মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা হত্যায় তাহেরের নাম জড়ানো ‘অযৌক্তিক’: বাংলাদেশ জাসদ

বাংলাদেশ জাসদ বলেছে, “দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, সীমাহীন দুর্নীতি ও নৈরাজ্যে নিমজ্জিত সরকার মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে সরানোর জন্য এ মামলা সামনে আনার কৌশল অবলম্বন করতে পারে বলে সন্দেহ করার অবকাশ রয়েছে।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2023, 01:38 PM
Updated : 14 May 2023, 01:38 PM

পঁচাত্তরে তিন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনায় প্রায় পাঁচ দশক বাদে যে মামলা হয়েছে, তাতে কর্নেল তাহেরের নাম যুক্ত করাকে ‘অযৌক্তিক ও অসংগত’ বলেছে বাংলাদেশ জাসদ।

সংগঠনটির সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান রোববার এক যুক্ত বিবৃতিতে দলের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছি যে, মামলায় অপ্রাসঙ্গিকভাবে কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তমকে হুকুমের আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৭৬ সালে জেনারেল জিয়ার গোপন ট্রাইবুনালে কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তমসহ নেতৃবৃন্দকে সাজা দেওয়া হয়।

“ওই সময় ট্রাইবুনালে কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তম কিংবা বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার কারো বিরুদ্ধে উক্ত তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা সামরিক কর্মকর্তা হত্যার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে আমরা প্রকাশিত রায়ে দেখিনি।”

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ ক্ষমতায় বসলেও চলছিল অস্থিরতা। এর মধ্যেই ৩ নভেম্বর সেনা কর্মকর্তা খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান হয়, গৃহবন্দি করা হয় তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে।

৭ নভেম্বর পাল্টা অভ্যুত্থান হয় জাসদ নেতা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে; তখন মুক্ত হন জিয়া। সেদিন নিহত হন মুক্তিযুদ্ধের দুই সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার বীর উত্তম এবং সাব সেক্টর কমান্ডার কর্নেল নাজমুল হুদা বীর বিক্রম।

Also Read: খালেদ মোশাররফসহ তিন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা হত্যায় ৪৮ বছর পর মামলা

৪৮ বছর পর ওই ঘটনার বিচার চেয়ে মামলা করেছেন নাজমুল হুদার মেয়ে সংসদ সদস্য নাহিদ ইজাহার খান।

গত ১০ মে ঢাকার শেরে বাংলা নগর থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে তিনি বলেছেন, সেই সময়ের সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান এবং জাসদ নেতা কর্নেল আবু তাহের বীর বিক্রমের ‘নির্দেশে’ তিন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়।

বাংলাদেশ জাসদ নেতারা বলছেন, জিয়া ক্ষমতা নেওয়ার পর গোপন আদালতে আনা অভিযোগ, শাস্তিসহ সমস্ত কার্যক্রম ২০১১ সালে উচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করে এবং কর্নেল তাহেরের ফাঁসি কার্যকর করাকে বেআইনি ঘোষণা করে কর্নেল আবু তাহেরকে ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে সম্মানিত করে।

“এ রায়ের পরে বীর উত্তম আবু তাহেরের উপর উক্ত তিন সামরিক কর্মকর্তা হত্যার আনীত অভিযোগ অযৌক্তিক এবং সংগত নয় বলে আমরা মনে করি।”

পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বরের ঘটনাপ্রবাহের নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ‘সত্য উদঘাটনের’ দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “বীর বিক্রম নাজমুল হক সাহেবের কন্যার পক্ষ থেকে এ মামলা করা হলেও গণমাধ্যমে এটা যেভাবে পরিবেশিত হয়েছে, তাতে এটা মনে করা অমূলক নয় যে এর পেছনে ক্ষমতাসীন মহলের মদদ রয়েছে।

“দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, সীমাহীন দুর্নীতি ও নৈরাজ্যে নিমজ্জিত সরকার মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে সরানোর জন্য এ মামলা সামনে আনার কৌশল অবলম্বন করতে পারে বলে সন্দেহ করার অবকাশ রয়েছে। সেজন্য নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সব ধোঁয়াশা কেটে সত্য উদঘাটন হোক, এটাই আমাদের কাম্য।”