদপুর-১ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া এস এ মালেক ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। ভাষা আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলনসহ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সকল আন্দোলন-সংগ্রামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর কঠিন সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে এস এ মালেকের অবদানের কথা অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “তার লেখার হাত ভাল ছিল। সেই লেখনির মাধ্যমে জাতির পিতার আদর্শকে তুলে ধরার পাশাপাশি ভবিষ্যত বাংলাদেশ কেমন হবে সেটাও তিনি লিখে গেছেন। আমি মনে করি, সেগুলো আমাদের জন্য একটা বিরাট সম্পদ হিসেবে থাকবে।

“বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রচার, মানুষের মাঝে জনমত সৃষ্টি, লেখালেখি এবং সংগঠন করার ক্ষেত্রে তার অনেক অবদান রয়েছে। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন।”

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, স্কুল জীবন থেকে রাজনীতি করলেও তিনি কখনো আওয়ামী লীগের সভাপতি হবেন তা ভাবেননি। কিন্তু ১৯৮১ সালের কাউন্সিলের মাধ্যমে দল তার অনুপস্থিতিতেই তাকে সভাপতি নির্বাচিত করেছিল, সে কারণে তাকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসতে হয়েছিল।

ড. মালেক ও মোহাম্মদ হানিফ তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তারা জনমত তৈরি করেছিলেন এবং বিষয়টি দলীয় ফোরামে নিয়ে গিয়েছিলেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। সাংবাদিক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য অজিত কুমার সরকার আলোচনা সভায় ‘ডা. এস এ মালেক: বঙ্গবন্ধুর আদর্শ- আলোয় আঁকা সাহসী মানুষের প্রতিকৃতি’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

অন্যদের মধ্যে সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল খালেক এবং ডা. এস এ মালেকের ছেলে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক শেখ আবদুল্লাহ আল মামুন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

ডা. মালেককে রাজনীতি সচেতন হিসেবে বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল।

মুক্তিযুদ্ধে ডা. মালেকের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে অত্যন্ত বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। তার যুদ্ধক্ষেত্র কুষ্টিয়ায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর এয়ার রেইড চলার সময়ও তিনি বীরত্বপূর্ণ ভুমিকা নেন।

“৭৫ এ জতির পিতাকে হত্যার পর খুনি মোশতাক নিজেকে অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে অনেক সংসদ সদস্যকে আলোচনার জন্য ডেকেছিল। ডা. মালেক সেখানে যাননি এবং অনেককে সেখানে যোগদান থেকে বিরত রাখেন। পাশাপাশি দেশের মধ্যে খুনীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। ফলে এক সময় ভারতে তাকে আশ্রয় নিতে হয়।”

বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ট থাকায় তাকে ছোটবেলা থেকেই ‘মালেক ভাই’ হিসেবে ডেকে এসেছেন বলেও জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

রাজনৈতিক নেতা হলেও কোন ধরনের অহমিকা এস এ মালেকের ছিল না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আওয়ামী লীগের সাবেক এই উপদেষ্টা খুব সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। যা অর্থ পেতেন তাই মানুষের কল্যাণে ব্যয় করতেন। একজন এমবিবিএস চিকিৎসক হয়েও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করতেন বলে তার রোগ নির্নয় এবং নিরাময় অত্যন্ত কার্যকর ছিল।”

এক সময় প্রধানমন্ত্রী নিজেও ডা. মালেকের হোমিওপ্যাথি ওষুধ খেয়ে আরোগ্য লাভ করেছেন বলে অনুষ্ঠানে জানান।

১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে এস এ মালেকের ভূমিকা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “তিনি বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে নিজ হাতে ঝাড়ু নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন রাস্তা পরিষ্কার এবং ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করতে নেমে পড়েন। মানুষ যাতে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে না পড়ে সেজন্য ব্যবস্থা নেন।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার প্রতিবাদ করতে এবং তার আদর্শ জনসম্মুখে তুলে ধরার জন্যই বঙ্গবন্ধু পরিষদের সৃষ্টি। কারণ সে সময় শেখ মুজিব নামটাও ‘নিষিদ্ধ’ ছিল।

“আর মোশতাক রাষ্ট্রপতি হয়েই জিয়াকে সেনাপ্রধান করার ৩ মাসের মধ্যে জিয়া ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করলে এই বঙ্গবন্ধু পরিষদই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে প্রচার করার প্রয়াস নেয়।”

বঙ্গবন্ধু পরিষদ সৃষ্টির পেছনে ড. মতিন চোধুরী, বেগম সুফিয়া কামাল, বিচারপতি কে এম সোবহানসহ অন্যদের অবদানও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “আমরা জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই এদেশকে গড়ে তুলছি। করোনা অতিমারী এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা প্রতিকূলতার মাঝে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখাই আমাদের প্রচেষ্টা। এজন্য আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। ইনশাল্লাহ এই বাংলাদেশ একদিন উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবেই গড়ে উঠবে।”

তিনি বলেন, “মালেক ভাই যদি বেঁচে থাকতেন, হয়ত আরো বেশি দেখে যেতে পারতেন। তবে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি এ পর্যন্ত তিনি জেনে গেছেন।”

শেখ হাসিনা মরহুম ডা. এস এ মালেকের রুহের মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদকে সম্ভব সবধরনর সহযোগিতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে গেলেও তার সরকার দেশের অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

“জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলছি। আমরা বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছি। একদিন এই বাংলাদেশ একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে।"