“আমি মন্ত্রী হইমু ১৪ বার, প্রধানমন্ত্রী হইব দুইবার; তারপরে চান্স পাইলে হইব…। নো নেভার… এগুলো হয় না,” বলছেন এই বিএনপি নেতা।
Published : 13 Jan 2023, 07:50 PM
রাষ্ট্র মেরামতে বিএনপি যে ২৭ দফা রূপরেখার কথা বলে আসছে, তা বাস্তবায়ন ‘অসম্ভব নয়’ বলে মনে করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, তবে একটি বিষয়ে তিনি একমত নন।
টানা দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন না করার যে কথা বিএনপির রূপরেখায় বলা হয়েছে, তা নিয়েই তার ভিন্ন মত।
গয়েশ্বর মনে করেন, নিয়ম যদি তেমনটাই করতে হয়- তাহলে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম হওয়া উচিত।
“এখানে যে পর পর লেখা আছে- দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না; পরপর প্রধানমন্ত্রীর জন্য বার থাকলে- বাকিরা মন্ত্রী হবেন কেন? আনেন ইকুয়াল প্রিভিলেজ অ্যান্ড ইকুয়াল রাইটস, রেসপনসিবিলিটি সব তুলে দেন।
“আমি মন্ত্রী হইমু ১৪ বার, প্রধানমন্ত্রী হইব দুইবার; তারপরে চান্স পাইলে হইব…। নো নেভার… এগুলো হয় না। (নিয়ম) আনেন না পার্লামেন্টে দুইবারের বেশি এমপি হতে পারবে না। তাহলে তো অনেকটা চাপ কমে যায়। এগুলো করলে তো পরে অটোমেটিক্যালি রাজনীতিবিদরা ঠিক হয়ে যাবেন, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার দরকার হবে না।”
ওই রূপরেখা নিয়েই শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন গয়েশ্বর। তিনি জানান, ওই রূপরেখার বাস্তবায়ন সম্ভব, তিনি আত্মবিশ্বাসী।
“আমাদের মনে রাখতে হবে, শুরু করাটাই কষ্টের। যদি শুরু করতে পারেন, শেষ হবেই- হবে। আমরা বিলম্বে হলেও সচেতনভাবে যা শুরু করেছি, অবশ্যই তা বাস্তবায়ন হবে।”
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে গয়েশ্বর বলেন, “এটা ঠিক যে, আমরা ক্ষমতায় যাব- যদি দেশে একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। ক্ষমতায় গেলে আমরা কী করব- এ বিষয়ে সবার পূর্ব থেকে প্রস্তুতি দরকার। কারণ এখানে কেউ কেউ বলল আমাদের লিডারদের চরিত্র-টরিত্র নিয়া। তাহলে আমাদেরও বেশি দরকার যে, কার কী চরিত্র তা জেনে রাখা।
“যারা রাজনীতি করছেন, পদের জন্য দৌঁড়াইতেছেন, যারা ভাবছেন ক্ষমতায় গেলে তো একটা কিছু পামু। আমাদের যারা অ্যাক্টিভিস্ট আছে- তাদেরকে এ বিষয়টি (রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা) বেশি জানা দরকার, তাদের একটা মানসিক প্রস্তুতি দরকার যে- সব জনগণের জন্য, দেশের জন্য; আমার জন্য এক্সট্রা কিছু রাখা হয় নাই- এটা মনে করে আপনাদের কাজ করতে হবে।”
মিন্টু চান নতুন সংবিধান
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, “বায়াত্তর সালে একদলীয় লোকেরা এই সংবিধান তৈরি করেছে। যে সাতজন মেম্বার ছিলে সংবিধান প্রণয়ন কমিটিতে, তার মধ্যে দুইজন ছিলেন আওয়ামী লীগের বাইরে। ওই দুইজনের একজনও সেই সংবিধানে স্বাক্ষর করেননি। তাদের একজন ছিলেন সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এবং আরেকজন মানবেন্দ্র লারমা।
“দুনিয়াতে কেনো দেশ পাবেন না যে- একটা সংবিধান প্রণয়নে আলাদা কমিশন গঠিত না হয়। কনস্টিটিউশনাল যে অ্যাসেম্বলি থাকবে, সেই অ্যাসেম্বলিতে দুই-তৃতীয়াংশ যদি অনুমোদন না দেয়; তাহলে কখনও এটা গৃহীত হয় না।”
দেশ স্বাধীনের পর যে সংবিধান প্রণীত হয়, আওয়ামী লীগ তা ‘একদলীয় শাসন কায়েমের জন্য’ করেছিল অভিযোগ করেন মিন্টু।
তিনি বলেন, “যারা সংবিধান প্রণয়ন করেছেন, তারা কিন্তু সংবিধান প্রণয়নের উপযুক্ত লোকও ছিলেন না- দুই-একজন ছাড়া। উনাদেরকে কেউ ভোট দিয়ে এই কনস্টিটিউশন বানানোর জন্য অথোরিটিও দেয় নাই।
“এখানে আমাদের সম্মানিত স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য (গয়েশ্বর) বসা আছেন। আমি উনাকে অনুরোধ করব, তিনি যেন এই কথাটা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় ওঠান। কী দরকার পুরনো একটা জিনিস বার বার টোপ দেওয়া। এটাকে ছাড়েন। আপনারা নতুন সংবিধান তৈরি করেন, যে সংবিধান হবে বাংলাদেশের মানুষের জন্য যথোপযুক্ত। আপনারা ঘোষণা দেন ক্ষমতায় গেলে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবেন।”
সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘এগ্রিকালচারিস্টস’ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-অ্যাব’ এবং বিএনপির মিডিয়া সেলের যৌথ উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়। সভার শুরুতে রূপরেখার ওপর বিশ্লেষণমূলক বক্তব্য রাখেন বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন।
অ্যাবের আহ্বায়ক রাশিদুল হাসান হারুনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব জি কে এম মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, অ্যাবের অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডী, শামীমুর রহমান শামীম, অধ্যাপক ফজলুল হক ভুঁইয়া, অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, গোলাম কাদির দুলাল।